
কলকাতা, ৫ ডিসেম্বর (হি. স.) : নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র দেওয়ার পর অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা চেয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠাল কেন্দ্র।
রাজ্যে নাগরিকপঞ্জি চালু নিয়ে গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই বিজেপি-তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা দেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অসমের মতো এ রাজ্যেও এনআরসি চালু করা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। নবান্ন সূত্রে বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছে, অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হলেও তালিকা পাঠানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, তৃণমূল সরকার যে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমদের রাজ্যে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে, তা তুলে ধরে রাজনৈতিক লাভের জন্যই এমন মোক্ষম চাল দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পাল্টা হুংকার দিয়ে সাফ জানিয়েছেন, ‘জীবন দিয়েই এনআরসি রোখা হবে।’ বাম দলগুলিও এনআরসি রূপায়ণের প্রকাশ্য প্রতিরোধের হুংকার দিয়েছে। গত ১ অক্টোবর দুর্গাপুজোর আগে এনআরসি নিয়ে দলের ডাকা নাগরিক সভায় এসে অমিত শাহ পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান শরণার্থীদের দেশের নাগরিকত্ব দিয়ে এনআরসি চালু করা হবে। ফলে কোনও হিন্দুর রাষ্ট্রহীন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।’
বুধবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনার বিষয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই ওই বিল নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্ব বিল আনার আগেই অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের উপরে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে আসরে নেমেছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে ওই চিঠি পেয়ে কিছুটা হলেও বিস্মিত রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের আধিকারিকরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘রাজ্যে কত অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে কোন বছর কত অনুপ্রবেশকারী সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকেছেন তেমন কোনও পরিসংখ্যান সরকারের হাতে নেই। অনুপ্রবেশের বিষয়টি দেখার দায়িত্বে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)। নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী সপ্তাহেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হবে, রাজ্যে কারা অনুপ্রবেশকারী তার কোনও তালিকা নেই রাজ্যের কাছে। কারণ, বৈধ ভাবে বাংলাদেশ কিংবা অন্য দেশ থেকে কারা রাজ্যে এসে আর নিজেদের দেশে ফিরে যাননি অর্থাৎ অবৈধভাবে কিংবা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে রয়ে গিয়েছেন, সে সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো তথ্য থাকবে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে। কেননা বিদেশিদের ভিসা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশে ভারতীয় দূতাবাসের কনসুলার বা ভিসা শাখা।

