ব্রু শরণার্থীদের রাজ্যে পুনর্বাসন, ভেবে দেখার আশ্বাস কেন্দ্রের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ নভেম্বর৷৷ ত্রিপুরায় আশ্রিত ব্রু শরণার্থীদের ১৭১ পরিবারের ৮৪৪ জন মিজোরামে ফিরে গেছেন৷ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁদের জন্য আগামীকাল রবিবার থেকে ফের বন্ধ হয়ে যাবে রেশন সামগ্রী সরবরাহ৷ ফলে নতুন করে জটিলতা দেখা দেবে৷ তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নয়াদিল্লিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনার সময় ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরায় স্থায়ী পুনর্বাসনের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন৷ মিজোরামে ফিরে যাওয়ার শর্তে মঞ্জুর প্যাকেজ তাদেরকে ত্রিপুরায়ও প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন৷ কারণ, ত্রিপুরায় ব্রু শরণার্থীর একাংশকে ত্রিপুরায় স্থায়ী পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়েছে৷


দিল্লি থেকে টেলিফোনে সাংসদ রেবতিকুমার ত্রিপুরা জানিয়েছেন, ত্রিপুরার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং এনজিও-দের প্রতিনিধিদের সাথে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনায় ব্রু শরণার্থীদের বিষয়টিও চর্চা হয়েছে৷ ত্রিপুরার রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণ ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরায় পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ এ-বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আপত্তি নেই বলে আস্বস্ত করেছেন৷ ফলে, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করবে, তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়ে গেছে৷


প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ত্রিপুরা সরকার ৪০০-৫০০ ব্রু শরণার্থী পরিবারকে ত্রিপুরায় পুনর্বাসনের প্রস্তাব পাঠিয়েছে৷ মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে ব্রু শরণার্থীদের জন্য মঞ্জুর প্যাকেজ ত্রিপুরায় পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও বরাদ্দ করা হোক, সেই প্রস্তাবও দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ কিন্তু, জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই বলে জানিয়েছেন সাংসদ রেবতি ত্রিপুরা৷


তিনি বলেন, ব্রু শরণার্থীদের জোর করে মিজোরামে প্রত্যাবর্তন অনুচিত হবে বলে দাবি করেছেন প্রদ্যুৎ কিশোর৷ তিনি চাইছেন ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরায় পুনর্বাসন দেওয়া হোক৷ আইএনপিটি-র সাধারণ সম্পাদক জগদীশ দেববর্মাও একই সুরে ব্রু শরণার্থীদের জন্য সওয়াল করেছেন৷ তাই, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ রেবতি ত্রিপুরা বলেন, ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরায় পুনর্বাসনের বিষয়ে মিজোরাম সরকারের সাথে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করবেন৷ শুধু তা-ই নয়, ব্রু শরণার্থীদের কাছ থেকেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ত্রিপুরায় স্থায়ী বসবাসের বিষয়ে মতামত সংগ্রহ করবে৷ তিনি জানান, শরণার্থী সমস্যা নিয়ে মিজোরাম সরকার এবং ব্রু শরণার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন৷


তবে, জমি নিয়ে জটিলতার কীভাবে অবসান হবে সে-বিষয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা এখনও স্থির হয়নি৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এ-বিষয়ে কোনও দিশা দেখাননি৷ ফলে, এই জটিলতার অবসান কীভাবে সম্ভব হবে, এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, বলেন রেবতি ত্রিপুরা৷ অবশ্য, ব্রু শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের প্রবণতা দেখে স্পষ্ট, তাঁরা মিজোরামে ফিরে যেতে আগ্রহী নন৷ ৩ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থির হয়েছিল ব্রু শরণার্থী প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পানিসাগরের শিবির থেকে ৬১ পরিবারের ২৪৩ জন এবং কাঞ্চনপুর শিবির থেকে ১১০ পরিবারের ৬০১ জন ব্রু শরণার্থী মিজোরামে ফিরে গেছেন৷ সে-ক্ষেত্রে ব্রু শরণার্থীদের বড় অংশ এখনও ত্রিপুরায় আশ্রিত৷


এদিকে, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল থেকে ফের ব্রু শরণার্থীদের রেশন সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে৷ কারণ, আন্দোলনের জেরে ত্রিপুরা সরকার নিজের কোষাগার থেকে তাদের জন্য রেশন সামগ্রী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরবরাহে মঞ্জুর করেছিল৷ এ-বিষয়ে কাঞ্চনপুরের মহকুমাশাসক অভেদানন্দ বৈদ্য বলেন, আজ পর্যন্ত ব্রু শরণার্থীদের রেশন সরবরাহের নির্দেশ ছিল৷ স্বাভাবিকভাবেই কাল থেকে তাদের জন্য রেশন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে৷ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নতুন কোনও নির্দেশনা আসেনি৷ ফলে, আগামীকাল থেকে আবারও জটিলতা দেখা দিতে পারে, অনুমান করছেন তিনি৷