অগ্ণিদগ্দ হয়ে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেপ্তার স্বামী ও ছেলে

নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ২৬ নভেম্বর৷৷ সাত সকালে নিজ বাড়ির উঠানে রহস্যজনকভাবে অগ্ণিদগ্দ মাঝবয়সী গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার ভিতরে ২ অভিযুক্ত পুলিশের জালে৷ মাঝবয়সী গৃহবধূ উত্তমা নাথের ছোট ভাইয়ের অভিযোগ মূলে কদমতলা থানার পুলিশ মৃতার স্বামী বিমল কুমার নাথ ও পুত্র বিক্রম নাথকে গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে৷আজ তাদের আদালতে প্রেরণ করবে পুলিশ৷


ঘটনার বিবরণে প্রকাশ,গত রবিবার উত্তর জেলার কদমতলা থানাধীন কদমতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ নং ওয়ার্ডের বেলতলা এলাকার বাসিন্দা বিমল কুমার নাথের স্ত্রী উত্তমা নাথের অগ্ণিদগ্দ মৃতদেহ নিজ উঠানে পড়ে থাকতে দেখতে পায় উনার একমাত্র ছেলে বিক্রম নাথ৷ সাত সকালে মায়ের অগ্ণিদগ্দ মৃতদেহ বাড়ির উঠানে পড়ে থাকতে দেখে ছেলে বিক্রম চিৎকার চেচামেচি করলে মৃতার স্বামী অসুস্থ প্যারালাইজড বিমল কুমার নাথ ঘটনাস্থলে এসে স্ত্রীর মৃতদেহ দেখতে পান৷তড়িঘড়ি কদমতলা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিনের একটি ড্রাম এবং দুটি ড্রামের ছিপি উদ্ধার করে৷আর তাতে স্পষ্ট কেরোসিন দিয়ে আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছে উত্তমার৷কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো মৃতার আত্মীয়স্বজন সহ বেলতলা গ্রামের আশপাশে কোন জনগণ ঘটনাস্থলে আসেননি৷ তারপর পুলিশ মহিলার অগ্ণিদগ্দ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে৷


পাশাপাশি কদমতলা থানার পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হাতে নিয়ে তদন্ত শুরু করে দেয়৷ কদমতলা থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারি মৃতা উত্তমা নাথ মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন ছিলেন৷স্বামী বিমল কুমার নাথ মাস দুয়েক পূর্বে প্যারালাইজড হয়ে নিজ ঘরে বন্দি৷ এক ছেলে বিক্রম নাথ মা-বাবার খেয়াল রাখতো৷ তবে ঘটনার আগের দিন বিক্রম নিজ বাড়িতে না থেকে পাশের বাড়িতে রাত্রি যাপন করেছিল৷আর সকালবেলা নিজ বাড়িতে এসে মায়ের অগ্ণিদগ্দ মৃতদেহ উঠানে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পায়৷ তবে পুলিশের প্রথম থেকেই ধারণা ছিল এটি পরিকল্পিত হত্যা৷ মৃতার আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের জনগণ পুলিশের সামনে কোনভাবে মুখ খোলেননি৷


এমনকি ঘটনাস্থলে নাএসে বাড়ির বাইরে থেকে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন৷অবশেষে সোমবার দুপুরবেলা মৃতার ভাই ধর্মনগর থানাধীন দিগলবাগের বাসিন্দা উত্তম্মর্ন নাথ কদমতলা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন৷ আর তাতে উত্তমা নাথের স্বামী বিমল কুমার নাথ, ছেলে বিক্রম নাথ ও উত্তমার ভাসুরের নামে মামলাটি রুজু করেন৷ আর মৃতার ভাই এফআইআর-এ অভিযোগ করেন স্বামী পুত্র ও ভাসুর মিলে উনার বোনকে প্রথমে হত্যা করে তারপর কেরোসিন ঢেলে শরীররে আগুন লাগিয়ে দেন৷এমনকি পূর্বেও উত্তমার উপর স্বামীর পরিবার ধারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ছিলেন৷


যা বিভিন্ন বার থানা পর্যন্ত গড়িয়েছিল৷তবে বোন উত্তমা নাথ মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন বলেও উল্লেখ করেছেন মৃতার ছোট ভাই৷ মৃতার ভাইয়ের অভিযোগ মূলে কদমতলা থানার পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে মৃতার স্বামী বিমল কুমার নাথ পিতা মৃত রাজকুমার নাথ (৪৯) এবং ছেলে বিক্রম নাথ(১৮) পিতা বিমল কুমার নাথকে গ্রেপ্তার করে৷ উভয়ের ঘর কদমতলা থানাধীন কদমতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ নং ওয়ার্ডের বেলতলা এলাকায়৷বর্তমানে কদমতলা থানার পুলিশ ধৃত দুই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে৷


এদিকে কদমতলার ওসি কৃষ্ণধন সরকার জানান, উনারা গত রবিবার বেলতলা এলাকা থেকে উত্তমা নাথ নামের এক গৃহবধূর অগ্ণিদগ্দ মৃতদেহ উদ্ধার করে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হাতে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু সোমবার দুপুরবেলা মৃতার ছোট ভাই উত্তম্মর্ন নাথ তিন জনের নামে একটি হত্যার মামলা দায়ের করেন৷ সেই অভিযোগ মূলে কদমতলা থানার পুলিশ অভিযুক্ত মৃতার স্বামী বিমল কুমার নাথ ও পুত্র বিক্রম নাথকে গ্রেফতার করেছে৷ পাশাপাশি ধৃত দুই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ৷যদি তদন্তে অন্য কারো নাম উঠে আসে তাহলে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করবে পুলিশ,বলে জানান ওসি কৃষ্ণ ধন সরকার৷ উনি আরো জানান, ধৃত মৃতার স্বামী ও পুত্রকে আজ ধর্মনগর আদালতে প্রেরণ করবে পুলিশ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *