আর্থিক অনটনে নয়, মানসিক অবসাদে দুই সন্তানকে মেরে দম্পতি আত্মঘাতী : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ নভেম্বর৷৷ আর্থিক অনটনে নয়, অজ্ঞতার কারণে, উপজাতির জমি কিনে ফেঁসে যাওয়ায় মানসিক অবসাদ থেকে দুই সন্তানকে বিষ খাইয়ে মেরে তাঁতি দম্পতি আত্মঘাতী হয়েছেন৷ ওই ঘটনার তত্ত্ব তালাশ করে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার সহ সিপিএম এবং কংগ্রেস ওই মর্মান্তিক ঘটনায় অভাব-অনটনকেই দায়ী করেছে৷ বিরোধী ওই অভিযোগ এইভাবেই খারিজ করলেন আইনমন্ত্রী৷ সাথে তিনি মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার জন্য বিরোধীদের কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন৷


শনিবার ঋণের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে দুই সন্তান বিশাল তাঁতি ও রুপালি তাঁতিকে প্রাণে মেরে গলায় ফাঁস জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন প্রকাশ তাঁতি ও তাঁর স্ত্রী সন্ধানী তাঁতি৷ ওইদিন সাতসকালে পশ্চিম জেলার সিধাই থানাধীন সোনাইয়ের সন্ন্যাসীমুড়া গ্রামে একই পরিবারের চারজনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল৷


ওই ঘটনায় আজ ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার এবং ত্রিপুরা বিধানসভার প্রাক্তন উপাধক্ষ্য পবিত্র কর ওই এলাকায় যান এবং মৃতের পরিবারের সাথে কথা বলেন৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনায় ত্রিপুরা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ তাঁর দাবি, তাঁতি পরিবারের চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু ত্রিপুরার বাস্তব চিত্র তোলে ধরেছে৷ মানুষের হাহাকার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে৷ তিনি বলেন, মানুষের রোজগার কমে গেছে, অথচ ত্রিপুরা সরকার কার্নিভাল নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে৷ এদিকে, কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিকও সাংবাদিক সম্মেলন করে ওই ঘটনা নিয়ে ত্রিপুরা সরকারের নিন্দায় মুখর হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় কাজ ও খাদ্যের অভাব আজ আবারো প্রমাণিত হয়েছে৷ চারজন মানুষের মৃত্যুর জন্য তিনি ত্রিপুরা সরকারকে দায়ী করেছেন৷


বিরোধীদের সমালোচনায় বিদ্ধ ত্রিপুরা সরকার অবশেষে ওই মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছে৷ আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে আইন মন্ত্রী রতন লাল নাথ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, উপজাতি জমি কিনে ফেঁসে গিয়েছিলেন পরেশ তাঁতি৷ তাই, মানসিক অবসাদ থেকে নিজের দুই সন্তানকে প্রাণে মেরে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন৷ তাঁর কথায়, এক পরিবারের চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক৷ কিন্তু, মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা কারোরই উচিত নয়, বিরোধীদের নিশানা করে বলেন তিনি৷
এদিন তিনি সরকারি তথ্য তুলে ধরে বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রকাশ তাঁতি ২৫ দিন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭৬ দিন এবং ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এখন পর্যন্ত ৫০ শ্রম দিবস রেগার কাজ পেয়েছিলেন৷ তাছাড়া, ওই পরিবার বিপিএল-ভুক্ত ছিল৷ তাই, প্রতি মাসেই তাঁরা রেশনের সামগ্রী তুলতেন৷

আইনমন্ত্রীর দাবি, ওই পরিবারের চারজনের অনাহারে মৃত্যুর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ বরং, প্রকাশ তাঁতির শ্বাশুড়ি অঞ্জলি তাঁতি জানিয়েছেন, উপজাতির জমি কিনে এবং ওই জমির একটা অংশ এক ব্যক্তিকে গাঁজা চাষের জন্য দিয়ে ফেঁসে গিয়েছিলেন৷ কারণ, তাঁদের ক্রমাগত হুমকির জন্যই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন প্রকাশ৷ তাই, ওই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে তাঁদের৷


আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিন বছর আগে পূর্ব সিমনা নিবাসী প্রসন্ন দেববর্মার কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ১ কানি জমি কিনেছিলেন প্রকাশ তাঁতি৷ কিন্তু, উপজাতির জমি হওয়ায় ওই হস্তান্তর করা যাচ্ছিল না৷ এদিকে, তিন মাস আগে প্রকাশ তাঁতি ওই জমির তিন গন্ডা জায়গা স্থানীয় পদ্ম দেববর্মাকে ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে গাঁজা চাষের জন্য দিয়েছিলেন৷ ওই খবর পেয়েই ঝামেলা শুরু হয়৷ আইনমন্ত্রী বলেন, জমির মালিক গাঁজা গাছ কেটে ফেলেন এবং পরেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন৷ অন্যদিকে, পদ্ম দেববর্মাও পরেশকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছিলেন৷ তাতে, তিনি কিছুদিন যাবৎ প্রচন্ড মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন৷ আইনমন্ত্রী দাবি করেন, ওই মানসিক অবসাদ থেকেই নিজের দুই সন্তানকে প্রাণে মেরে স্বামী-স্ত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন৷ মৃতের শ্বাশুড়ি অঞ্জনা তাঁতি এই সমস্ত বিষয় আমাদের জানিয়েছেন, বলেন আইনমন্ত্রী৷


তিনি আজ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেন, অভাবের কথা বলে বিরোধীরা নাটক করছেন৷ তাঁদের কাজ শুধুই মৃত্যু খোঁজা৷ আমরা মৃত্যু কামনা কারিনা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *