কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে পিষে মারল পাচারকারীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, বক্সনগর/ আগরতলা, ২১ নভেম্বর৷৷ পাচারকারীরা গাড়ি চাপা দিয়ে ত্রিপুরা পুলিশের কর্তব্যরত এক সাব-ইনস্পেক্টরকে খুন করেছে৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পাচারবাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে প্রাণ হারিয়েছেন সিপাহিজলা জেলার কলমচৌড়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর দুর্গাকুমার রাঙ্খল (৫৫)৷ মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন৷


আজ তাঁর মরদেহ আগরতলায় এডিনগর পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ ও ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক-সহ অন্য পুলিশ আধিকারিক-কর্মীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷ সেখান থেকে প্রয়াতের মরদেহ খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া মহকুমায় রাঙ্খলপাড়ায় পৈতৃক ভিটেতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে৷ মৃতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ এদিকে, পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টরকে গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের অভিযোগে তিনটি গাড়ি আটক করেছে পুলিশ৷ তবে চালক পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে৷
কলমচৌড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাচার বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে বেরিয়েছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর দুর্গাকুমার রাঙ্খল৷ তাঁর সাথে থানার অন্য পুলিশ কর্মীরাও ছিলেন৷ পুলিশের কথায়, দক্ষিণ কলমচৌড়া এগিয়েচলোর পাশে বাজারের সামনে সোনামুড়া-বক্সনগর মূল সড়কে তাঁরা ওত পেতে বসেছিলেন৷ রাত প্রায় বারোটা নাগাদ সোনামুড়া থেকে তিনটি গাড়ি আগরতলার দিকে যাচ্ছিল৷ পুলিশ তাদের থামার জন্য নির্দেশ দিলে প্রথম দুটি গাড়ি দ্রুতগতিতে বেরিয়ে যায়৷ কিন্তু তৃতীয় গাড়িটি সাব-ইনস্পেক্টর দুর্গাকুমার রাঙ্খলকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়৷ ধাক্কায় তিনি ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন৷ পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর সাথে অন্য পুলিশ কর্মীরা কোনওরকমে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন৷


এদিকে, গাড়িচাপায় গুরুতর আহত সাব-ইনস্পেক্টর দুর্গা রাঙ্খলকে প্রথমে বক্সনগর সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান পুলিশ কর্মীরা৷ কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকরা তাকে হাঁপানিয়াস্থিত টিএমসি হাসপাতালে স্থানান্তর করেন৷ কিন্তু সেখান থেকেও তাঁকে আগরতলার জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা৷ আজ সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ জিবি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যুতে ত্রিপুরার পুলিশ মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷


রাঙ্খলের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি কলমচৌড়া থানায় বদলি হয়েছিলেন৷ খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া থানাধীন রাঙ্খলপাড়ায় তাঁর বাড়ি৷ এদিন, দুপুর দেড়টা নাগাদ আগরতলায় এডি নগর পুলিশ লাইনে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বাইরে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মাও আগরতলা থেকে দূরবর্তী স্থানে ছিলেন৷ তাই ত্রিপুরা সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ সাব-ইন্সপেক্টর দুর্গাকুমার রাঙ্খলকে পুস্পস্তবক দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷ এছাড়া ত্রিপুরা পুলিশের মহানির্দেশক অখিল কুমার শুক্লা-সহ পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক এবং অন্য কর্মীরা তাঁর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন৷


আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টরের মৃত্যুতে গভীর শোক ব্যক্ত করেছেন৷ কর্তব্যরত অবস্থায় সাব-ইনস্পেক্টর দুর্গাকুমার রাঙ্খলের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ আইনমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা সরকার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে৷ জানান, শোকগ্রস্ত পরিবারের পাশে সরকার থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি৷ আইনমন্ত্রী বলেন, মৃতের পরিবারকে আপাতত ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেবে রাজ্য সরকার৷ পরবর্তী সময়ে তাঁদের জন্য আরও কী করা যায় তা বিবেচনা করা হবে৷ তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব পুলিশের জন্য আলাদা কিছু ভাবতে বলেছেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় কর্তব্যরত অবস্থায় এখন পর্যন্ত ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ কিন্তু তাঁদের জন্য এতদিন কোনও কিছুই ভাবা হয়নি৷ তবে, শহিদ পুলিশ কর্মীদের বিশেষ প্রকল্প আনতে চলেছে ত্রিপুরা সরকার, আশ্বাস দেন আইনমন্ত্রী৷


এদিকে, পুলিশ ঘাতক গাড়িগুলি আটক করেছে৷ সোনামুড়া, যাত্রাপুর এবং ধনপুর এলাকা থেকে পুলিশ তিনটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে৷ সাব-ইনস্পেক্টরকে খুনের সময় ওই তিনটি গাড়ি ছিল বলে দাবি করেছে পুলিশ৷ তবে, একজনকেও আটক করতে পারেনি পুলিশ৷ পুলিশ সূত্রের খবর, তিনটি স্থানে তিনটি গাড়ি ফেলে রেখে চালকরা পালিয়েছে৷


প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর গরু পাচারকারীদের গাড়ি বিএসএফ-এর এক জওয়ানকে পিষে মেরেছিল৷ ওই সময় বিএসএফ জওয়ান দীপক মণ্ডল পাচারকারীদের হাতে খুন হয়েছিলেন৷ আবারও পাচারকারীদের গাড়ি চাপায় পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টরের খুন হওয়ার ঘটনা তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাকে বাড়িয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *