নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ নভেম্বর৷৷ ফড়েদের বিরুদ্ধেই কি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মাঝখানে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মুনাফা কামানোর চেষ্টা করেন, তা-হলে ব্যবস্থা নেবে সরকার৷ বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর সাফ কথা, উৎপাদিত ফসলের সর্বাধিক মূল্য কৃষকরা পেলে আপত্তির কিছু নেই৷ কিন্তু মাঝখানে কারোর মুনাফার জন্য বাজারে জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি হবে, তবে ত্রিপুরা সরকার বসে থাকবে না৷ তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/Chief-Minister-Biplab-Kumar-inaugrates-state-level-programme-of-co-operative-week-at-Agartala-Town-Hall-on-November-14-4-1024x720.jpg)
আজ আগরতলা টাউন হল-এ ৬৬-তম অখিল ভারত সমবায় সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে এ-ভাবেই ফড়েদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷
এদিন তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিকভাবে মানুষ নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলার পাশাপাশি রোজগারের পথ সুগম করার উদ্দেশ্যেই সমবায় সমিতিগুলি গঠিত হয়েছিল৷ রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে রাজ্য সরকারের গৃহীত উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় রেখে রাজ্যের সমবায় সমিতিগুলিকে সেই দিশাতেই পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে হবে৷ তবেই সমবায় সমিতিগুলির উন্নয়ন ও সাফল্য আসবে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রসঙ্গত, সমবায় সপ্তাহ উদযাপনের এবারের ভাবনা হচ্ছে ‘নতুন ভারতবর্ষে সমবায়ের ভূমিকা’৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় প্রায় ৮ লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্নভাবে সমবায় সমিতিগুলির সঙ্গে জড়িত৷ তিনি জানান, ত্রিপুরায় বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজ্যে সমবায় সমিতির সংখ্যা বেড়েছে৷ ২০১৮-১৯ সালে সমবায় সমিতি বেড়ে হয়েছে ১,৯৫৭টি৷ যা ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১,৭৯৩টি৷ ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী সমবায় সমিতি বেড়ে হয়েছে ২,৮৭৫টি৷ একই সঙ্গে এনজিও-র সংখ্যাও ২০১৮-১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ৮,০৯২টি৷ ২০১৭-১৮ সালে যা ছিল ৭,৮০৬টি৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বহির্রাজ্য থেকে ডিম আনতে ত্রিপুরা থেকে বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকা বেরিয়ে যায়৷ বর্তমানে ত্রিপুরায় বামুটিয়া এবং বিশালগড় এলাকায় ডিম উৎপাদনের ইউনিট রয়েছে যা থেকে বছরে প্রায় ৭৫ লক্ষ ডিম উৎপাদন হচ্ছে৷ তাই রাজ্যকে ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতিগুলিকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে৷ মানসিকতাও সেই দিশাতেই ধাবিত করা প্রয়োজন, বলেন তিনি৷
এদিন তিনি বলেন, রোজগারের পথ সুগম করতে সমবায় সমিতিগুলিকে সহজতর ক্ষেত্রগুলি চিহিণত করতে হবে৷ এই ক্ষেত্রগুলিতে সাফল্য পেতে উন্নত প্রজেক্ট তৈরি করে অগ্রসর হতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী ভারত সরকারের প্রস্তাবিত ‘প্যাক্স কম্পিউটারাইজেশন স্কিম’-এর বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে রাজ্যের ল্যাম্পস ও প্যাক্সগুলিকে সফটওয়ার, হার্ডওয়ার এবং ইন্টারনেট-সহ কম্পিউটার প্রদানের সংস্থান রয়েছে৷ এতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ০৪ লক্ষ টাকা৷ ৮০:২০ অনুপাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই অর্থ বহন করবে৷ রাজ্যের ল্যাম্পস ও প্যাক্সগুলিকেও এ-ক্ষেত্রে পেশাদারি মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে তিনি আহ্বান জানান৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৮ সালের মার্চের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৮৭টি প্রাথমিক দুগ্দ সমবায় সমিতি গঠিত হয়েছে৷ দুগ্দ ও দুগ্দজাতীয় দ্রব্যের আমদানিতে ত্রিপুরার প্রায় ১,১০০ কোটি টাকা বহির্রাজ্যে চলে যাচ্ছে৷ এই অর্থ রাজ্যেই যাতে থাকে তার জন্য দুগ্দ সমবায় সমিতিগুলিকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে৷ রাজ্যের গোমতি কো-অপারেটিভ মিল্ক প্রোডিউসার্স ইউনিয়নকে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে৷ প্রয়োজনে পেশাদারি ব্যক্তিদের সহযোগিতা নেওয়ার বিষয়েও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷
তিনি বলেন, ত্রিপুরায় কমলার উৎপাদন বেড়েছে৷ তার বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাপনায় সমবায় সমিতিগুলিকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে৷ রাজ্যে ধুপকাঠির শলা তৈরি করার শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে তার বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও রাজ্যের সমবায় সমিতিগুলির ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, সমবায় মানে কাউকে বাদ দিয়ে নয়৷ গ্রামের গরিব, কৃষক-সহ সকল অংশের মানুষকে রোজগারের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সমবায় সমিতিগুলির বিরাট ভূমিকা রয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ত্রিপুরা সরকার পর্যটন, সমবায় ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরার সার্বিক বিকাশে কৃষি, প্রাণী সম্পদ, মৎস্য ও পরিষেবা উন্নয়নেও সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, দেশের সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থানকারী ব্যক্তির কাছে সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির সুফল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার কাজ করছে৷ অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি উন্নত সমাজ ব্যবস্থা তৈরির উদ্দেশ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্প চালু করেছেন৷
তিনি বলেন, সমবায়ের উদ্দেশ্য গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন৷ গ্রামীণ মানুষের আর্থ-সামাজিক মান উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ৷ কৃষকদের কাছে কৃষি সহায়ক সামগ্রী সরবরাহ করার ক্ষেত্রেও সমবায় সমিতিগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি৷
আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের একটি মোবাইল এটিএম ভ্যান পতাকা নেড়ে উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অনুষ্ঠানে সমবায় সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি লিফলেট এবং সমবায় সমাচারের প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
সমবায় দফতরের একটি তথ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়৷ এছাড়া কেসিসি কার্ড, মাইক্রো এটিএম এবং ঋণ অনুমোদনপত্র সমবায় সমিতির প্রতিনিধি এবং প্যাক্সগুলির হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এছাড়া সমবায় সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত বক্ততা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী পাঁচজনের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী-সহ অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিগণ৷