নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ১৩ নভেম্বর৷৷ উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা থানাধীন মধ্য বজেন্দ্রনগর এলাকায় সোমবার উদ্ধারকৃত প্রাণকান্ত দাস (২৫)-এর মৃত্যুর রহস্য ভেদ করেছে পুলিশ৷ প্রাণকান্তকে খুন করা হয়েছে বলে নিহতের বোনের এজাহারের ভিত্তিতে তিন খুনিকে গ্রেফতার করেছে কদমতলা থানার পুলিশ৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/IMG_20191113_120245-1024x576.jpg)
প্রথমাবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মৃতদেহের পরিচয় নিয়ে ধন্দে পড়েছিল পুলিশ৷ পরবর্তীতে তাঁকে শনাক্ত করেন তাঁর বোনেরা৷ এদিকে মৃতদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন অভিযুক্ত নিবোদ তাঁতি (৪৬), বিজন তাঁতি (৩৮) এবং গোবিন্দ তাঁতি (৩৩)-কে আজ বুধবার সকালে ব্রজেন্দ্রনগরে তাদের নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছেন ধর্মনগরের এসডিপিও রাজীব সূত্রধর এবং কদমতলা থানার ওসি কৃষ্ণধন সরকার৷ ধৃত তিন অভিযুক্তকে আজ ধর্মনগরের বিচারবিভাগীয় আদালতে তুলে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ৷
প্রসঙ্গত, গত সোমবার সকালে ত্রিপুরার উত্তর জেলার কদমতলা থানাধীন বজেন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য বজেন্দ্রনগর এলাকার গভীর জঙ্গলে গরু চরাতে গিয়ে এক ব্যক্তি একটি পাহাড়ি ছড়ায় সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় মৃতদেহটি দেখেন৷ খবর পেয়ে দলবল নিয়ে অকুস্থলে উপস্থিত হন ধর্মনগর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাজীব সূত্রধর ও কদমতলা থানার ওসি কৃষ্ণধন সরকার৷ তাঁরা পচাগলা বিবস্ত্র অজ্ঞাতপরিচয়ের মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান৷
খবর পেয়ে পরেরদিন মঙ্গলবার সকালে কদমতলা থানায় ছুটে আসেন মৃত যুবকের বড় বোন অর্চনা দাস ও তার আত্মীয় পরিজনরা৷ তার পর তাঁরা কদমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মৃতদেহটি দেখে শনাক্ত করেন৷ মৃত যুবক প্রাণকান্ত দাসের বোন অর্চনা দাস জানান, তাঁরা দুই ভাই ও দুই বোন৷ বছর দুয়েক আগে মা মারা যান৷ বাবা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত৷ বর্তমানে তাঁরা নিজের গ্রাম ছেড়ে পশ্চিম পানিসাগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ছোট বোনের বাড়িতে বাবা ও ছোট ভাই প্রাণকান্তকে নিয়ে বসবাস করতেন৷ মাঝে-মধ্যে বজেন্দ্রনগরের তাঁতিপাড়ার বাড়িতে এসে প্রাণকান্ত দেখাশোনা করে যেতেন৷
বোন অর্চনা আরও জানান, বড় ভাই সৌদি আরবে কর্মরত৷ বেশ কয়েক বছর আগে দুই বোনের বিয়ে হয়েছে৷ ছোট ভাই প্রাণকান্ত দাসও সৌদি আরবে থাকত৷ কিন্তু বছর দুয়েক আগে সে সৌদি আরব থেকে বাড়িতে এসে আর যায়নি৷ প্রাণকান্ত অসুস্থ বাবা ও বজেন্দ্রনগরের বাড়ি দেখাশোনা করত৷ মাঝেমধ্যে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে নিজের পরিবার প্রতিপালন করত সে৷
গত ৮ নভেম্বর শুক্রবার প্রাণকান্ত পশ্চিম পানিসাগরের বোনের বাড়ি থেকে বজেন্দ্রনগরে নিজেদের বাড়িতে আসে, দেখাশুনার জন্য৷ কিন্তু আর ফিরে যায়নি৷ বোন ও আত্মীয় পরিজনদের ধারণা ছিল, হয়ত-বা সে বজেন্দ্রনগরের বাড়িতে রয়ে গিয়েছে৷ বজেন্দ্রনগর এলাকাটি ভারত-বাংলা সীমান্তে হওয়ায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় ফোনেও যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছিল না৷
অর্চনা বলেন, গতকাল অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে তারা প্রাণকান্তের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু নেটওয়ার্কের গোলযোগে সা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি৷ প্রাণকান্তের বোন কাঁদতে কাঁদতে আরও জানান, তাদের বজেন্দ্রনগরের বাড়ির পাশে জনৈক শচীন্দ্র তাঁতির ছেলে নিবোধ তাঁতির জমি সংক্রান্ত বিবাদ চলছিল বহুদিন ধরে৷ তাই তিনি ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য পাশের বাড়ির নিবোধ তাঁতিদের প্রতি সন্দেহ ব্যক্ত করছেন৷ এই সন্দেহের বশে প্রাণকান্তের বোন অর্চনা দাস কদমতলা থানায় নিবোধ তাঁতির বিরুদ্ধে গতকাল এক এজাহার দায়ের করেছিলেন৷
অর্চনা দাসের অভিযোগের ভিত্তিতে কদমতলা থানায় ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ৬১/১৯ নম্বরে মামলা রুজু করা হয়৷ ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আজত্বে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷
এদিকে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত তিন অভিযুক্ত নাকি প্রাণকান্ত দাসকে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে৷ এই হত্যাকাণ্ডে অপর দুই ব্যক্তি প্রয়াত বাদল তাঁতির ছেলে মদন তাঁতি এবং রতন দে-র ছেলে রবি দে-ও জড়িত বলে ধৃতরা নাকি জানিয়েছে৷
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে খুনের কাণ্ডটি ঘটেছে বলে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও এ ঘটনার নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে৷ জানা গেছে, ধৃত নিবোদ তাঁতির মেয়ের সঙ্গে বহুদিন ধরে প্রাণকান্তের গোপন প্রেমের সম্পর্ক ছিল৷ বিষয়টি তাঁতি পরিবারের সদস্যরা মেনে উঠতে পারেননি৷ এই সূত্র ধরে নিবোদ, বিজন, গোবিন্দ-সহ আরও দুই ব্যক্তি মিলে পরিকল্পনা করে প্রাণকান্তকে নেশাগ্রস্ত করে শুক্রবার মধ্যরাতে মুগুর দিয়ে পিটিয়ে তার গোপনাঙ্গ থেঁতলে দিয়ে নৃশংসভাবে খুন করেছিল৷