নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ নভেম্বর৷৷ সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিক হত্যাকান্ডে সিবিআই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে৷ আজ ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের তিন নম্বর ব্যাটেলিয়ানের এসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট সর্বানন্দ বিশ্বাসকে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে৷ তিনি ওই হত্যাকান্ডের সময় দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ানে কর্মরত ছিলেন৷ আপাতত তাকে পশ্চিম আগরতলা থানায় রাখা হয়েছে৷ সূত্রের খবর, আজ রাতেই ওই হত্যাকান্ডের সাথে যুক্ত আরও কয়েকজনকে জালে তুলতে পারে সিবিআই৷ কারণ, তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করেছে৷ জানা গিয়েছে, সিবিআইয়ের দশ জনের একটি টিম রাজ্যে এসেছে৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/DSC_9496-1024x681.jpg)
২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর আগরতলা শহরতলীর বোধজংনগর থানার অধীন আর কে নগর স্থিত টিএসআর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ানের ক্যাম্পে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিক৷ তাঁকে পর পর দুটি গুলি করে টিএসআর জওয়ান হত্যা করেছিলেন৷ কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মার নির্দেশেই তাঁকে খুন করা হয়েছিল বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে৷ ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে কমান্ডেন্ট তপন দেববর্মা, নায়েক সুবেদার অমিত দেববর্মা, রাইফেলম্যান নন্দ কুমার রিয়াং ও ধর্মেন্দ্র সিংকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷
সাংবাদিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বিজেপি ত্রিপুরা বনধ পালন করেছে৷ এছাড়াও ওই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ত্রিপুরা সহ সারা দেশেই তোলপাড় হয়েছে৷ আগরতলায় ত্রিপুরা পুলিশের দেওয়া ফ্লোরোজিন জ্যাকেট পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন রাজ্যের সাংবাদিকরা৷ বিজেপি ত্রিপুরা প্রদেশ কমিটি ওই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বাসভবন ঘেরাও করেছিল৷ শুধু তাই নয়, অসমের সাংবাদিকরা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কুশপুত্তলিকা দাহ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ ওই সময়, সাংবাদিক হত্যাকান্ডে সিবিআই দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল বিজেপি৷ শুধু তাই নয়, ত্রিপুরায় ক্ষমতার পরিবর্তন হলে সাংবাদিক হত্যাকান্ডে সিবিআই তদন্তের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল বিজেপি৷
সেই মোতাবেক ত্রিপুরায় ২০১৮ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর বিজেপি- আইপিএফটি জোট সরকার সাংবাদিক শান্তনু ভৌমিক ও সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিকের হত্যাকান্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের ওপর তুলে দেয়৷ সিবিআই ওই মামলা গ্রহণ করেছিল৷
আজ সিবিআইয়ের তিনজন আধিকারিক টিএসআর এসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট সর্বানন্দ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেন৷ তিনি হত্যাকান্ডের সময় টিএসআর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ানে কর্মরত ছিলেন৷ বর্তমানে তিনি টিএসআর তৃতীয় ব্যাটেলিয়ানে কর্মরত রয়েছেন৷ সূত্রের খবর, সর্বানন্দ বিশ্বাসকে পশ্চিম আগরতলা থানায় লকআপে রেখেছে সিবিআই৷ তবে, আগামীকাল তাকে আদালতে তোলা হবে নাকি সিবিআই নিজের হেফাজতে তাকে বর্হিরাজ্যে নিয়ে যাবে তা এখনও স্পষ্ট হয়নি৷ কিন্তু, ওই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আরও কয়েকজন সিবিআই জালে উঠতে চলেছে বলে সূত্রের দাবি৷
এদিকে, এই হত্যা মামলার তদন্তের জন্য পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার এসআইটি (সিট) গঠন করেছিল৷ সিট এর প্রধান করা হয়েছিল আইজি (আইন শৃঙ্খলা) অরিন্দম নাথ৷ তাঁর নেতৃত্বে সিট মামলার তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে৷ আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ ওই সময় রাজ্যে চলছিল বিধানসভা নির্বাচনের দামামা৷ তখন বিজেপি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিক হত্যা মামলার সিবিআই তদন্ত দেওয়া হবে৷ নির্বাচনে বিজেপি আইপিএফটি জোট সরকার ক্ষমতায় আসে৷ তারপর শুরু হয় সাংবাদিক সুদীপ দত্ত ভৌমিক হত্যা মামলার তদন্তের ভার সিবিআই’র হাতে দেয় নতুন বিজেপি আইপিএফটি জোট সরকার৷ সেই মোতাবেক সরকার গড়ার প্রায় কুড়ি মাস পর সিবিআই এই মামলার তদন্তে রাজ্যে আসে৷