নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ নভেম্বর৷৷ ভারতবর্ষে হিন্দ, মুসলিম, জৈন, খীষ্টান, বৌদ্ধ, মণিপুরী প্রভ’তি সম্পদায়ের মানুষ বাস করেন৷ আমাদের রাজ্যেও ১৯টি জনগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন৷ তাদের ভাষা, খাদ্য, পোশাক, ধর্ম ভিন্ন হলেও আমরা এক ও অভিন্ন৷ এটাই ভারতবর্ষের পরম্পরা ও ঐতিহ্য৷ মণিপুরীদের ক’ষ্টি ও সংস্ক’তি খুবই সমৃদ্ধ৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ সন্ধ্যায় রাধানগরস্থিত রাধামাধব জিউ মন্দিরে রাজ্যের সর্বপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী রাধামাধব মহারাস উৎসবের উদ্বোধন করে একথা বলেন৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/IMG-20191111-WA0108-1024x682.jpg)
উল্লেখ্য, আজ থেকে ২২১ বছর পূর্বে ১৭৯৮ সালে ত্রিপুরায় সর্বপ্রথম শ্রীশ্রী রাধামাধব মহারাস উৎসব পালন করা হয়েছিলো৷ প্রদীপ জেলে এই মহারাস উৎসবের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, মণিপুরী সমাজ এক সুুসংহত সমাজ৷ তাদের আচার, আচরণ, ধর্মাচরণ, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, সংস্ক’তি অনুকরণীয়৷ মহিলারাও রাতভর রাসলীলায় মেতে উঠেন৷ আমাদের রাজ্যের মহারাণী তুলসীবতীও ছিলেন মণিপুরের রাজকন্যা৷ তাঁর সময়ে ত্রিপুরার শিক্ষা ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা, সংস্ক’তি অনেকদূর পৌঁছেছিলো৷ তিনি রাজতন্ত্রকে সাধারণ মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছিলেন৷ মণিপুরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন্দ্র সিং-এর সাথে দেখা হলেই তিনি রাজ্যের সম্পর্কে খোঁজখবর নেন৷ সত্যই সুুন্দর৷ রাধামাধব সত্যের জয় চেয়েছিলেন৷ সত্যের জন্য কি কি বলিদান দিতে হয় সেটা মহাভারতের শ্রীক’ষ্ণ বিশ্বকে দেখিয়েছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্মই মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যায়৷ আজ রাজ্যবাসীর মননে, চিন্তনে পরিবর্তন এসেছে৷ পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, নিষ্ঠা ও একত্মতার মেলবন্ধন হয়েছে৷ কিন্তু আগের সরকার সে পথে হাঁটেনি৷ বিভেদ, অনৈক্য ছিলো নিত্যসঙ্গী৷ আজ মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা বেড়েছে৷ একে অন্যের ধর্ম ও সংস্ক’তিকে সম্মান করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতবর্ষে প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ বাস করেন৷ গত ৯ নভেম্বর রাম জন্মভূমি ও বাবরি মসজিদের সুুপ্রিমকোর্টের রায়ে ভারতের সংস্ক’তি ও পরম্পরার জয় হয়েছে৷ ১৩০ কোটি ভারতবাসী এই বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান জানিয়েছেন৷ এটাই ভারতবর্ষের চিরন্তন ঐক্য, ক’ষ্টি ও সংস্ক’তি৷
রাধামাধব মন্দির উন্নয়নের জন্য ৫ দফা দাবি সনদ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন মন্দির উন্নয়ন কমিটির সদস্য সুুমন ভ-াচার্য৷ স্বাগত ভাষণ দেন মন্দির উন্নয়ন কমিটির সহ-সম্পাদক প্রবীণ সিংহ৷ উল্লেখ্য, ১৭৯৮ সালে মণিপুরের মহারাজা রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্রের কন্যা হরিশেশ্বরী দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয়েছিলো ত্রিপুরার মহারাজা দ্বিতীয় রাজধর মাণিক্যের৷ রাজকন্যা তখন মণিপুর থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন রাধামাধবের বিগ্রহ৷
ত্রিপুরার রাজা মন্দির গড়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাজধানী পুরাতন আগরতলার মেঘলীপাড়ায়৷ সেখানেই প্রথম পালিত হয়েছিলো রাস উৎসব৷ আর এভাবেই ত্রিপুরায় রাস তথা মণিপুরী সংস্ক’তির সূচনা ঘটেছিলো৷ পরবর্তী সময়ে রাজধানী আগরতলায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর রাধামাধব মন্দিরটিও স্থানান্তরিত হয় এবং রাধানগরে শ্রীশ্রী রাধামাধবের বিগ্রহটি স্থাপন করা হয়৷ এই মহারাস উৎসব উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে বর্ণময় সাংস্ক’তিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়৷ এতে মণিপুর থেকে আগত বিশিষ্ট শিল্পী লাউনাওজম হরিদাস সিং ও তার দল মণিপুরীদের নট সংকীর্তণ পরিবেশন করেন৷ এছাড়াও ইম্ফল, রাণীরবাজার, বৃদ্ধনগর প্রভ’তি স্থান থেকে আগত শিল্পী ও গোপীগণ নৃত্য ও সংগীতে আসর মাতিয়ে তোলেন৷ এ উৎসব উপলক্ষে এখানে এক বড় মেলাও বসে৷ রাধামাধব মন্দির মণিপুরী যুব সমাজ কমিটি এই মহারাস উৎসবের আয়োজন করে৷ উৎসবে দর্শনার্থীদের উপস্থিতির হার ছিলো লক্ষ্যণীয়৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক ও বিশিষ্টজনদের সংবর্ধনা ’াপন করা হয়৷ উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছে৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এলাকার বিশিষ্ট নাগরিক বরোদা ভট্টাচার্য৷