নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ নভেম্বর৷৷ বিরোধীদের সমালোচনার প্রতিবাদস্বরূপ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জানান, তিনি কোনওদিন ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শিখেননি, আর ভবিষ্যতেও শেখার কোন ইচ্ছা নেই৷ বিরোধী পার্টিতে যারা রয়েছেন তারা বলছেন যে সরকার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছে৷ এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার পার্টি কোনদিন ষড়যন্ত্রে বিশ্বাসই করেনি৷ যদি কেউ দুর্নীতি করে, এবং মুখ্যমন্ত্রী সে দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দেন, এক্ষেত্রে যদি বিরোধী দলনেতা বলেন যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে আমি সেই ষড়যন্ত্র লাখোবার করব৷ শুক্রবার চম্পকনগরে স্বাস্থ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এভাবেই বিপ্লব কুমার দেব বিরোধী দলের নেতাদের সমালোচনার পাল্টা জবাব দিয়েছেন৷
দকদকস্বাস্থ্য পরিষেবাকে রাজ্যের অন্তিম ব্যক্তির কাছে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ আগামী ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে উন্নত পরিকাঠামো সহ স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার৷ আজ জিরানীয়ার চম্পকনগরে দু’দিনব্যাপী পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাভিত্তিক স্বাস্থ্যমেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ চম্পকনগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আয়োজিত জেলাভিত্তিক স্বাস্থ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা৷ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এই স্বাস্থ্যমেলার আয়োজন করা হয়েছে৷
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাভিত্তিক স্বাস্থ্যমেলার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আরও বলেন, বর্তমান সরকার রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও গুণগত শিক্ষার সম্পসারণে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ঢেলে সাজানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের যে যোজনাগুলি রয়েছে তার বেশিরভাগ জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ এই যোজনাগুলির সুুফল যাতে রাজ্যের মানুষ নিতে পারেন তার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ তিনি বলেন, আয়ুমান ভারত যোজনায় সারা রাজ্যে ই-কার্ড প্রদান করা হচ্ছে৷ অনেকেই এই যোজনার সুুফল পেয়ে উপক’ত হচ্ছেন৷ আয়ুমান ভারত যোজনায় একজন সুুবিধাভোগী চিকিৎসার জন্য সর্বাধিক ৫ লক্ষ টাকা পেতে পারেন৷ এই যোজনার মাধ্যমে ২০ লক্ষ ৫৭ হাজার মানুষের নাম নথিভুক্ত হয়েছে, যা জনসংখ্যার প্রায় ৭১ শতাংশ৷
আয়ুমান ভারত যোজনায় যারা অন্তর্ভক্ত হওয়ার সুুযোগ পাননি তাদের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার সুুযোগ পৌঁছে দিতে ত্রিপুরা সরকার আয়ুমান ত্রিপুরা নামে নতুন এক প্রকল্প নিয়েছে৷ এই প্রকল্পে আরও ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার সুুবিধাভোগীকে ই-কার্ড দেওয়া হবে৷ আয়ুমান ভারত ও আয়ুমান ত্রিপুরা এই দুই যোজনা মিলে চিকিৎসার জন্য রাজ্যের ২৪ লক্ষ ১৩ হাজার মানুষ উপক’ত হবেন৷ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিরাট সংখ্যক জনগণের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুুযোগ পৌঁছে দিতে পারার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান৷
তিনি বলেন, ১৩০ কোটি মানুষের দেশে আয়ুমান ভারতের মতো প্রকল্প চালু করে প্রতি ব্যক্তিকে বছরে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান কল্পনাতীত ছিলো৷ আর ত্রিপুরার মতো রাজ্যে ’আয়ুমান ভারত ও আয়ুমান ত্রিপুরা’ মিলিয়ে মোট ৭৫ ভাগেরও বেশি মানুষকে স্বাস্থ্য সুুবিধার আওতায় নিয়ে আসায় রাজ্যের স্বাস্থ্যচিত্র আরও উন্নত হবে৷ তিনি আরও বলেন, রাজ্যে মহিলার উপর নির্যাতনের হার প্রায় ৮ শতাংশের বেশি কমেছে৷
২০১৬-১৭ সালে এই হার যেখানে ছিলো ৫০ শতাংশ, ২০১৭-১৮ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশ, ২০১৮-১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশে, অর্থাৎ ত্রিপুরার সমাজ ব্যবস্থায় মহিলাদের উপর নির্যাতনের হার ক্রমাগত হাস পাচ্ছে৷ এতে সহজেই বলা যেতে পারে ত্রিপুরাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে৷ বর্তমান সরকার মহিলাদের উপর কোনও অত্যাচার বরদাস্ত করবে না৷ রাজ্যের ইণ্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ চিত্রেও উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ সি ডি অনুপাতে ইণ্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ ৩৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে৷ যার অর্থ হলো ত্রিপুরাতে শিল্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ কাজের সুুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ এতে প্রমাণিত হয় ত্রিপুরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চলেছে৷
ন্যাশনাল ক্যারিয়ার সার্ভিসেস রেজিস্ট্রেশন অনুসারে বর্তমানে রাজ্যে ১ লক্ষ ৬৯ হাজারের মতো বেকার রয়েছে৷ ২০১৮ সালে যা ছিলো প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ৷ বেকারত্বের হার হাস পেয়েছে৷ তেমনি হাস পেয়েছে অপরাধের মাত্রা৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক’ষি সম্মাননিধি পরিকল্পনায় প্রথমবার রাজ্যে ২ লক্ষ ২০ হাজার ক’ষক পরিবারকে বছরে ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সুুবিধা দেওয়া হয়েছে৷ মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইসের মাধ্যমে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ক’ষকদের কাছ থেকে ৪৮ কোটি টাকার বেশি ধান ক্রয় করা হয়েছে৷ অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা গ্রামীণ গরীব ক’ষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে৷ যা ত্রিপুরার জন্য এক নতুন ইতিহাস৷ বর্তমানে রাজ্যে মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০১৬-১৭ যেখানে গড় মাথাপিছু আয় ছিলো ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৫৮ টাকা৷ ২০১৮-১৯ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৬৫৭ টাকায় অর্থাৎ গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা৷ ২০১৯-২০ সালে তা হয়ে দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৬৩২ টাকা৷ অর্থাৎ বছরে গড় আয় দেড় লক্ষ টাকা অতিক্রম করবে৷ যার অর্থ হলো মানুষের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তন এসেছে ত্রিপুরায়৷ অটল জলধারা মিশন প্রকল্পে রাজ্যে ১ হাজার কোটি টাকার উপরে ব্যয় করে রাজ্য সরকার প্রতিটি নাগরিককে জল পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে৷ এই ধরনের স্বাস্থ্যমেলা আয়োজনের জন্য তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনকে অভিনন্দন জানান৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা বলেন, রাজ্য সরকারের এই ধরনের মেলার আয়োজন প্রশংসনীয় এক উদ্যোগ৷ রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নত হচ্ছে৷ তাছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক ধীরেন্দ্র দেববর্মা ও বিধায়ক সুুশান্ত চৌধুরী৷ জেলাভিত্তিক এই মেলায় ২০টি স্টল খোলা হয়েছে৷ তাছাড়া রয়েছে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শান্তিকালী আশ্রমের মহারাজ চিত্ত দেববর্মা৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. রজত দেববর্মা৷ ধন্যবাদ ’াপন করেন পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডা. সন্দীপ এন মাহাত্মে৷