শরণার্থীদের অবরোধ আন্দোলন দমাতে বলপ্রয়োগের পথেই হাটছে রাজ্য সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ নভেম্বর৷৷ রিয়াং শরণার্থীরা অবরোধ আন্দোলন প্রত্যাহার করছে না৷ অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার নতুন প্যাকেজের ঘোষণা সত্ত্বেও তাঁরা মিজোরামে ফিরে যাচ্ছেন না৷ তাই, অবরোধ আন্দোলন দমাতে বলপ্রয়োগের পথেই হাঁটতে হচ্ছে ত্রিপুরা সরকারকে৷ কারণ, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অবরোধের জেরে দশদা-আনন্দবাজার এলাকায় জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটছে৷ শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় পরিবেশ থমথমে হয়ে রয়েছে৷ তাই, আজ মধ্যরাত থেকে আশাবাড়ি এবং নাইশিংপাড়া এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করছে কাঞ্চনপুর মহকুমা প্রশাসন৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাঞ্চনপুর মহকুমা শাসক অভেদানন্দ বৈদ্য৷


প্রসঙ্গত, রিয়াং শরণার্থী প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে আবারো জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে৷ গত ৩ অক্টোবর থেকে প্রক্রিয়া শুরু হলেও হাতেগুনা কয়েকটি পরিবার মিজোরামে ফিরে গেছেন৷ এদিকে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১ অক্টোবর থেকে শরণার্থী শিবিরে বিনামূল্যে রেশন এবং নগদ আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ফলে, অনাহারে শরণার্থীদের মৃত্যু হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এখন পর্যন্ত শরণার্থী শিবিরে শিশু সহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ তবে, তাঁদের শুধুই যে খাদ্যের অভাবে মৃত্যু হয়েছে সরকারিভাবে এমন কোন ঘোষণা দেওয়া হয়নি৷ শিশুরা অজানা জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন এবং সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে না যাওয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে৷ তাছাড়া, দুই জন বয়স্ক মহিলার বার্ধক্যজনিত কারণেও মৃত্যু হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷


গত ৩১ অক্টোবর থেকে সকাল ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দশদা থেকে আনন্দবাজার রাস্তা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করেছেন শরণার্থীরা৷ এমবিডিপিএফ সংগঠনের নেতাদের নেতৃত্বে শতাধিক রিয়াং শরণার্থী প্রতিদিন অবরোধ করছেন৷ শুধু তাই নয়, তারা খাদ্য গুদাম লুঠের হুমকি দিয়েছিলেন৷ তাই, আনন্দবাজার খাদ্য গুদামের ২০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে কাঞ্চনপুর মহকুমা প্রশাসন৷


এদিকে, গতকাল কাঞ্চনপুর ডাক বাংলোতে ত্রিপুরা সরকারের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব কুমার অলোক উত্তর ত্রিপুরা জেলা ও মহকুমা প্রশাসনকে সাথে দিয়ে উদ্ভুত ওই পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন৷ বৈঠকে মিজোরামে ফিরে গেলে রিয়াং শরণার্থীদের অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্যাকেজের ঘোষণা দেন তিনি৷ তবে, তিনদিনের মধ্যে শরণার্থীদের মিজোরামে ফিরে যাওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু, তাতে শরণার্থীরা এখন পর্যন্ত সাড়া দেননি বলে জানিয়েছেন কাঞ্চনপুর মহকুমা শাসক অভেদানন্দ বৈদ্য৷
তিনি আজ জানিয়েছেন, শরণার্থীদের অবরোধ আজকেও চলেছে এবং তারা কেন্দ্রের নতুন প্যাকেজ ঘোষণাতেও এখনও সাড়া দেননি৷ কারণ, কোন শরণার্থী পরিবার আজ মিজোরামে ফিরে যাননি৷

তবে, আগামীকাল থেকে তাদের রাস্তা অবরোধ করতে দেওয়া হবে না৷ তিনি বলেন, আজ মধ্যরাত থেকে দশদা-আনন্দবাজার রাস্তা আশাপাড়া ও নাইশিংপাড়া এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হবে৷ তার জন্য ইতিমধ্যে মাইকিং করে বিষয়টি সকলকে অবগত করা হয়েছে৷ তবুও, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত টিএসআর এবং সিআরপিএফ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, বলেন তিনি৷ তাঁর দাবি, নিরাপত্তা বাহিনী এসে পৌছে গিয়েছে এবং আগামীকাল সকাল থেকে কাউকে অবরোধ করতে দেওয়া হবে না৷ তিনি সতর্ক করে বলেন, জোর করে কেউ রাস্তা অবরোধ করতে চাইলে প্রশাসনকেও বাধ্য হয়ে বল প্রয়োগ করতে হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *