তিনদিনের মধ্যে মিজোরামে ফিরে গেলে অতিরিক্ত সাহায্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ নভেম্বর৷৷ মিজোরামে ফিরে যেতেই হবে৷ তবে, তাৎক্ষণিক খরচের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ রিয়াং শরণার্থীদের অবরোধ আন্দোলনের জেরে থমকে গেছে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া৷ তাই আজ (সোমবার) ব্রু নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক বৈঠকে নতুন ওই প্যাকেজের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷ সাথে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, মিজোরামে গেলে তবেই সমস্ত সুযোগ সুবিধা মিলবে৷ অবশ্য তিনদিনের মধ্যে মিজোরামে ফিরে গেলে তবেই নতুন প্যাকেজটির সুবিধা পাবেন শরণার্থীরা৷ আজ ত্রিপুরা সরকারের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব কুমার অলোক উত্তর ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন ও কাঞ্চনপুর মহকুমা প্রশাসন এবং উত্তর ত্রিপুরা জেলা পুলিশ সুপারকে সাথে নিয়ে ব্রু নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন৷ ওই বৈঠকেই ব্রু নেতাদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে৷


এদিন কাঞ্চনপুর ডাকবাংলোয় অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে কুমার অলোক বলেন, ব্রু নেতারা নতুন দাবি তুলেছেন৷ কিন্তু ওই দাবি কোনওভাবেই এখন মেনে নেওয়া সম্ভব নয়৷ তাঁর কথায়, কেন্দ্রীয় সরকার, ত্রিপুরা সরকার, মিজোরাম সরকার এবং ব্রু নেতাদের সাথে আলোচনার পর সহমতের ভিত্তিতেই রিয়াং শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে চুক্তি হয়েছে৷ কিন্তু এখন নতুন নতুন সমস্যার প্রসঙ্গ তুলে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, কয়েকজন নেতা রিয়াং শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে ঝামেলা শুরু করেছেন৷ তাদের কায়েমি স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যেই ওই অবরোধ আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ তাঁর কটাক্ষ, ব্রু নেতাদের সন্তানরা ত্রিপুরার বাইরে নামি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন৷ তারা প্রত্যেকে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন৷ কিন্তু, শরণার্থীদের উন্নতি হোক সে-দিকে কোনও নজর দিচ্ছে না, বলেন তিনি৷


ত্রিপুরার অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের কথায়, চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত সুযোগ-সুবিধা তাদের অবশ্যই প্রদান করা হবে৷ তাঁর দাবি, প্রত্যেক রিয়াং পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট, ১.৫ লক্ষ টাকা ঘর বানানোর জন্য এবং প্রতি মাসে রেশনসামগ্রীর জন্য ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হবে৷ মিজোরাম সরকার প্রত্যেক রিয়াং পরিবারকে বিনামূল্যে জমি দেবে৷ এছাড়া, তাদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হবে, বলেন তিনি৷ এদিন তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক খরচের জন্য প্রত্যেক রিয়াং পরিবারকে নগদ ২৬ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করার জন্য নতুন প্যাকেজটির বিষয়ে আজ ব্রু নেতারা জানতে পেরেছেন৷ তাদের সাফ বলা হয়েছে, রিয়াং শরণার্থীরা মিজোরামে ফিরে গেলে তবেই ওই নগদ টাকার সুযোগ পাবেন, বলেন তিনি৷


কুমার অলোকের দাবি, শরণার্থী জীবনে কারোর কোনও ভবিষ্যত নেই৷ শরণার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাদের মিজোরামে ফিরে যাওয়া উচিত৷ এদিন তিনি বলেন, ব্রু নেতারা স্থানীয় সমস্যার প্রসঙ্গ তুলেছেন৷ মিজোরামে গিয়েই ওই সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ এক্ষেত্রে স্থানীয় ভিত্তিক কমিটি এবং জেলা ভিত্তিক কমিটি মিলে সমস্যার সমাধান করবে, জানান তিনি৷


এদিন কাঞ্চনপুর মহকুমাশাসক অভেদানন্দ বৈদ্য জানিয়েছেন, রেশন সামগ্রী বন্ধ থাকার কারণে এখন কেন্দ্রীয় সরকার রিয়াং শরণার্থীদের ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ওই টাকা তাদের ব্যাঙ্ক ্যকাউন্টে জমা হবে৷ কিন্তু ৫ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে যারা মিজোরামে ফিরে যাবেন ওই শরণার্থীদের অতিরিক্ত অর্থের সহায়তা দেওয়া হবে৷


এদিন বৈঠক শেষে ব্রু নেতা ব্রুনো মিশা বলেন, ত্রিপুরা সরকার অবরোধ তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে৷ এ-বিষয়ে সমস্ত সংগঠনের নেতাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *