নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ নভেম্বর৷৷ সরকারের কর্মসূচি রূপায়ণে সরকারি আধিকারিক ও কর্মচারীদের সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করতে হবে৷ রাজ্যের বর্তমান সরকার ত্রিপুরাকে আগামী ৩ বছরের মধ্যে একটি মডেল রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস নিয়েছে৷ সরকারে এই প্রয়াসকে বাস্তবায়িত করতে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে সরকারি অফিসার ও কর্মচারীদের৷ আজ আগরতলা টাউন হলে গেজেটেড অফিসার্স সংঘ-এর দ্বিতীয় বার্ষিক সংঘ-এর বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, রাজ্য সরকার কেবল সরকারি কর্মচারী নয়, কৃষক, শ্রমিক, বেকার ও মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বহুমুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ তাছাড়াও রাজ্যকে নেশামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ারও প্রয়াস নিয়েছে সরকার৷ রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর সপ্তম পে কমিশনের আদলে কর্মচারীদের পে-স্কেল দেওয়া হয়েছে৷
![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/11/DSC_3514-1024x683.jpg)
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে রোজগার সৃষ্টির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছে৷ সরকারের লক্ষ্য রাজ্যের সার্বিক বিকাশ৷ এই দিশাতেই সরকার কাজ করছে৷ তিনি বলেন, আমাদের ভিশন ডকুমেন্ট মানুষের মনে আশা, আকাঙ্খা ও বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে৷ বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময় রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের সঠিক কোনও দিশা ছিলো না৷ তিনি বলেন, আগের সরকারের আমলে কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য রোজ মিছিল মিটিং করতে হতো৷ নতুন সরকারের আমলে এখন আর মিছিল, মিটিং ও ধর্না দিতে হয় না৷ নতুন সরকার আসার পর বিনা আন্দোলনে হোমগার্ডদের বেতন ৬,০০০ টাকা থেকে ১৮,০০০ টাকা করা হয়েছে৷ কর্মচারীদের গ্র্যাচুয়িটি ৪ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা হয়েছে৷ ৫০ বছর পর কোনও সরকারি কর্মচারী যদি মারা যান তার পরিবার ৬০ বছর পর্যন্ত বেতন পাবেন৷ বিদ্যুৎ নিগমের লাইনম্যান বা অন্যান্যরা দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার পরিবার ২ লক্ষ টাকার পরিবর্তে এখন ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন৷ বিভিন্ন দপ্তরে শূন্যপদ ডাই-ইন-হারনেসে চাকরির জন্য ১৫ শতাংশ পদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ কর্মচারীদের পূজা অনুদান ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে৷ এখন মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরে রোজ ১৮টি বিমান উঠানামা করে৷ ত্রিপুরা এখন ৮০ শতাংশ ড্রাগমুক্ত রাজ্য৷ গড়ে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ কমেছে ৬ শতাংশ৷ আগে অপরাধীদের শাস্তির হার ছিলো ২৯ শতাংশ৷ এখন শাস্তির হার ৩৯ শতাংশ৷ বেকারত্বের হার কমেছে ৩ শতাংশ৷ আগে রাজস্ব সংগ্রহ হতো ৯.৮ শতাংশ৷ এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৬ শতাংশ৷ ব্যাঙ্কের সিডি রেশিও ছিলো ৩৯ শতাংশ৷ এখন হয়েছে ৫৬ শতাংশ৷ সাব্রুমে স্পেশাল ইকোনমিক জোন করার জন্য ১,২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে৷ এতে ১০-১২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে৷ সাব্রুমের ফেণী নদীর উপর ব্রীজ চালু হয়ে গেছে ত্রিপুরা হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে প্রাণী পালনের উপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থানের একটা বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷ এখন ডিম ও দুধের জন্য প্রায় ১১০০ কোটি টাকার উপর রাজ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ এই টাকা যাতে বাইরে না যায় তার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি, মৎস্য, পর্যটন, প্রাণী পালন ও গুণগত শিক্ষার প্রসারে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা রূপায়ণে সরকারি আধিকারিক ও কর্মচারীদের উদার ও স্বচ্ছ প্রসারে মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে৷
অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ অব ন্যাশনাল কনফেডারেশন-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাধু সিং এবং ভারতীয় মজদুর সংঘ ত্রিপুরা প্রদেশের সভাপতি শংকর দেব৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন গেজেটেড মৃণাল কান্তি পন্ডিতকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়৷ অনুষ্ঠানে গেজেটেড অফিসার্স সংঘ-এর সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস রায় মুখ্যমন্ত্রীর হাতে বিভিন্ন দাবি সনদ তুলে দেন৷ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন গেজেটেড অফিসার্স সংঘ-এর সভাপতি তপন দাস৷ অনুষ্ঠানে বিধায়ক ডা. দিলীপ কুমার দাসও উপস্থিত ছিলেন৷