মুম্বই, ২১ অক্টোবর (হি.স.) : লোকসভা ভোটের প্রায় ছ’মাসের মধ্যে ফের বড় চ্যালেঞ্জ বিজেপির সামনে। লোকসভায় বিরাট সাফল্যের পর বিজেপির জন্য এই লড়াই ছিল নিজেদের মজবুত মাটিকে আরও শক্ত করার। অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া কংগ্রেসের কাছে এই লড়াই ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। এই লড়াইয়ে কার জয় হবে, কে হারবে সেসব জানা যাবে আগামী ২৪ অক্টোবর। সোমবারে মহারাষ্ট্রের ২৮৮ টি আসনে বড় কোনও অশান্তি ছাড়াই ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এদিন মহারাষ্ট্রে ২৮৮ টি আসনে ভোট পড়েছে ৬৩ শতাংশ। আগামী ২৪ অক্টোবর হবে গণনা। মহারাষ্ট্রে ২৮৮টি আসনের জন্য লড়াই করছে ৩২৩৭ প্রার্থী। রাজ্যে ভোটদাতার সংখ্যা ৮,৯৭,২২,০১৯। রাজ্যজুড়ে ৯৬,৬৬১ ভোটগ্রহণ গড়ে তোলা হয়েছে।

সোমবার সকাল ৭ টা থেকে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয়। শুরু থেকে ধিমেতালে চললেও পরে গতি বেড়ে যায়। দুপুর একটা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩০.৮৯ শতাংশ। ওয়ার্লি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তগর্ত ৬২ নম্বর বুথে বিকল হয়ে পড়ে ইভিএম। পরে সেই যন্ত্র পাল্টে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে এদিন মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে সকাল সকাল ভোটদান পর্ব সেড়ে ফেলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে বলিউডের তারকারাও। মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন একাধিক বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রী। সোমবার সকাল ৭টার সময় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোট দিয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন বলিউডের বর্ষীয়ায় অভিনেত্রী তথা বিজেপি সাংসদ হেমা মালিনী। আট এবং নয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ গোবিন্দা নিজের স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেন। মুম্বইয়ের আন্ধেরি পশ্চিমের একটি বুথে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন তিনি। স্ত্রী জেনেলিয়া ডি’ সুজাকে সঙ্গে নিয়ে লাতুরের একটি বুথে ভোট দেন রীতেশ দেশমুখ। লাতুর শহর এবং লাতুর গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন রীতেশ দুই ভাই অমিত দেশমুখ এবং ধীরাজ দেশমুখ। আন্ধেরি পশ্চিমে ভোট দেন ঋত্বিক রোশন এবং অনিল কাপুর। গীতিকার জাভেদ আখতারকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দেন শাবামা আজমি। বান্দ্রা পশ্চিমে ভোট দেন দীপিকা পাড়ুকোন। সস্ত্রীক ভোট দেন সচীন তেন্ডুলকর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুত্র অর্জুন, স্ত্রী অঞ্জলি। ভোট দেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও।
এদিন সকালই ভোট দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি, পীযূষ গোয়াল এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির অজিত পাওয়ার। ভোট দিয়ে বেরিয়ে পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করি বলেন, মহারাষ্ট্রে রেকর্ড ভাঙা জয় নিয়ে আসবে বিজেপি শিবনেসা জোট। ফের একবার শাসন ক্ষমতা আসবে দেবেন্দ্র ফড়নবিশের হাতে।
মুম্বইয়ে ভোট দিয়েছেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল। এদিন তিনি বলেন, মহারাষ্ট্রের মানুষ আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশকেই বেছে নেবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বিজেপি শিবসেনা জোট ২২৫টি আসনে জয় লাভ করবে। মানুষ মোদীজি আর ফড়নবিশজির সঙ্গেই। কংগ্রেস গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।’ এদিন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানিয়েছেন, কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকায় বিরোধীরা কার্যত হেরে বসে রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের সঙ্গে রয়েছে মানুষ। বিজেপি-শিবসেনা জোট ২২৫টি আসন রাজ্যে পেতে চলেছে।
গণতন্ত্রের উৎসবে বিপুল সংখ্যায় ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরসঙ্ঘচালক ডাঃ মোহন ভাগবত। সোমবার হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়ে বিপুল পরিমাণ ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন এক ট্যুইটবার্তায় তিনি লিখেছেন, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন চলছে। দেশের একাধিক জায়গায় উপনির্বাচনও চলছে। রেকর্ড সংখ্যক ভোট দিয়ে গণতন্ত্রের এই উৎসবকে সমৃদ্ধি করার আহ্বান করেন তিনি। সমাজের যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে বলেন।
মহারাষ্ট্রে ২৮৮ আসনের বিধানসভায় বিজেপি এবার লড়াই করছে ১৫০ আসনে। অন্যদিকে, বিজেপি শরিক শিবসেনা লড়াই করছে ১২৪ আসনে। বাকী আসনে লড়াই করছে বিজেপির অন্যান্য শরিকরা। অন্যদিকে, এনসিপিকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে কংগ্রেস। দেবেন্দ্র ফড়নোবিশ, আদিত্য ঠাকরেরা একধিক রোড শো করে দাপিয়ে বেড়িয়েছে মরাঠা মুলুকে।
দুই রাজ্যেই ক্ষমতায় বিজেপি। অনেকটাই দুর্বল কংগ্রেস। দলীয় কোন্দল, শরিকি সমস্যা নিয়ে দুই রাজ্যেই জেরবার কংগ্রেস। মহারাষ্ট্রে মতো রাজ্যে শিবসেনার সঙ্গে নির্বাচনী জোট হওয়ায় স্বস্তিতে বিজেপি।
এদিকে এদিন ভোটপর্ব শেষ হতে সামনে চলে আসে ২৮৮ টি আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্র বিধানসভা বুথ ফেরত সমীক্ষা।
২৮৮ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এখনও পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৩ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটের পরও দেশে অব্যহত গেরুয়া হাওয়া। অন্তত এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেল মহারাষ্ট্রেও। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এই রাজ্যে ফের ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে বিজেপি-শিবসেনা জোট। অনেকটা দূরে দ্বিতীয় স্থানে কংগ্রেস।
অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষাই ইঙ্গিত দিচ্ছে মারাঠাভূমে ফের গেরুয়া ঝড় আসতে চলেছে। কার্যত ছত্রভঙ্গ বিরোধী কংগ্রেস-এনসিপি জোট। লোকসভার ফলাফলের পর অবশ্য এই ফলাফল অনেটাক প্রত্যাশিতই ছিল। অধিকাংশ এক্সিট পোল বলছে মোট ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিজেপি-শিব সেনা জোট সহজেই ২০০-র গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ বলছে, মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিব সেনা পেতে পারে ২০৪ আসন। কংগ্রেস এনসিপির দখলে যেতে পারে ৬৯টি আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে ১৫টি আসন।
অন্যান্যরা বলছে, মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিব সেনা পেতে পারে ২৩০টি আসন। কংগ্রেস এনসিপি মাত্র ৪৮টি। অন্যান্যরা পাবে ১০টি আসন। কেউ বলছে, শিব সেনা-বিজেপি জোট পেতে পারে ১৬৬-১৯৪ আসন। অন্যদিকে এনসিপি-কংগ্রেস পেতে পারে ৭২-৯০ আসন। আবার মহারাষ্ট্রে বিজেপি একাই পেতে পারে ১৪১ আসন। শিব সেনা-বিজেপি জোটের দখলে যেতে পারে ২৪৩ আসন। অন্যদিকে কংগ্রেস এনসিপি আটকে যাবে মাত্র ৪১ আসনে। সবকটি এক্সিট পোলের ফলাফলেই কার্যত পরিষ্কার রাজ্যে ফের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি-শিবসেনা জোট। তবে এই ফলাফল পরিষ্কার হবে আগামী ২৪ অক্টোবর।

