গুয়াহাটি, ১৯ অক্টোবর (হি.স.) : যবনিকা ঘটেছে চার আসনে উপনির্বচনের সরব প্রচার। প্রচারাভিযানের শেষ দিন প্রতিদ্বন্দ্বী মূল দুই দল বিজেপি ও কংগ্রেসের নেতারা জোরের সঙ্গে দাবি করেছেন, সবকটি আসনে তাঁদের নিজের নিজের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে।
শনিবার বিজেপির প্রদেশ সভাপতি রঞ্জিতকুমার দাস দাবি করেছেন, রাজ্যের চার আসন ১ নম্বর রাতাবাড়িতে বিজয় মালাকার, ১০৬ নম্বর সোনারিতে নবনীতা সন্দিকৈ, ৭৪ নম্বর রাঙাপাড়ায় রাজেন বরঠাকুর এবং ৪৪ নম্বর জনিয়ায় তফিকুর রহমান হেসে-খেলে বিজয়ী হবেন। গত কয়েকদিন চার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারাভিযানে গিয়ে এই বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে তাঁর।
তিনি বলেন, সব আসনে কর্মঠ, উদ্যমী এবং মজবুত প্ৰাৰ্থী দিয়েছেন তাঁরা। চার কেন্রেমী বিজেপির সব নির্বাচনী সমাবেশে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূৰ্ত উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, নেডা-র আহ্বায়ক তথা মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা-সহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, এমন-কি তিনি নিজে প্রতিটি কেন্দ্রে বহু সমাবেশ করেছেন। মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে অভিভূত তিনি, বলেন রঞ্জিত দাস। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখি কাজকর্মে জনসাধারণ খুশি, তাই তাঁরা বিজেপি প্রার্থীদেরই ভোট দেবেন বলে স্থির করেছেন ভোটাররা, দাবি বিজেপির প্রদেশ সভাপতির।
এদিকে কংগ্রেসের রাতাবাড়িতে কেশবপ্ৰসাদ রজক, সোনারিতে সুশীল সুরি, জনিয়ায় সামসুল হক এবং রাঙাপাড়ায় কাৰ্তিক কুৰ্মি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন বলে দাবি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা। তিনি বলেন, বিজেপির প্রতি মানুষের মোহ ভঙ্গ হয়েছে। একের পর এক জনবিরোধী কাজ করছে বিজেপি সরকার। কেন্দ্রের পাঁচ এবং রাজ্য তিন বছরের বিজেপি আমলে মানুষ দিশাহারা হয়ে গেছেন। কোনও প্রতিশ্রুতিই বর্তমান সরকার পালন করেনি, তা ভোটারদের কাছে শুনেছেন তাঁরা, বলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশের দুই রাজ্যের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিন রাজ্যের নয়টি আসন যথাক্রমে অসমে চার, মেঘালয়ে এক, অরুণাচল প্রদেশে এক এবং সিকিমে তিন আসনে আগমী ২১ অক্টোবর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অসমের যে চার আসনে উপ-নির্বাচন হবে সেগুলি ১ নম্বর রাতাবাড়ি, ১০৬ নম্বর সোনারি, ৪৪ নম্বর জনিয়া এবং ৭৪ নম্বর রাঙাপাড়া। চার আসনের বিধায়করা গত লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে বিধানসভায় চার আসনই শূন্য হয়ে পড়েছিল। রাতাবাড়ি আসন শূন্য হয়ে যায় বিজেপি বিধায়ক কৃপানাথ মালাহ দলীয় টিকিটে করিমগঞ্জের সাংসদ পদে বিজয়ী হলে। একইভাবে সোনারির বিজেপি বিধায়ক তথা মন্ত্রী তপন গগৈও দলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিৰ্বাচিত হয়েছিলেন যোরহাটের সাংসদ হিসেবে। বিধায়ক তথা মন্ত্রী পল্লবলোচন দাস তেজপুরের সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর রাঙাপাড়া বিধানসভা আসন শূন্য হয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে জনিয়া বিধানসভা আসন শূন্য হয়ে যায় কংগ্রেসি বিধায়ক আব্দুল খালেক বরপেটা কেন্দ্রের সাংসদ নির্বাচিত হলে। প্রসঙ্গত, রাতাবাড়ির বিধায়ক তথা বর্তমানের সাংসদ অসম বিধানসভার উপাধ্যক্ষ ছিলেন।
এদিকে, মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস-এর ২৬ নম্বর শেল্লা উপজাতি তফশিলি কেন্দ্রের ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (ইউডিপি)-র টিকিটে নির্বাচিত বিধায়ক তথা রাজ্যের প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী, বর্তমান রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ ড. ডনকুপার রয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়েছিল। গত ২৮ জুলাই হরিয়ানার গুরুগ্ৰামে মেডান্টা মেডিসিটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন রাজ্য রাজনীতির এই ব্যক্তিত্ব।
এছাড়া অরুণাচল প্ৰদেশের ৫৬ নম্বর খোনসা পশ্চিম (তফশিলি উপজাতি সংরক্ষিত)-এর বিধায়কের অকাল মৃত্যুতে ওই আসন শূন্য হয়। গত ১১ মে সন্দেহভাজন খাপলাং গোষ্ঠীর এনএসসিএন জঙ্গিদের গুলি-হামলায় ওই আসনের বিধায়ক ন্যাশনাল পিপপলস পার্টি (এনপিপি)-র তিরন আবোহ-সহ ১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল।
অন্যদিকে সিকিমের পোকলোক কামরাং, মারটাম রুমটেক (বিএল) এবং গ্যাংটক (বিএল) আসনেও ওই দিন অনুষ্ঠিত হবে উপনিৰ্বাচন। সিকিমের তিন বিধানসভা আসনের তিন প্ৰাৰ্থী দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দুটি আসনে বিজয়ী হওয়াষ় একটি করে তাঁরা ছেড়ে দিসে সংশ্লিষ্ট তিন আসনই শূন্য হয়ে যায়।