নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ অক্টোবর৷৷ উচ্চ আদালতেও নিরাশ হয়ে ফিরলেন ১০,৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষক৷ তাঁরা ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত অ্যাডহক শিক্ষক হিসেবেই নিযুক্ত থাকবেন৷ এর পর তাঁদের চাকরি থাকছে না৷ বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের রায়ে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে, তা নিশ্চিত হয়ে গেছে৷

পাঁচ বছর ধরে ওই শিক্ষকদের নিয়ে টানাপোড়েন চলছে৷ ২০১৪ সালে ত্রিপুরা হাইকোর্টের মুখ্য বিচারপতি দীপক গুপ্তা শিক্ষক নিয়োগে প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছিলেন৷ কারণ, চাকরিতে বঞ্চনা করা হয়েছে, এই অভিযোগ এনে শিক্ষক নিয়োগে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে জনৈক তন্ময় নাথ ও অন্যান্যরা মামলা করেছিলেন৷ ওই মামলায় উচ্চ আদালত অস্নাতক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষক নিয়োগে ১০,৩২৩ শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছিল৷ নিয়োগ নীতিতে গলদ রয়েছে, এই কথা বলে আদালত নতুন নিয়োগ নীতি প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছিল৷
এর পর ত্রিপুরা সরকার ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে৷ তবে, ত্রিপুরা সরকারের আবেদনে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তাদের অ্যাডহক ভিত্তিতে চাকরিতে বহাল রাখার সুযোগ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ সাথে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আর কোনও আবেদন করা যাবে না৷
এরই মধ্যে চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন৷ কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট তাঁদের আবেদন শুনতে রাজি হয়নি৷ মূলত, ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়ের অনুচ্ছেদ ১২৬ নিয়ে যাঁরা মামলায় পক্ষভুক্ত হয়েছেন কেবলমাত্র তাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে, বাকিদের চাকরি সুরক্ষিত রয়েছে, এ-বিষয়ে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের একাংশ মামলা করেন৷ কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ায় তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন৷ কিন্তু দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের মুখ্য বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি অরিন্দম লোধের ডিভিশন বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের রায় বহাল রাখেন এবং তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেন৷ শুধু তা-ই নয়, ত্রিপুরা সরকার সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পালনে বাধ্য সে-কথাও বেঞ্চ মনে করিয়ে দিয়েছে৷
উচ্চ আদালত রায়ে বলেছে, সুপ্রিমকোর্ট এ সংক্রান্ত মামলায় এই সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলেছে৷ সেক্ষেত্রে নতুন করে কোন রায় দেওয়ার এক্তিয়ার নেই উচ্চ আদালতের৷ আদালত আরও বলেছে, সুপ্রিমকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে এখন কেবলমাত্র রাজ্য সরকার এ বিষয়ে ভাবতে পারবে৷ সাথে আদালত আরও বলেছে, রাজ্য সরকারের উচিত সুপ্রিমকোর্টের রায় কার্যকর করা৷ কারণ, সংবিধান মেনে রাজ্য সরকার সুপ্রিমকোর্টের রায় মানতে বাধ্য৷ পাশাপাশি, আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে এই রায়ের রিভিউ করার ব্যাপারে এখন আর কোনও এক্তিয়ার নেই মামলাকারীদের৷ তাতে স্পষ্ট, ১০৩২৩ চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের অ্যাডহক ভিত্তিতে শিক্ষকতার মেয়াদ সমাপ্ত হতেই তাদের কালো মেঘের ছায়া দেখা দেবে৷
এ-বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে৷ তাই, তাঁদের জন্য আইন মেনে কিছু করা যায় কিনা সেই চেষ্টা চলছে৷ তবে, ওই কাজ খুব কঠিন৷ ফলে, তাঁদের জন্য কিছু করা কতটা সম্ভব হবে তা বলা মুশকিল৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরা সরকার তাঁদের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে৷

