শিলচর (অসম), ২৮ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : বরাক উপত্যকার মানুষের সবধরনের রাজনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। কোনও কারণে এই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজনকে অহেতুক দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এখানকার ভাষা, কৃষ্টি, সাহিত্য-সংস্কৃতি রক্ষা করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। এই দায়িত্ব সর্বাবস্থায় পালন করবে তাঁর সরকার, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। শনিবার শিলচর পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে পোষণ অভিযানের অন্তর্গত রাষ্ট্রীয় পোষণ মাসের কেন্দ্রীয় সমাপন অনুষ্ঠান এবং বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের প্রবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বরাক উপত্যকাকে পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকার অবহেলা করেছে। কিন্তু বর্তমান বিজেপি সরকার এই উপত্যকার সার্বিক উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত তিন বছরে বরাক উপত্যকার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের শাসনকালে এই উপত্যকাকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হত। কিন্তু বিজেপি সরকার উপত্যকার সর্বাঙ্গীন উন্নতির জন্য সব ধরনের প্রয়াস চালাচ্ছে। বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে আলাদা দৃষ্টিতে দেখছে না সরকার। যার পরিণাম এই উপত্যকায় অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অদূর ভবিষ্যতে বরাক উপত্যকার মানুষ যাতে অধিক সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন এর জন্য শিলচরে গড়ে উঠছে মিনি সচিবালয়। জোর কদমে কাজ শুরু হয়ে অচিরেই উপত্যকার তিন জেলার মানুষ লাভবান হবেন।

মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল আরও বলেন, এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়, পিছনে তাকানোর নয়। অচিরেই এই অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হতে চলেছে। বলেন, বর্তমানে অসম থেকে উৎপাদিত সামগ্রী হংকং, লন্ডন, আবুদাবি, দুবাইতে রফতানি করা হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রভুত্ব বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি সুন্দর সুযোগ প্রদান করেছেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক রাজ্য অপর রাজ্যের সঙ্গে মিলে কাজ করবে। এক রাজ্যের মানুষ অন্য রাজ্যের মানুষের সঙ্গে মিলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়াসের মাধ্যমে রাজ্যের এবং নিজেদের অগ্রগতি করার সুযোগ পাবেন, দাবি করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অ্যাক্টিভ পলিসির মাধ্যমে মানবসম্পদ, উৎপাদন ক্ষেত্রে অগ্রগতির সঙ্গে রফতানি গুরুত্ব পাবে বলে আশাবাদী তিনি। তিনি জানান, গত বছর পোষণ অভিযানে রাজ্যের ৩৬ লক্ষ লোক অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং এ-বছর এক কোটি দশ লক্ষ লোক অংশ নিয়েছেন।
রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রমিলারানি ব্রহ্ম বলেন, মা এবং শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে অসম সরকার সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যাতে সঠিকভাবে কাজে লাগে এর জন্য তিনি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত কর্মী-সহায়িকাদের সচেষ্ট ভূমিকা পালনের আবেদন রেখেছেন। আজকেরর অনুষ্ঠানে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য পেশ করেন রাজ্যের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়, শিলচরের বিধায়ক দিলীপ পাল। বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প প্রবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন কাছাড়ের জেলাশাসক লায়া মাদ্দুরি।
আজকের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল নিজের হাতে গর্ভবতী মহিলাদের সাতভক্ষণের আহার খাইয়েছেন। এছাড়া কয়েকটি শিশুকে অন্নপ্রাশনের অন্ন মুখে তুলে দেন তিনি। এদিন বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী শিশুদের পুরস্কার তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

