আয়ুষ্মান ত্রিপুরা, আগামী মার্চের মধ্যে ই-কার্ড প্রদানের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ সেপ্ঢেম্বর৷৷ আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে গরিব জনগণের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ৷ এ-কথা দৃঢ়তার সাথে বলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী৷ তাই ওই যোজনার অন্তর্ভুক্ত রাজ্যের সমস্ত সুবিধাভোগীদের আগামী ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ই-কার্ড প্রদান করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি রাজ্য সরকারের আয়ুষ্মান ত্রিপুরা প্রকল্পে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার সুবিধাভোগীদেরও ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে ই-কার্ড প্রদান করতে স্বাস্থ্য দফতরকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷


প্রসঙ্গত, আজ প্রজ্ঞাভবনে আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আয়ুষ্মান ভারত দিবসের রাজ্য ভিত্তিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ উদ্বোধকের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্ঢেম্বর প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সবচাইতে বড় স্বাস্থ্য যোজনা আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সূচনা করেছিলেন৷ এই যোজনাটি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে গরিব জনগণের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ৷ তাঁর দাবি, দেশের গরিব অংশের জনগণ যাতে সুস্থ থাকেন সেই উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছিল৷ শুধু আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনাই নয়, প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত গরিবদের জন্য যে সকল প্রকল্পের সূচনা করেছেন সেগুলোয় ইতিমধ্যেই সাফল্য এসেছে৷


মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে শুধুমাত্র রোগীরাই উপকৃত হবেন এমন নয়, রাজ্যের হাসপাতালগুলি এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হবে৷ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যগুলিতে হাসপাতাল স্থাপনের জন্য অর্থ প্রদান করে থাকে৷ কিন্তু হাসপাতালের সঠিক পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয় রাজ্য সরকারকে৷ আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে রাজ্যের হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন৷ তিনি বলেন, মানুষ তার ভালো কাজের মাধ্যমেই সমাজে স্মরণীয় হয়ে থাকেন৷ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে মানসিকভাবে শান্তিও লাভ করা যায়৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজিও নিঃস্বার্থভাবে গরিবদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, দৃঢ়তার সাথে বলেন তিনি৷


এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ত্রিপুরা সরকার রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে৷ এরই অঙ্গ হিসেবে সম্প্রতি ত্রিপুরায় অটলবিহারী বাজপেয়ী রিজিওনাল ক্যানসার হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছে৷ এরজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১২০ কোটি টাকা প্রদান করেছে৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ক্যানসার হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ যাতে রাজ্যের ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা যেতে পারে৷ রাজ্যে আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনাকে আরও সফল করার লক্ষ্যে ডাক্তার, বিভিন্ন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ সকলকেই নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী দেব৷


অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির ভাষণে স্বাস্থ্য দফতরের সচিব ড় দেবাশিস বসু বলেন, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার দুটি স্তম্ভ রয়েছে৷ একটি হল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার স্থাপন এবং অপরটি প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার মাধ্যমে গরিব পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য পরিবারপিছু বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস সহায়তা প্রদান৷ তিনি বলেন, রাজ্যে বর্তমানে ১,০২০টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে৷ এরমধ্যে ৩০০টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারে রূপান্তরিত করা হয়েছে৷ আগামী ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারে রূপান্তর করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এই হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারগুলিতে রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে৷


অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে ত্রিপুরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সমিতির কার্যনির্বাহী সচিব অদিতি মজুমদার বলেন, আয়ুষ্মান ভারত দিবস উদযাপনের পাশাপাশি সারা দেশের সঙ্গে রাজ্যেও ১৪ সেপ্ঢেম্বর থেকে ২০ সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ুষ্মান ভারত পক্ষকাল পালন করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে প্রায় ২০ লক্ষ ৫৭ হাজার সুবিধাভোগী প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন৷ এর মধ্যে ৫ লক্ষের অধিক সুবিধাভোগীকে ই-কার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার কর্মসূচিতে রাজ্যের ৬২টি সরকারি হাসপাতাল এবং ২-টি বেসরকারি হাসপাতালকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পে রাজ্যের তালিকাভুক্ত সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে সুবিধাভোগীরা ১,৫৫১ ধরনের চিকিৎসা এবং অস্ত্রপচারজনিত প্যাকেজের সুবিধা পাচ্ছেন৷ এদিনের অনুষ্ঠানে আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন এমন কয়েকজন সুবিধাভোগীর সাথে মত বিনিময় করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷