
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ৪ সেপ্ঢেম্বর৷৷ উত্তর ত্রিপুরা জেলার কুমারঘাট মহকুমার অধীন নদিয়াপুর রেল স্টেশন ক্রমশ দেশের রেল মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে৷ হাবভাব দেখে স্থানীয় জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছেন৷
কয়েক দশক আগে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অধীনে ত্রিপুরার অন্যান্য রেল স্টেশনের পাশাপাশি কুমারঘাট পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারিত করে নদীয়াপুর স্টেশন স্থাপিত হয়েছিল৷ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় রেল যোগাযোগের আগে প্রথমে মিটারগেজ চালু থাকলেও বর্তমানে তা ব্রডগেজে রূপান্তরিত হয়েছে৷ তবে তখন রেল পরিষেবা কুমারঘাট পর্যন্তই সীমিত ছিল৷ ফলে নদিয়াপুর স্টেশনটির গুরুত্ব ছিল অসীম৷
সম্প্রতি মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত হওয়ায় কালের যাঁতাকলে ঐতিহ্যবাহী ওই রেলওয়ে স্টেশনটি নানা কারণে ধুঁকতে শুরু করেছে৷ সংস্কারের অভাবে আজ নদিয়াপুর প্ল্যাটফর্মটি দস্তুরমতো ভুতুড়ে আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে৷ স্টেশন মাস্টার ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে চলছে রেলওয়ে স্টেশনটি৷ সবকিছু জেনেও রেল কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছেন৷ স্টেশনটিতে বর্তমানে একদিকে যেমন নেই রাস্তাঘাটের সুবন্দোবস্ত, অন্যদিকে নেই পানীয় জলের সুব্যবস্থা-সহ যাত্রীদের বসার আসন৷ পরিচর্যার অভাবে গোটা স্টেশন চত্বরে গজিয়ে উঠেছে আগাছা আর জঙ্গল৷ সন্ধ্যা হলেই সমাজদ্রোহীদের আখড়ায় পরিণত হয় এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই স্টেশনটি৷
শুধু তা-ই নয়, পুরো স্টেশনের পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য মদের বোতল৷ বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী এবং যাত্রীরা বার-কয়েক রেলের ওপর মহলে লিখিত নালিশ জানালেও ফল শূন্য৷ এলাকার জনগণের আরও অভিযোগ, ত্রিপুরার প্রবেশদ্বার তথা অসম-ত্রিপুরা সীমান্তঘেঁষা উত্তর ত্রিপুরার চোরাইবাড়ি ও ধর্মনগর রেল স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত এই নদিয়াপুর রেলওয়ে স্টেশনটি শুরুতে খুব জাঁকজমকপূর্ণ ছিল৷ প্রায় দশ হাজার মানুষের ভরসাস্থল ছিল স্টেশনটি৷ থাকতেন স্টেশন মাস্টার থেকে শুরু করে জিআরপিএফ, পোর্টার ও অন্যান্য রেলকর্মীরা৷ তাছাড়া এই স্টেশনে ছিল একটি গুদামও৷ ছিল পর্যাপ্ত স্টাফ কোয়ার্টারও৷
স্টেশনের পাশেই রয়েছে নদিয়াপুর, কালাছড়া, উত্তর হুড়ুয়া, গৌরীপুর ও লক্ষ্মীনগর গ্রাম৷ এখানকার প্রায় শতাদিক গ্রামবাসীর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে রেল৷ সম্প্রতি আচমকা নদিয়াপুর রেল স্টেশন থেকে স্টেশন মাস্টার, জিআরপিএফ ও সকল রেল কর্মীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ ফলে শতাব্দিপ্রাচীন নদীয়াপুর রেল স্টেশনটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ার মুখে৷ এমন সংকটে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে এখানে স্থানীয় এক ব্যক্তি বেসরকারিভাবে রেলের টিকিট সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে৷ নানান সমস্যার যাঁতাকলে নিত্যযাত্রীদের দুর্দশা চরমে ঠেকেছে৷ যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে ওই রেল স্টেশনে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় জনগণ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী-সহ উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের জিএম এবং রেলমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন৷

