এসমা বিল পাশ বিধানসভায়, প্রতিবাদে ওয়াকআউট বিরোধীদের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ সেপ্ঢেম্বর৷৷ রাজ্যে চালু হতে চলেছে এসমা৷ বিধানসভায় এসমা (এসেনশিয়াল সার্ভিসেস মেইন্টেন্যান্স অ্যাক্ট) বিল পাশ হয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা আজও এই বিলের বিরোধিতা করেছেন এবং প্রতিবাদে বিধানসভা অধিবেশন ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যান৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অত্যাবশক পরিষেবা বহাল রাখার উদ্দেশ্যেই এই বিল আনা হয়েছে ৷ কারোর সাথে প্রতিহিংসামূলক আচরণ এই বিলের লক্ষ্য নয় ৷ তাঁর দাবি, নাগরিকদের নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা প্রদানে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ তাই, জরুরি পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খামখেয়ালি এবং গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না ৷


একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, গত ৮ জুলাই আইজিএম হাসপাতালে ডায়ালসিস পরিষেবা প্রদানকারীদের পক্ষ থেকে বিল মিটিয়ে দেওয়ার একটি চিঠি পাওয়া গেছে৷ কিন্তু চিঠি দেওয়ার পরের দিনই তাঁরা ডায়ালসিস পরিষেবা বন্ধ করে দেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর তাঁরা পরিষেবা পুনরায় শুরু করেন৷ তিনি বলেন, অনেকক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে৷ একাংশ শিক্ষক কর্মচারী নিজেদের দায়িত্ব ভুলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন৷ তাঁদের লাগাম টানার লক্ষ্যেই এই বিল আনা হয়েছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সাথে তিনি যোগ করেন, কেরালা-সহ দেশের ১০টি রাজ্যে এসমা চালু রয়েছে৷ ফলে, ত্রিপুরায় এসমা চালু করা গণতন্ত্র এবং সংবিধান বিরোধী বলে তিনি মনে করেন না৷


তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায় ইতিপূর্বেও এসমা প্রয়োগ করা হয়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১০ সালের ২৪ জুলাই ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসমা জারি করা হয়েছিল৷ কেরল সরকারও সম্প্রতি এলপিজি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য এসমা চালু করেছিল ৷ শুধু তা-ই নয়, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি হাসপাতালে নার্সদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য এসমা প্রয়োগ করেছিল কেরালা সরকার ৷


তাঁর দাবি, এসমা সরকারি কর্মচারী বিরোধী নয়৷ কারণ তিনমাস পর এসমা বিল সংশোধন করতে হয়৷ তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরা সরকারের বিকাশমুখী কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই বিল আনা হয়েছে ৷ তবে, যাঁরা কাজ করতে ইচ্ছুক নন, তাঁরাই এই আইনকে ভয় পাবেন৷ দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন শিক্ষক-কর্মচারীরা এই বিলের পরোয়া করবেন বলে মনে করি না ৷


কিন্তু, বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারেননি৷ বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের কথায়, ত্রিপুরায় যে কোনও পরিষেবা বিপর্যস্ত হোক আমরা কেউই তা চাইব না৷ তবে, কথা বলার অধিকার থাকবে না এমনটা হতে পারে না৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরার সকল অংশের মানুষ যথেষ্ট দায়িত্বশীল৷ দায়িত্ববোধ থেকেই মাথায় প্লাস্টার বেঁধেও চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রেখেছেন চিকিৎসকরা৷ বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, এই বিল ধর্মঘট বন্ধ করার জন্য ভীতি সৃষ্টি করবে৷ সরকারি কর্মচারীরা মনে করবেন, প্রশাসনের চোখ রাঙানি সহ্য করেই তাঁদের কাজ করতে হবে৷ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, এই বিল দেখে মনে হচ্ছে ত্রিপুরা সরকার কর্মচারীদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না৷ তিনি প্রশ্ণ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, মাত্র ১৬ মাসে কী কারণে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলো? তাঁর পরামর্শ, সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের আস্থা অর্জন করতে হবে৷ তাঁর মতে, একাংশ নেতিবাচক মানসিকতাসম্পন্ন কর্মচারীদের জন্য সমস্ত কর্মচারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত হবে না৷ তাঁর আবেদন, ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করার বদলে প্রশাসন এবং জনগণ উভয়কে একসাথে নিয়ে চলুক৷


বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের আপত্তি জানিয়ে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য রতন চক্রবর্তী কটাক্ষ করে বলেন, সহানুভূতির নামে কর্মচারীদের সুড়সুড়ি দেওয়া উচিত হচ্ছে না৷ অবশ্য, ট্রেজারি বেঞ্চের কটূক্তি উপেক্ষা করে বিরোধী দলনেতা পরামর্শ দেন, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরা ষড়যন্ত্র করছেন তাঁদের চিহিণত করুন৷ তবে, এই আইন প্রত্যাহার করে নিন৷


এদিকে, ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্য সুদীপ রায়বর্মণ এই বিলে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে দাবি করে আপাতত বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর পরামর্শ দেন৷ তাঁর কথায়, এসমা কার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে নির্দিষ্টভাবে তা বিলে উল্লেখ করা হয়নি৷ তাতে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷ তাই, বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক, দাবি জানান তিনি৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, এই বিলে পদ্ধতিগত কোনও ত্রুটি নেই৷ এসমা প্রয়োগ করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে সমস্ত কিছু বিলে উল্লেখ রয়েছে৷ এই দাবি করে তিনি এসমা বিল সমর্থনের জন্য সকলের কাছে আবেদন জানান৷ কিন্তু বিরোধীরা এই বিল প্রত্যাহার না হওয়ার প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন৷ এর পর ধবনিভোটে এই বিলটি পাশ হয়ে যায়৷