![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/08/989898989-1024x682.jpg)
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ আগস্ট৷৷ রাজ্যের অনুকুল আবহাওয়ায় প্রকৃতিগতভাবে যেসব জিনিষ ভালো উৎপাদিত হয় সেগুলির উৎপাদন বৃদ্ধির উপর কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে৷ পাশাপাশি উৎপাদিক পণ্যের বাজারজাতকরণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ তবেই রাজ্যের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন৷ আজ প্রজ্ঞাভবনে কৃষি ও কৃষণ কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জৈব চাষ ও ফসলের বাজারজাতকরণ’ শীর্ষক একদিবসীয় কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব একথাগুলি বলেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের রাজ্যে প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন গুণমানযুক্ত সুগন্ধি, কালো এবং আঠালো ধান, আনারস, হলুদ ইত্যাদি ফসলকে জৈবচাষের আওয়াভুক্ত করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, আমাদের মূল্যও বেশি৷ কালো মরিচকে জৈবচাষের অর্ন্তভূক্ত করতে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, রাজ্যের জনজাতি এলাকায় চেকড্যাম তৈরি করে বর্তমানে বড়মাত্রায় অর্গানিক ফিস (জৈব মাছ) চাষ করা হচ্ছে৷ সেগুলিকে দেশ-বিদেশে বাজারজাতকরণের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাহাড় অঞ্চলে জনজাতিরা যে জুমচাষ করেন তাও জৈবচাষ৷ জুমচাষের উৎপাদির বিভিন্ন পণ্যকেও দেশ-বিদেশে বাজরজাতকরণের বিষয়ে পরিকল্পনা নিতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল, অনারস, সুপারি উৎপাদিত হয়৷ সেগুলিকে সঠিকভাবে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে রাজ্যে প্রচুর রোজগারের সুযোগ রয়েছে৷ বর্তমানে গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটিং(জেম)-এর মাধ্যমে অতি সহজেই উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা যেতে পারে৷ রাজ্যের কৃষকদেরও এর সুযোগ নেওয়া প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, রাজ্যে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে৷ সেগলিকে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে রাজ্যের আর্থিক সমৃদ্ধি কিভাবে আরও বাড়ানো যেতে পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে৷ তবেই রাজ্যকে সব বিষয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে৷
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির ভাষণে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিং রায় বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজী ২০২২ সালের মধ্যে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ ও দিশাকে পাথেয় করে রাজ্য সরকারও রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে৷ তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জৈবচাষের গুরুত্ব বাড়ছে৷ রাজ্যেও প্রচুর পরিমাণ জমিকে জৈবচাষের আওতাভুক্ত করা হয়েছে৷ কারণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে যে ফসল উৎপাদন করা যায় তা ব্যবহারের ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷ এর থেকে পরিত্রাণের উদ্দেশ্যেই রাজ্যে জৈবচাষকে আরও কিভাবে বাড়ানো যেতে পারে সে বিষয়ে রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷
পাশাপাশি জৈবচাষ উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণের বিষয়েও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ জৈবচাষ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত এবং জৈবচাষের মাধ্যমে কিভাবে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা যেতে পারে সেই বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই আজকের এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব মানিকলাল দে বলেন, রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরাকে জৈবচাষে একটা উল্লেখযোগ্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ সেই লক্ষ্যে রাজ্যে বর্তমান ৭ হাজার হেক্টর জমিতে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে৷ রাজ্যের ৯ হাজারের উপর কৃষক জৈবচাষি হিসেবে নথীভুক্ত হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে হলুদ, ভূ ট্টা, আদা, আনারস, বিভিন্ন সুগন্ধি, কালো এবং আঠালো ধান ইত্যাদি ফসলকে জৈবচাষের আওয়াভুক্ত করা হয়েছে৷
অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে সিকিম স্টেট কো-অপারেটিভ সাপ্লাই অ্যান্ড মার্কেটিং ফেডারেশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পবন আবস্থি, রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ড. দেবপ্রসাদ সরকার এবং উদ্যান দপ্তরের অধিকর্তা অরুণ দেববর্মা উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়াও আজকের এই কর্মশালায় রাজ্যের ৮টি জেলার জিলা পরিষদের সভাধিপতি, সহকারি সভাধিপতি, বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান বিএসি’র চেয়ারম্যান এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কৃষকগণ উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন৷