তিপ্রাল্যান্ড দাবী আদায়ে প্রয়োজনে রক্ত ঝরানোর আওয়াজ উঠেছে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ আগস্ট৷৷ পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে কিছুতেই সরছে না শাসক শরিক আইপিএফটি৷ তাই, আজ তিপ্রাল্যান্ড দাবি দিবস পালন করেছে জনজাতি ভিত্তিক ওই আঞ্চলিক দল৷ শুধু তাই নয়, পৃথক রাজ্যের দাবি আদায়ে রক্ত ঝরানোর আওয়াজও উঠেছে৷


এদিন রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম জেলার অন্তর্গত জিরানীয়া মহকুমার ত্রিপুরা উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদের মুখ্য কার্যালয় খুমুলুঙ-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে এক প্রকাশ্য সমাবেশ এবং সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷ এদিনের এই সমাবেশে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইপিএফটি দলের সভাপতি তথা ত্রিপুরা সরকারের রাজস্ব এবং মৎস্য দপ্তরের মন্ত্রী এনসি দেববর্মা৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইপিএফটি দলের সাধারণ সম্পাদক তথা ত্রিপুরা সরকারের বন এবং জনজাতি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, দলের সহ-সভাপতি তথা মুখপাত্র মঙ্গল দেববর্মা, মহিলা আইপিএফটি সম্পাদিকা স্বপ্ণা দেববর্মা, যুব আইপিএফটি সম্পাদক শুক্লা চরণ নোয়াতিয়া৷ আইপিএফটি নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল গুলিকে ভেঙ্গে নতুন রাজ্য গঠনের দাবিতে তৈরি সংগঠন ’ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ নিউ স্টেটস’ এর নেতারাও উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অসম থেকে রাজ্যসভার সাংসদ বিশ্বজিৎ দৈমারি, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনরত নেতা মনিষ তামাং, তেলেঙ্গানা আন্দোলনের নেতা পি নিরুপ রেড্ডি প্রমূখ৷


সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এনসি দেববর্মা বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল চক্রান্ত করে বলার চেষ্টা করছে যে আইপিএফটি দলের ভবিষ্যৎ নেই৷ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে দল৷ তাঁর অভিযোগ, কিছু সংবাদ মাধ্যম এই কথাগুলো বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে৷


এদিকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংসদ বিশ্বজিৎ দৈমারি বলেন, ত্রিপুরাসহ ভারতে যেসকল রাজ্যের জনজাতি এলাকার মানুষ আলাদা রাজ্যের দাবি করছে তাতে কোন অন্যায় নয়৷ তাঁর কথায়, সংবিধানে আলাদা রাজ্য গঠনের সংস্থান রয়েছে৷ তা বিভিন্ন জনজাতি অঞ্চলের মানুষের মৌলিক দাবী৷ তাঁর মতে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তারা দাবি করতেই পারেন৷ পাশাপাশি তিনি জনজাতি ভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, দল-মতের ঊধর্ে উঠে নিজেদের দাবির জন্য লড়াই করতে হবে৷ কারণ এমনিতে কিছু মিলে না৷ অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়৷ এদিন তিনি অসমের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়েছে৷তাঁর কথায়, প্রয়োজনে ত্রিপুরাবাসীকে রক্ত ঝরাতে হবে৷ যদি রক্ত ঝরিয়ে নিজেদের দাবি আদায় সম্ভব হয়, তবে জনজাতিরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেন৷


তিনি আরো বলেন ত্রিপুরা রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রীর আসনে রয়েছেন একজন জনজাতি নেতা যীষ্ণু দেববর্মা৷ পাশাপাশি পার্লামেন্টেও ত্রিপুরা থেকে একজন সাংসদ জনজাতি অংশের রয়েছেন৷ তার নাম রেবতী কুমার ত্রিপুরা৷ সকলে মিলে দল-মতের কথা চিন্তা না করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আলাদা রাজ্যের দাবি জানাতে পারেন৷ শুধু নিজ দেশেই নয় পার্শবর্তী বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশের জনজাতিদের অনেকেই খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই৷ তাদেরকে সহায়তা করা বিশেষ করে শিক্ষিত করে তোলার জন্য চেষ্টা চালানো খুব প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন৷


পি নিরুপ রেড্ডি বলেন, ভারত সরকার চাইলেই যে কোন রাজ্যকে ভেঙ্গে আলাদা নতুন রাজ্য গঠন করতে পারে এই অঞ্চলের মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে৷ উদাহরণ হিসেবে তিনি সম্প্রতি জম্মু কাশ্মীর থেকে ধারা ৩৭০ তোলে দিয়ে লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীর দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করেছে৷ এই সরকারের এমন কাজের মানসিকতায় দেশের মানুষ খুশী৷ সরকারের স্লোগান হলো সব-কা সাথ সব-কা বিকাশ সব-কা বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, ভারত সরকারের মানসিকতা থেকে বুঝা যায় মানুষের কথা চিন্তা ভাবনায় রেখে কাজ করছে৷ সেইসঙ্গে তিনি ভারতে পূর্বতন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন তিনি কোন কথা বলতে পারতেন না, এমনকি নিজেও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না৷ অন্যরা যা বলতেন তাই তিনি করতেন৷ তবে বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলেন৷ এই জন্যই তিনি জম্মু কাশ্মীর থেকে ধারা ৩৭০ তোলার মত সাহস দেখিয়েছেন৷ তাই আশা করা যায় জম্মু-কাশ্মীরের মত ত্রিপুরার জনজাতিদের দাবি মেনে সরকার তিপ্রাল্যান্ড রাজ্য গঠন করবে৷


এ দিন নিজেদের চিরাচরিত পোশাক পরে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সী নারী পুরুষ এসেছিলেন৷ সবাই রাজ্যের এবং রাজ্যের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য পরিবেশনের পাশাপাশি শিল্পীরা তাদের লোকগান ও নৃত্য পরিবেশন করেন৷ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ সাজেক যায়, ২০০৯ সালে আইপিএফটি দল গঠন হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ২৩আগস্ট তারা তিপ্রাল্যান্ড দাবি দিবস পালন করে আসছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *