মহারাজা বীর বিক্রম ছিলেন আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার : উপমুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ আগস্ট ৷৷ মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর দেববর্মণ মাণিক্য বাহাদুর-এর ১১১ তম জন্ম শতবার্ষিকী উৎযাপনের কর্মসূচিতে আজ নজরুল কলাক্ষেত্রের প্রেক্ষাগৃহে ’মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর দেববর্মণ মাণিক্য বাহাদুর ম্যামোরিয়াল ল্যাকচার শীর্ষক এক আলোচনা সভা আয়োজিত হয়৷ তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তরের উদ্যোগে এবং ত্রিবেগ এর সহযোগিতায় আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ বলেন, ত্রিপুরার শেষ রাজা ছিলেন মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর৷

নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গতবছর থেকে ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের জন্ম শতবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, এর আগেও রাজ্যের নাগরিকগণ মিলে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর দেববর্মণ মাণিক্য বাহাদুর-এর জন্ম শতবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ এই ব্যাপারে তৎকালীন রাজ্য সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি৷ কিন্তু রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্যের জন্ম শতবার্ষিকী পালন করছে৷ মহারাজা বীর বিক্রম ছিলেন আধুনিক ত্রিপুরার রূপকার৷ তাঁর রাজত্বকালে ত্রিপুরা শিক্ষা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভুত উন্নতি লাভ করেছিল৷ তিনি রাজ্যে শিক্ষার প্রসারে তৎকালীন সময়ে ত্রিপুরায় কলেজ স্থাপন করেছিলেন৷ তিনি বলেন, জনগণের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রতি অনুযায়ী নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আগরতলা বিমানবন্দর মহারাজার নামে নামাকরণ করা হয়েছে৷

উপমুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেববর্মা আরও বলেন, ত্রিপুরার রাজাদের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল যে তারা আত্মপ্রচার বিমুখ ছিলেন৷ কারণ তাঁরা জানতেন ইতিহাসে থাকতে হলে মানুষের হৃদয়ে নাম লিখতে হবে৷ তিনি ত্রিপুরার রাজপরিবারের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ত্রিপুরাকে খব ভালবাসতেন৷ তিনি সাঁতবার রাজ্যে এসেছিলেন৷ ত্রিপুরার রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে ভারত ভাষ্কর উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল৷ এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ একসময়ে শান্তিনিকেতনে বলেছিলেন এই ভারত ভাষ্কর উপাধি তাঁর কাছে অন্যান্য উপাধির চেয়ে অন্যতম৷ তিনি রাজন্য ঐতিহ্য ও সংস্ক’তি রক্ষায় এই ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান৷
এই আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হিমাচল প্রদেশ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কূলদীপ চাঁন অগীহোত্রী৷ এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মণিপুরের আই এম এ এস আই ফাউণ্ডেশনের এল সোমী রায় ও তথ্য সংস্ক’তি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস৷

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ত্রিবেগ এর সভাপতি ড. শৌভিক দেববর্মা৷ অনুষ্ঠানে বিধায়ক ড. অতুল দেববর্মা, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. অশোক সিনহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় ’হোয়াই সাইন্স এণ্ড ফিলোসফি হেড নো কনফ্লিক্ট ইন এনসিয়ান্ট ইণ্ডিয়া- আনটোল্ড এ’পেক্ট অফ ইণ্ডিয়ান সিভিলাইজেশান’ বিষয়ের উপর আলোচনা করতে গিয়ে হিমাচল প্রদেশ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কূলদীপ চাঁন অগীহোত্রী বলেন, এক সময় সারা বিশ্বে ভারতবর্ষের প্রচলিত ’ান বি’ানে খ্যাতি ছিল৷ কিন্তু কোন এক সময়ে এই ’ান বি’ানের এই প্রাচুর্যতা হারিয়ে গিয়েছিল৷ হারিয়ে যাওয়া এই প্রচলিত ’ান বি’ানকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে৷ নব প্রজন্মের কাছে এই মৌলিক চিন্তাধারা বিকশিত করতে হবে৷

তিনি বলেন, প্রচলিত ’ান বি’ানের এই মৌলিক চিন্তাধারাকে আধুনিক বি’ানের সাথে তালমিলিয়ে চলতে হবে৷ প্রচলিত ’ান বি’ান ও আধুনিক বি’ানের মধ্যে যে সেতুবন্ধনটি ভেঙ্গে গেছে সেটিকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হবে৷ আই এম এ এস আই ফাউণ্ডেশনের এল সোমী রায় ঊনবিংশ শতকে ত্রিপুরা ও মণিপুরের রাজপরিবারের মধ্যে সুুসম্পর্ক ও সংস্ক’তি আদান প্রদানের উপর আলোচনা করেন৷ অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্ক’তি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস৷ এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিবেগ এর সভাপতি ড. শৌভিক দেববর্মা৷

অনুষ্ঠানে ড. কূলদীপ চাঁন অগীহোত্রী এবং এল সোমী রায়কে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়৷ উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা তাঁদের হাতে মারক উপহার তুলেদেন৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা সহ উপস্থিত অন্যান্য অতিথিগণ মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর দেববর্মণ মাণিক্য বাহাদুর-এর প্রতিক’তিতে পুপার্ঘ্য অর্পন করে শ্রদ্ধা ’াপন করেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *