![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/08/DSC_1960-1024x681.jpg)
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ আগস্ট৷৷ সহিংসতার পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন এনএলএফটি-র ৮৮ জন জঙ্গি৷ প্রচুর আগ্ণেয়াস্ত্র-সহ মঙ্গলবার তারা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, সাংসদ রেবতিকুমার ত্রিপুরার উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেন৷ এনএলএফটি নেতা সবির দেববর্মা, কাজল দেববর্মা, কর্ণ দেববর্মা, তপন কলই এবং সুমেন্দ্র দেববর্মা আজ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র তুলে দেন৷ মুখ্যমন্ত্রীও তাদের স্বাগত জানান এবং সব রকমের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
এদিন তাদের মধ্যে তিনজন মহিলা জঙ্গিও ছিলেন৷ ২০০০ সালে এনএলএফটি-তে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা৷ আজ ওই জঙ্গিরা পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে এসেছিলেন৷ বাংলাদেশের ঘাঁটিতে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করতেন তারা৷ মহিলা ও শিশুসন্তান মিলিয়ে জঙ্গিদের ১২৫ জন পরিবারের সদস্যও আজ থেকে নতুনভাবে জীবন গড়ে তোলার স্বপ্ণ দেখতে শুরু করেছেন৷
এনএলএফটি (এসডি) গোষ্ঠী ভারত সরকার ও ত্রিপুরা সরকারের সাথে সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষরের সাথেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, জঙ্গিরা আত্মসর্পণ করবেন৷ কারণ, তারাও আত্মসমর্পণের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন৷ সে মোতাবেক আজ ত্রিপুরার ধলাই জেলার আমবাসা মহকুমায় চন্দ্রাইপাড়া উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন এনএলএফটি-র ৮৮ জন জঙ্গি৷ সাথে তারা প্রচুর অস্ত্রও জমা দিয়েছেন৷ আজ তারা একে ৪৭ রাইফেল ৩-টি, ৭.৬২ এসএলআর ৬-টি, চাইনিজ রাইফেল ৪-টি, কার্বাইন ৩-টি, ওজি ১-টি, দুই ইঞ্চি মর্টার ১-টি, ৪০ এমএম ১-টি, পয়েন্ট থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ১৯টি, ইউএস কার্বাইন ১-টি, এম-২০ পিস্তল ৪-টি, সিঙ্গল বোর গান ১-টি, ৯ এমএম কার্তুজ ৫৮৬টি, এম-২০ কার্তুজ ৪-টি, থ্রি-নট-থ্রি কার্তুজ ৯৯১টি, একে ৪৭ কার্তুজ ২৯৫টি জমা দিয়েছেন৷ এছাড়াও টাইম ডিভাইস ১৬টি, টাইম পেনসিল ২৩টি, ওয়ারলেস সেট ৯-টি, বোতল গ্রেনেড ১৩টি, চাইনিজ গ্রেনেড ১-টি, গ্যাস গ্রেনেড ১-টি, একে ম্যাগাজিন ৬-টি, এসএলআরভি ম্যাগাজিন ১৪টি, প্রেসার স্যুইচ ১৮টি, ৪০ এমএম সেল ১-টি, টুইন সেল ১-টি, হ্যান্ড গ্রেনেড ১-টি, এম-২০ ম্যাগাজিন ৪-টি, ইউএস কার্বাইন ম্যাগাজিন ১-টি, শজি ম্যাগাজিন ২-টি, লকিং স্যুইচ ৪-টি, টাইম ডিলে ১-টি, থ্রি-নট-থ্রি ম্যাগাজিন ১৯টি জমা দিয়েছেন৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, দেশ আজ নতুন দিশায় এগিয়ে চলেছে৷
উগ্রপন্থীরাও তাই সহিংসতার পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন৷ তাঁর কথায়, ২০১৪ সালে দেশে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সরকার গঠন হওয়ার পর থেকে সকল অংশের মানুষের বিকাশের চেষ্টা চলছে৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী উগ্রবাদীদের হিংসার পথ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ তাতে, ব্যাপক সাড়া মিলেছে৷ তাঁর দাবি, দীর্ঘ ৪২ বছরের নাগা সমস্যার সমাধান মোদীর নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে৷ তিনি বলেন, জনজাতিদের উন্নতিতে গৃহীত পদক্ষেপই এনএলএফটি জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার উৎসাহ জুগিয়েছে৷
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, যোজনা অনুযায়ী আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে ত্রিপুরা সরকার৷ শুধু তা-ই নয়, জনজাতিদের উন্নতিতে তারাও সমান অংশীদার হবেন, জোর গলায় বলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী৷
আজ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব জানিয়েছেন, জনজাতিদের স্বার্থে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, এই তিনটি মৌলিক চাহিদার ঘাটতি মেটাতে ত্রিপুরা সরকার প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়েছে৷ তিনি জানান, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তার উন্নয়নে ১,৬০০ কোটি টাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে৷ সাথে যোগ করেন, তাঁদের জন্য পরিস্রুত পানীয় জলেরও ব্যবস্থা করা হবে৷
এদিকে, ত্রিপুরা সরকারের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব তথা গৃহ দফতরের প্রধানসচিব কুমার অলক বলেন, চুক্তির ভিত্তিতে আজ এনএলএফটি জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করেছেন৷ তবে, তাদের উপর প্রশাসনিক নজরদারি থাকবে৷ এতে স্বাভাবিক জীবনযাপনের বদলে জঙ্গি কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ তাই এখনই তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলি প্রত্যাহার করবে না ত্রিপুরা সরকার, বলেন তিনি৷