অবৈধ ই-রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রতিবাদে রাজ্যে জুড়ে বিক্ষোভ, অবরোধ

নিজস্ব প্রতিনিধি, কাঞ্চনপুর/আগরতলা, ২ আগস্ট৷৷ রাজ্য সরকার ও পরিবহণ দপ্তরের নির্দেশ মত পহেলা আগস্ট থেকে রেজিস্ট্রেশন ইন্সুরেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সমস্ত রকম ই রিক্সা বা টমটম উপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে কৈলাশহর এর সমস্ত টুকটুক চালকরা আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ আন্দোলনে শামিল হয়৷ সরকার যদি অবিলম্বে নির্দেশ প্রত্যাহার না করে তাহলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে শামিল হবে৷ এমনকি ই রিক্সা ও তার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রির যে সমস্ত দোকান আছে সবগুলি ভাঙচুর ও অগ্ণিসংযোগের হুমকিও দেয়৷ হঠাৎ করে ই রিকশা পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় নাজেহাল সুকল কলেজ ও অফিস যাত্রীরা৷


উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য জেলাশাসক ই রিক্সা চালকদের সাথে দুপুর একটা নাগাদ বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় ৷ বৈঠক শেষে সমাধান সূত্র বেরিয়ে না আসলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ জেলাশাসক এর সাথে জরুরি বৈঠকের পরও কোন ধরনের সমাধান সূত্র বেরিয়ে না আসায় বিক্ষুব্ধ ই রিক্সা চালকরা কৈলাশহর-কুমারঘাট সড়কের কৈলাশহর বিমানবন্দর সংলগ্ণ জায়গায় পথ অবরোধ করে৷ প্রায় পাঁচ শতাধিক ই রিক্সা চালকরা পথ অবরোধ করে৷ পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে৷
জরুরি বৈঠকে জেলাশাসক ই রিক্সা চালকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেন ই রিকশাচালকেরা৷

অবশেষে কৈলাশহর মহকুমা শাসক বিশাল কুমারের হস্তক্ষেপে সাময়িক ভাবে অবরোধ মুক্ত হল কৈলাশহর কুমারঘাট সড়ক৷ ই রিক্সা চালক ও মালিকদের দাবি মত কৈলাশহর থানায় আটক ১১ টি ই রিক্সা ৪ ঘণ্টার মধ্যে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া এবং ট্রান্সপোর্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে রেজিস্ট্রেশন লাইসেন্স ও ইন্সুরেন্স করার সময় সীমা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি মূলে অবরোধ মুক্ত হল কৈলাশহর কুমারঘাট সড়ক৷ মহকুমা শাসকের আশ্বাস অনুযায়ী ৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ই রিক্সা চালক ও তাদের পরিবার সহ একত্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধ ও অনশনে বসার হুমকি দিয়ে রাখলো ই রিক্সা চালক ও মালিকপক্ষ৷


এদিকে, ই-রিক্সা চালকরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শামিল হওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ তাতে সাড়া না দিলে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে৷
ই-রিক্সা চলাচলের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির পরিপ্রেক্ষিতে বিপাকে পড়েছে ই-রিক্সা চালক ও তাদের পরিবার৷ রুটি রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনাহার অর্ধাহার নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ দিশেহারা ই-রিক্সা শ্রমিকরা শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাস ভবনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিমুখ হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা কর্মীরা তাদেরকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারি বাস ভবনে দেখা করতে দেয়নি৷ তাদেরকে মহাকরণে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ তাতে শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়৷

ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে ই-রিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেওয়াই চালকদের অনেকেই বাড়ি ফেরেননি৷ কারণ বাড়ি ফিরতে হলে স্ত্রী সন্তান ও বৃদ্ধ পিতা-মাতার মুখে আহার তুলে দেওয়ার জন্য কিছু নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে৷
অনেকেই পুরোনো মোটরস্ট্যান্ডে রাত কাটিয়েছে৷ সে কারণেই তারা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়ে সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত করার জন্য দাবি জানানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে৷ ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানিয়েছেন সব ক্ষেত্রেই ধৈর্যের বাঁধ থাকে৷ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে শ্রমিক আন্দোলন চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ আর তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন ধরনের অবনতি ঘটলে শ্রমিকরা দায়ী থাকবে না বলেও তারা আগাম জানিয়ে দেন৷ এজন্য সরকার ও প্রশাসনকেই দায়ী থাকতে হবে৷ তবে ই-রিক্সা শ্রমিকদের একাংশ চাইছে আরও ৬ মাস ই-রিক্সা রাস্তায় চলাচল করার সুযোগ দেওয়ার জন্য৷
অপর অংশ চাইছে অন্তত আরও একমাস সময় দেওয়া হোক৷ এনিয়ে দুটি গোষ্ঠির মধ্যে কিছুটা মতভেদ দেখা দিয়েছে৷ তবে সবকিছুর উর্দ্ধে উঠে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ উল্লেখ্য, ১লা আগস্ট থেকে রেজিস্ট্রেশন বিহীন ই-রিক্সার চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম দিনই ৪৮টি ই-রিক্সা বাজেয়াপ্ত করেছে ট্রাফিক পুলিশ৷

এ ধরনের ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ সুপার৷ প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের ফলে ই-রিক্সা চালকরা রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছেন না৷ সে কারণেই তারা আন্দোলনের পথে অগ্রসর হচ্ছেন বলে জানা গেছে৷ সরকার পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষ উভয়েই তাদের অবস্থানে অনড় থাকায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে৷ এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *