১০৩২৩ অধ্যায়ের সমাপ্তিতেও নয়া মোড়

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ আগষ্ট৷৷ অশিক্ষক পদ সৃষ্টি করে আদালত অবমাননার মামলায় নিস্তার পেল রাজ্য সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত এবং বিচাপরতি বিনিত সারনের খন্ডপীঠ ওই মামলা খারিজ করে দিয়েছেন৷ একইসাথে এডহক শিক্ষকদের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন সাপেক্ষে রাজ্য সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আদালতের নজরদারীর প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছে সর্বোচ্চ আদালত৷ কারণ, রাজ্যে শিক্ষক ঘাটতির সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ ফলে, সুপ্রিম কোর্ট নজরদারী বন্ধ করছে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে আদালত৷ এদিকে, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের ইন্টারল্যুকেটরি এপ্লিকেশন সর্বোচ্চ আদালত গ্রহণ করেনি৷ বরং ওই আবেদন বাতিল করতে চাইলে আবেদনকারীর আইনজীবি নিজেই মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আদালতে অনুমতি চেয়ে নেন৷ আদালতও তাতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনসচিব দাতামোহন জমাতিয়া৷ আজ আদালতের রায়ে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরীতে বহাল থাকার চেষ্টায় অন্তিম ভরসাও রইল না৷ তবে, গল্প নতুন মোড় চলেছে, সে-বিষয়েও সন্দেহের কোন কারণ আছে বলে মনে হচ্ছে না৷


পক্ষভুক্ত নন এমন শিক্ষকদের চাকুরী বাতিল হবে না, ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের রায়ের অনুচ্ছেদ ১২৭ এর ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে ইন্টারল্যুকেটরি এপ্লিকেশন গ্রহণ হয়নি৷ বরং তাঁদের আবেদন ভুল মন্তব্য করে বাতিল বলে সুপ্রিম কোর্টের বিচাপরতি উদয় উমেশ ললিত এবং বিনিত সারনের খন্ডপিঠ আদেশ জারি করার আগেই আবেদনকারীর আইনজীবি মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন জানান৷ সুপ্রিম কোর্ট এই আবেদন মঞ্জুর করেছে৷ অবশ্য, চাকুরীচ্যুত শিক্ষক মামলায় গত ১ নভেম্বর চূড়ান্ত শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্ট এডহক শিক্ষকদের মেয়াদ বৃদ্ধি করে বলেছিল, এই মামলায় আর কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না৷ তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, চাকুরীচ্যুত শিক্ষক মামলা সমাপ্ত৷ ফলে, সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই রায় ত্রিপুরা হাইকোর্টেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ কারণ, ত্রিপুরা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহের সময় দিয়ে পক্ষভুক্ত নন শিক্ষকদের এডহক মর্যদা কেন দেওয়া হচ্ছে, তা হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেছে৷ অবশ্য, সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে আবারও স্পষ্ট এডহক শিক্ষকদের মেয়াদ ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্তই বহাল থাকবে৷


এদিকে, অশিক্ষক নিয়োগে আদালত অবমাননার মামলা এদিন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে৷ কারণ, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পুনর্বাসনে ওই পদ সৃষ্টি হয়নি তা রাজ্য সরকার আদালতে বোঝাতে পেরেছে৷ তাছাড়া, এডহক শিক্ষকদের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারীরও এখন থেকে প্রয়োজন নেই বলে সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে৷ কারণ, এডহক শিক্ষকদের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশ্ণে রাজ্য সরকার যে সব পদক্ষেপ নেবে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, তার অধিকাংশ নেওয়া হয়েছে৷ এডহক শিক্ষকদের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনের সাপেক্ষে আদালতে রাজ্য সরকার শিক্ষক ঘাটতি মেটাতে শিক্ষক নিয়োগে এককালিন ছাড়, বিএড এবং ডিএলএড কোর্সে ভর্তির জন্য নানা সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা, এনসিটিই নির্দেশিকা শিক্ষক নিয়োগ এবং নতুন করে টেট এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, এই সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল৷ এই সমস্ত বিষয়ে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তাই, সুপ্রিম কোর্টও তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে, বলেন আইনমন্ত্রী রতন লাল নাথ৷


এদিন আইনমন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের জয় হয়েছে৷ আদালত অবমাননার মামলায় রাজ্য সরকার নিস্তার পেয়েছে৷ পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষক নিয়োগের রাজ্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপেই আদালত অবমাননার বিষয়টি খারিজ হয়েছে৷ তাঁর কথায়, রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়োগে এনসিটিই’র নির্দেশিকা পালন করছে৷ ইতিমধ্যে, শিক্ষক নিয়োগে এককালীন ছাড় মিলেছে৷ তাই, আগামী অক্টোবর ও নভেম্বরে টেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে৷ তাঁর দাবি, প্রায় ৯০ হাজার টেট পরীক্ষায় আবেদন জমা পড়েছে৷ তিনি আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী বিএড অনুপ্রেরণা যোজনা চালু করেছে রাজ্য সরকার৷ তাছাড়া, বিএড ও ডিএলএড কোর্সের জন্য রাজ্য সরকার স্পন্সর করছে৷ উপজাতি ছাত্রছাত্রীদেরও বিএড ও ডিএলএড কোর্সের সুযোগ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ এছাড়া, শিক্ষক নিয়োগও করেছে রাজ্য সরকার৷ এ সমস্ত কারণেই আদালত অবমাননার মামলাটি খারিজ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি৷


প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৭ মে ত্রিপুরা হাইকোর্ট ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল করেছিল৷ তাতে, ত্রিপুরা সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল৷ কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টও ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে৷ তবে, সুপ্রিম কোর্ট দুই দফায় চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের এডহক ভিত্তিতে নিয়োগে সুযোগ দিয়েছে৷ তদানিন্তন বামফ্রন্ট সরকার ওই সময় ১২০০০ অশিক্ষক পদ সৃষ্টি পরেছিল৷ কিন্তু, চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের পুনর্বাসনে ওই পদ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে ২০১৭ সালে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন দেবাশীষ পাল চৌধুরী৷ একদিকে, চাকুরীচ্যুত শিক্ষক মামলায় নতুন করে শুনানির সুযোগ আজ দেয়নি আদালত৷ তেমনি অশিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত আদালত অবমাননার মামলাও খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ ফলে, আগামী ৩১ মার্চের পর চাকুরীচ্যুত শিক্ষকরা রাজ্য সরকারের নতুন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠবে৷ কারণ, অশিক্ষক পদে নিয়োগ বাতিল করেনি সুপ্রিম কোর্ট৷ তার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ণ তুলেনি আদালত৷ ফলে, ১২০০০ অশিক্ষক পদ আজ কার্য্যত আইনী বৈধতা পেয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷ তাই, ওই পদে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের নিয়োগে চাপ বাড়বে রাজ্য সরকারের উপর, এমনটাই মনে করা হচ্ছে৷ অবশ্যই, বিরোধীরা এই ইস্যুতে সোচ্চার হবে, তা অনুমান করা যাচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *