কলকাতা, ২৬ জুলাই (হি.স): ডিএ মামলায় শুক্রবার আদালতে মুখ পুড়ল রাজ্যের। কেন্দ্রীয় হারেই সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। আজ শুক্রবার, এমনই নির্দেশ দিল স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল অর্থাৎ ‘স্যাট’। ‘স্যাট’-এর বিচারপতি সুবেশ দাস ও রঞ্জিত কুমার বাগের নির্দেশ, এই বর্ধিত হারে মহার্ঘ ভাতা ষষ্ঠ পে কমিশন অথবা আগামী ১ বছরের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। কীভাবে বকেয়া মেটানো হবে, তা রাজ্যকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা। মহার্ঘভাতার ব্যাপারে আদালতের রায়ে খুশি রাজ্য সরকারি কর্মীরা । শুক্রবার রায় প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় তাঁদের উল্লাসের প্রকাশ। এদিকে, সব দেওয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে ডিএ-র দাবি নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি । তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত সরকারি কর্মীদের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ঘেউ ঘেউ করবেন না । তাহলে কিছুই দেব না । ডিএ যখন দেওয়ার তখন দেব’। এরপরে স্যাটে যখন মামলা হয় তখন তা গ্রহণই করতে চায়নি ট্রাইব্যুনাল । বলেছিল, এনিয়ে মামলা হবে না কারণ, ডিএ সরকারের দয়ার দান ।
অথচ আজ ওই অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালেই বড় জয় পেলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারিরা । স্যাটের এদিনের রায়কে রাজ্য সরকারের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে । কারণ, রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ সংক্রান্ত দাবির বিরোধিতা করেই প্রথমে স্যাটের দ্বারস্থ হয়েছিল সরকার পক্ষ । এক্ষেত্রে ডিএ-কে ‘সরকারের দয়ার দান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল স্যাটের তরফ থেকে । এরপরই আবেদনকারী সরকারি কর্মীরা কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন । হাইকোর্ট এক্ষেত্রে কর্মীদের নিজের পর্যবেক্ষণ জানিয়ে মামলা ফের স্যাটে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয় । এরপর এদিনের রায়ে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল জানিয়ে দেয় রাজ্যকে বকেয়া ডিএ দিতে হবে।
গত ১৮ জুন স্যাটে শেষ হয় ডিএ মামলার শুনানি । শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছিল স্যাট । আজ রায় ঘোষণা করে স্যাট জানিয়েছে, কীভাবে ডিএ দেওয়া হবে, তার আইন করা রাজ্যের দায়িত্ব । পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, বকেয়া মেটানো রাজ্যের কর্তব্য । হয় নগদে মেটাতে হবে বকেয়া টাকা, নইলে পিএফ অ্যাকাউন্টে তা ট্রান্সফার করে দিতে হবে । এক বছরের মধ্যে অথবা ষষ্ঠ পে কমিশনের রায়ের আগে তা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে স্যাট ।
রায় ঘোষণা করে বিচারপতি সুরেশ দাস ও রঞ্জিত কুমার বাগ বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জেরে ঘাটতি মেটাতে ডিএ দেওয়া হয় । অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী ডিএ স্থির হয় । সেক্ষেত্রে রাজ্যে রোপা আইন থাকলেও, ডিএ-র হার নির্ধারক মূলত অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স । এখন রোপা আইন অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ডিএ দেয় রাজ্য সরকার । কিন্তু তারপর থেকেই তা অনিয়মিত হয়ে যায়। মানা হচ্ছে না কোনও হার । এখন রাজ্য কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার জন্য ৩ মাসের মধ্যে পলিসি বের করতে হবে । ছয় মাসের মধ্যে সেই পলিসি কার্যকর করতে হবে । এক বছরের মধ্যে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে হবে । রাজ্যে ডিএ ঘোষণা অনিয়মিত হওয়ার কারণে কর্মীরা আর্থিক ভাবে যতটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন । তাও পুষিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এদিনের রায়ে । ২০০৬ সাল থেকে সর্বভারতীয় মূল্যসূচক অনুয়ায়ী বছরে দু’বার করে ডিএ দিলে যে টাকা কর্মীদের প্রাপ্য হয়, হিসেব করে সেই বকেয়া টাকা এক বছরের মধ্যে অথবা নুতন বেতন কাঠামো ঘোষণার আগেই মিটিয়ে দিতে হবে ।
এর পাশাপাশি রায়ে স্যাট সুস্পষ্টভাবে আরও জানিয়েছে, ভিন রাজ্যে, দিল্লি, চেন্নাইয়ে নিযুক্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বৈষম্যমূলক । রাজ্য সরকারি কর্মী হিসেবে তাঁদের আলাদা কোনও স্তর নেই । তবে তাই বলে ডিএ বাবদ দেওয়া সেই বেশি টাকা ফেরত নেওয়াও যাবে না । ভবিষ্যতে তাঁদের ইনসেন্টিভ দেওয়ার ক্ষেত্রে হার নির্ধারণ করতে পারবে রাজ্য । রাজ্যে অথবা ভিন রাজ্যে নিযুক্ত রাজ্য সরকারি কর্মী, সকলের ক্ষেত্রেই ডিএ হতে হবে সমহারে ।
ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের আইনসঙ্গত অধিকার বলে গত বছর ৩১ আগস্ট রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট স্যাটকে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-র হার নির্ধারণ করতে বলে । রাজ্য সরকারি কর্মচারিরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সমহারেই ডিএ পাবেন কিনা ? স্টেট অ্যডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালকে তা স্থির করতে বলা হয় । এরপর গত বছর ১৫ অক্টোবর ডিএ মামলার শুনানি শেষ হয়ে যায় স্যাটে । কিন্ত এর পর আবার রাজ্যের তরফে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে বিশেষ শুনানির আবেদন করা হয় হাইকোর্টে ।
রাজ্যের সরকারি কর্মচারিদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভমেন্ট এমপ্লয়িজ’-এর সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বকেয়া ডিএ নিয়ে ২০১৬ সালে মামলা করেছিলেন স্টেট আডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা স্যাটে । স্যাট রায় দেয়, ডিএ হল রাজ্য সরকারের দয়ার দান । সরকার চাইলে তা দিতে পারে । স্যাটের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ওই সংগঠন কলকাতা হাইকোর্টে আপিল মামলা করে । মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত হয় রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্মচারীর করা আরও একটি মামলা । এ ছাড়া রমাপ্রসাদ সরকার নামে এক আইনজীবী সরকারি কর্মচারিদের ডিএ পাওয়ার অধিকার নেই বলে আরও একটি মামলা করেন ।
প্রথমে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে শুরু হয় ডিএ-র আপিল মামলার শুনানি । পরে তা যায় বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে । মলয় মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি শুনানির শুরু থেকে বিভিন্ন নথি কোর্টের কাছে তুলে ধরে বোঝান, ডিএ পাওয়ার আইনগত অধিকার রয়েছে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের । কারণ এই নিয়ে সরকার রুল আনে । ফলে তা কখনওই সরকারের দয়ার দান হতে পারে না । ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট ডিএ মামলায় রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । বলে ডিএ হল সরকারি কর্মচারীদের আইনগত অধিকার । বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ স্যাটের রায়ের সমালোচনা করে কোর্ট গাইডলাইন বেঁধে দেয় স্যাটকে ।
এজন্য কলকাতা হাইকোর্ট বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও শেখর ববি শরাফের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করে । কিন্ত ডিভিশন বেঞ্চ চলতি বছরের ৮ মার্চ ডিএ মামলায় রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয় । স্যাটকেই আবার বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয় । সেটারই শুনানি শেষ হয় ১৮ জুন । শুনানির সময় ১২ জুন রাজ্য সরকার স্যাটে জানিয়েছিল রাজ্যের তহবিল নেই তাই ডিএ দিতে পারছে না । রাজ্যের তরফে আইনজীবী অপূর্ব লাল বসু জানান, ‘ডিএ দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে ডিএ দিতে পারছে না রাজ্য । কেন্দ্র সরকারও অসহযোগিতা করছে । কারণ সেন্ট্রাল ফিনান্সিয়াল রেসপন্সিবিলিটি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল অনুয়ায়ী রাজ্য ৩ শতাংশের বেশি ধার নিতে পারবে না । ফলে কেন্দ্রের থেকে রাজ্য ধার নিতে পারছে না । সেই জন্য ডিএ দেওয়ার সমস্যা হচ্ছে’।
সেই যুক্তি খারিজ করে কর্মচারিদের তরফে আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি ও ফিরদৌস শামিম পাল্টা সওয়াল করেন । বলেন, ‘এর সাথে ডিএ-এর কোনও সম্পর্ক নেই । ডিএ সম্পূর্ণ মূল্যবৃদ্ধির সাথে যুক্ত । এই সব যুক্তি দেখিয়ে আসলে রাজ্য এড়িয়ে যেতে চাইছে । দিনের পর দিন মূল্যবৃদ্ধি হলেও রাজ্য সেই অনুপাতে মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি করেনি’। আজ স্যাটের রায়ে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ে ন্যায্য দাবি আদায় করে নিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা ।
২০১৭ সাল থেকে কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চালাচ্ছে একাধিক কর্মী সংগঠন । কংগ্রেসের ছাতার তলায় থাকা সংগঠন কনফেডারেশনের তরফে যে মামলা করা হয়েছিল, সেই মামলার রায়ই ঘোষিত হচ্ছে শুক্রবার । ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতেই ডিএ সংক্রান্ত দাবি নিয়ে স্যাটের দ্বারস্থ হয়েছিল কনফেডারেশন । কিন্তু স্যাট সে সময় মামলাটি শুনতেই চায়নি । শুরুতেই মামলাটি খারিজ করে দেয় । স্যাটে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ২০১৭ সালেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কর্মী সংগঠনটি ।
এর আগে ভিন রাজ্যে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গ সরকারারে কর্মীরাও এরাজ্যে কর্মরতদের থেকে বেশি ডিএ পেয়ে থাকেন বলে হাইকোর্টে জানান আবেদনকারীরা । এমন দৃষ্টিভঙ্গি বৈষম্যমূলক বলেও উল্লেখ করা হয় । এরপরই ২০১৮ সালের ৩১ অগস্টের রায়ে মহার্ঘ ভাতাকে সরকারি কর্মীদের আইনি অধিকার হিসাবে উল্লেখ করে বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ । একই সঙ্গে এই মামলাটি দু’মাসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার জন্য স্যাটকে নির্দেশ দেয় আদালত । কলকাতা হাইকোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে রাজ্য সরকার । সরকারের তরফে বলা হয়, ‘এই নির্দেশ দেওয়ার অধিকার হাইকোর্টের নেই’।
২০১৮ সালেই হাইকোর্ট জানায় যে, ডিএ হল কর্মীদের অধিকার । রাজ্য সরকারের তরফে তার আগে হাইকোর্টকে বলা হয়েছিল, ডিএ কোনও অধিকার নয়, ডিএ সরকারের ইচ্ছাধীন । কিন্তু হাইকোর্ট স্পষ্ট জানায়, ডিএ কোনও দয়ার দান নয়, ন্যায্য অধিকার । তবে বছরে ক’বার ডিএ দেওয়া হবে, কী হারে দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের ভার ফের স্যাটের হাতেই ছেড়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়ে ফের বিষয়টি নিয়ে শুনানি শুরু করে স্যাট । কিন্তু মামলা চলাকালীনই রাজ্য সরকার ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় । হাইকোর্টকে তার রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয় সরকারের তরফে । সে সময়ে স্যাটের শুনানি ফের বন্ধ হয়ে যায় । রাজ্য সরকারী আইনজীবিরা আবেদন জানিয়েছিলেন, হাইকোর্টে যে হেতু ফের মামলাটি উঠেছে, সে হেতু স্যাটে শুনানি বন্ধ থাক ।
হাইকোর্ট অবশ্য আগের রায় বদলায়নি । ডিএ যে কর্মীদের অধিকার, সেই পর্যবেক্ষণ থেকে পিছিয়ে আসতেও বিচারপতিরা রাজি হননি । ফলে ফের স্যাটেই ফেরে মামলা। সে মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল আগেই।
এদিকে, সব দেওয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “আমার পক্ষে আর দেওয়া সম্ভব নয়। তোমরা সবসময়ই এই দাও, ওই দাও করছ। সবটাই সরকার যেন বিনা পয়সায় করে দেবে!” ডিএ মামলায় স্যাটের রায়ের বেরনোর পরই মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক সভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, আজ রায় দিয়ে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল স্পষ্ট জানিয়েছে, রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে। এইজন্য ৩ মাসের মধ্যে রাজ্যকে নয়া আইন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক বছরের মধ্যে ডিএ সংক্রান্ত সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে স্যাট।
স্যাটের রায় শোনার পরেই রাজ্য কো-অডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী হিন্দুস্থান সমাচারকে জানান, ‘দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা পাওয়ার অধিকারকে মান্যতা দিল স্যাট । কর্মচারিদের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামকে মর্যাদা দিয়ে বামফ্রন্ট সরকার যে অধিকার দিয়েছিল, বর্তমান রাজ্য সরকার বার বার সেই অধিকারের উপর আক্রমণ করেছে। কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা দাবি করায় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কর্মচারিদের ‘ঘেউ ঘেউ করবেন না’ বা ‘ কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা পেতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারে কাজ করুন’ এই ধরনের উক্তি করেছেন । যা কর্মচারীদের প্রতি চরম বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই নয় । এই রায় কার্যত মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকেই চ্যালেঞ্জ জানাল । আমরা মনে করি লড়াই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে অধিকার অর্জিত হয়েছিল, সেই অধিকার কার্যকরী না হলে আমাদের লড়াই জারি থাকবে । অধিকার অর্জনে রাস্তায় নেমে লড়াই একমাত্র পথ’।
ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মিসমিতির (স্টিয়ারিং কমিটি) সাধারণ সম্পাদক সঙ্কেত চক্রবর্তী আজ বলেন, ‘আজকের আইনি রায় থেকে একটা জিনিস পরিস্কার, যে অধিকার এতদিন অর্জিত ছিল তার পূর্ণ বৈধতা রয়েছে । ২০১১ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় হার দেওয়া হত । অর্থাৎ, একটু দেরিতে হলেও বামফ্রন্ট সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ঠ দায়িত্ববান ছিলেন । চরম বঞ্ছনা শুরু হয় মূলত ২০১১-র পর থেকে। আশা করি, আজকের রায় থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার দ্রুত সরকারি কর্মীদের পাওনা মিটিয়ে দেবে । যদি তা না করে, আদালতেই কেবল নয় জনতার আদালতেও সরকারের মুখ পুড়বে’।
ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট পেনশনার্স অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লইজ ইউনিয়নের (নবপর্যায়) প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সমীর রঞ্জন মজুমদার হিন্দুস্থান সমাচারকে বলেন, ‘মহার্ঘ ভাতা বেতনের ক্ষতিপূরণ সারা ভারতবর্ষে স্বীকৃত। তাই কর্মচারিদের অধিকার । কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সমস্ত রাজ্য সরকার মহার্ঘ ভাতা দেয় । ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ সরকার । অতীতের বাম সরকার এবং বর্তমান সরকার আজ পর্যন্ত কোনও কিস্তির মহার্ঘ ভাতা প্রাপ্য দিন থেকে দেয়নি । এটা সরকারের স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিচয় । কেন্দ্রীয় হারে প্রতি কিস্তি মহার্ঘ ভাতা রাজ্য কর্মচারিদের পাওয়া উচিত । এই সহজ সত্যটা সরকারকে বোঝাতে প্রায় ৪ বছর ধরে আইনী লড়াই চালাতে হোল । এটা সত্যি দু’ভাগ্যজনক। আশা করি এই রায় ঘোষনার পর আর কালক্ষেপ না করে সরকার তার স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে এটি যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগী হবে’।