BRAKING NEWS

উৎসব থেকে নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠন ও জল সংরক্ষণের বার্তা বয়ে নিয়ে যেতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ জুলাই ৷৷ মেলা ও উৎসব মানেই একতা, জাতি-জনজাতির সব অংশের মানুষের মিলনকেন্দ্র, সম্পীতির মেলবন্ধন৷ পাশাপাশি মেলা হল নতুন চিন্তাধারার সমাহার, নতুন অভি’তা৷ এর সংমিশ্রণে নতুন কিছু স’ষ্টি৷ আজ পুরাতন আগরতলায় চতুদর্শ দেবতা বাড়ি প্রাঙ্গণে ক’ষ্ণমালা মুক্ত মে’ সাতদিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খার্চি উৎসব ও প্রদর্শনীর সূচনা করে এই কথাগুলি বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, রাজন্যকাল থেকেই চিরাচরিত নিয়মানুসারে প্রতিবছর এই মেলা নতুন কিছু বার্তা বয়ে আনে৷ এবছরের খার্চি উৎসব ও মেলা থেকে যে বার্তাটি আমাদের বয়ে নিয়ে যেতে হবে তা হল নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠন এবং জল সংরক্ষণ৷


তিনি বলেন, সুু-শ’ঙ্খল সমাজব্যবস্থাই একটা সুুন্দর, সুুষ্ঠ, সম’দ্ধশালী রাজ্য বা রাষ্ট্র গঠন করতে পারে৷ শ’ঙ্খলাপরায়ণ না হলে কোন রাজ্য বা রাষ্ট্র কোন দিনই সর্বশ্রেষ্ঠ হতে পারে না৷ বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ত্রিপুরাকে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা৷ এরজন্য আমাদেরকে অবশ্যই সুু-শ’ঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর এই খার্চি মেলায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয়েছিল৷ কিন্তু কোন ধরণের একটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি৷ এর থেকেই বোঝা যায় ত্রিপুরার মানুষ কতটা সুু-শৃঙ্খল৷ তিনি বলেন, সুুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই ধরণের মেলাগুলির প্রাসঙ্গিকতা যেমন রয়েছে, পাশাপাশি এই মেলাগুলির বাণিজ্যিক দিকও রয়েছে৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে৷ মানুষ অনেক আশা ভরসা নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছে৷ সম’দ্ধ ত্রিপুরা গড়তে মানুষের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়িত করতে সরকার পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে সরকারি চাকুরি ক্ষেত্রে স্বচ্ছ নিয়োগনীতি চালু করা হয়েছে৷
শিল্প ক্ষেত্রে সিঙ্গেল উইণ্ডো সিস্টেম চালু করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রেও ত্রিপুরায় শিল্প গড়তে উদ্যোগীরা এক টেবিলে গিয়েই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাবতীয় সুুযোগ পেতে পারেন৷ বিভিন্ন কার্যালয়ে নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের জন্য ঘুরতে হবে না৷ পারদর্শিতার ভিত্তিতেই শিল্প গড়ে তোলার সুুযোগ পাবেন৷ তিনি বলেন, আগে তো এধরণের কোন সুুযোগ ছিল না৷ গত ৩০-৩৫ বছর ধরে ত্রিপুরাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন পরিকল্পনাই ছিল না৷ রাজ্যের জি ডি পি’র হার বাড়ানোর কোন চিন্তাভাবনাও ছিল না৷ বর্তমান সরকার ত্রিপুরাকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প সবদিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে৷মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার


প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর জল সংরক্ষণে এক বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন৷ তিনি চাইছেন ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতবর্ষের প্রতিটি পরিবারের কাছে পাইপ লাইনে পরিশোধিত জল পৌঁছে দিতে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা সরকারও কয়েক মাস আগে ’অটল জলধারা’ নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছে৷ প্রতিটি পরিবারে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই সরকার এই প্রকল্পটি চালু করেছে৷ পাইপ লাইনে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিলে জলের অপচয়ও বন্ধ হবে৷ পাশাপাশি এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব’ষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য বাঁধ নির্মাণ করার সংস্থানও রয়েছে৷ পাইপ লাইনে বিশুদ্ধ পানীয়জল সরবরাহ করলে মানুষের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনাও কম হবে৷ প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, নতুন ত্রিপুরা গড়ে তুলতে হলে সবাইকে একসাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে৷ ব্যক্তির মধ্যে অহংকার থাকা উচিত নয়৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন খার্চি উৎসব ও মেলা আমাদের সকলকে একসাথে মিলে মিশে কাজ করার বার্তা দিয়ে যাবে যাতে সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় সম’দ্ধশালী ত্রিপুরা গঠন করা যায়৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মা বলেন, আষাঢ় মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে প্রতিবছর চতুর্দশ দেব-দেবীর সপ্তাহব্যাপী পূজা পার্বন ও মেলা হয়৷

সারা বছর ধরে এই বিশেষ পুণ্য তিথির জন্য মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন৷ তিনি বলেন, খার্চি মেলা ত্রিপুরার ঐতিহ্য৷ এই মিলন মেলার মধ্যে দিয়ে এই ঐতিহ্য আরও সুুদ’ঢ় হোক৷ চতুর্দশ দেবতার আর্শিবাদে সামগ্রিক মানব সমাজের কল্যাণ সাধিত হোক৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিধায়ক তথা খার্চি মেলা কমিটির চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী৷ বক্তব্যের শুরুতেই তিনি খার্চি মেলাকে সুুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সকল সরকারি দপ্তর ও অন্যান্যরা যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান৷ পাশাপাশি সাতদিন ব্যাপী মেলার সাংস্ক’তিক অনুষ্ঠান ও মেলার ঐতিহাসিক দিকও তিনি তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, গত বছর থেকে এই মেলাকে একটা নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, সাতদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই মেলা ভারতের উত্তর পূর্বা’লের মধ্যে অন্যতম৷ এ বছর মেলার থিম নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার শপথ ও জল সংরক্ষণ৷ মেলায় সাংস্ক’তিক আকর্ষণ সম্পর্কেও তিনি সকলকে অবগত করেন৷ তিনি বলেন, এবছর ভারতের উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির ৯০ জন শিল্পী ছাড়াও দেশের বাইরে থেকে ১৩ জন শিল্পী অংশ নেবেন৷ ত্রিপুরার স্থানীয় শিল্পীরাও অংশগ্রহণ করবেন৷ থাকছেন সৌরভী দেববর্মা ও নীহারিকা৷ তিনি বলেন, সাংস্ক’তিক মে’ সব অংশের শিল্পীদের জন্যই অংশগ্রহণের সুুযোগ থাকছে৷

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে৷ সবশেষে তিনি সাতদিন মেলাকে সর্বাঙ্গীন সুুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য সকলের সহযোগিতা আহ্বান করেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মে’ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সুুশান্ত চৌধুরী, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ড. প্রফুল্লজিৎ সিনহা৷ এছাড়াও অনুষ্ঠানে পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা ড. সন্দীপ এন মহাত্মে, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুুপার, সদর ও জিরানীয়া মহকুমার মহকুমা শাসক, পুরাতন আগরতলা ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন৷ মেলায় বিভিন্ন দপ্তরের উদ্যোগে ৩৩টি স্টল খোলা হয়েছে৷ এই স্টলগুলিতে বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক প্রদর্শনী ও পরিকল্পনা প্রদর্শিত করা হয়েছে৷

এছাড়াও মেলায় পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে জনজাতিদের চিরাচরিত খাদ্য উৎসব উপলক্ষে ১০টি স্টলে রকমারি খাদ্যের আয়োজন থাকবে৷ মেলায় ৮০০ এর বেশী দোকানি/ব্যাবসায়ী বিভিন্ন দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বলে জানান, পুরাতন আগরতলা ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী খার্চি মেলা সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইট এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন৷ এছাড়া তিনি খার্চি মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত মরণিকা ’হাবেলী’-এর মলাট উন্মোচন করেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিগণ প্রদর্শনী স্টলগুলির দ্বার উন্মোচন করে স্টলগুলি ঘুরে দেখেন৷ পরে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিগণ চতুর্দশ দেবতার পূজাস্থলে গিয়ে আর্শিবাদ নেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *