বেঙ্গালুরু, ৮ জুলাই (হি.স.) : : কর্ণাটকে রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে উত্তপ্ত লোকসভা। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এর পেছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছেন তিনি। কংগ্রেসের এমন দাবির বিরোধীতা করেন বিজেপির নেতা তথা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। কর্ণাটকে কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট সরকারে যে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে তাতে কোনও ভাবেই বিজেপি জড়িত নয়। সোমবার এমনই দাবি করলেন বিজেপি নেতা রাম মাধব।
কর্ণাটকে বিধায়কদের পর এবার ইস্তফা দিলেন ২১ জন কংগ্রেস মন্ত্রী। তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছে বলে সোমবার জানিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া। ইস্তফা দেওয়া বিধায়কদের ফিরে আসতে বললেন কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল। শনিবার বিধায়ক পদ ইস্তফা দেন ১০ কংগ্রেস বিধায়ক। অন্যদিকে জেডি(এস) থেকে ইস্তফা দেয় আরও তিনজন বিধায়ক। এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট সরকারকে বাঁচানোর জন্য বিক্ষুব্ধদের ফিরে আসার আহ্বান জানালেন কে সি বেণুগোপাল। কর্ণাটকে কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট সরকারে সঙ্কট নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। নিজের দোষের জন্য কর্ণাটকে ডুবছে কংগ্রেস বলে ট্যুইটারে দাবি করেছেন তিনি। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দাবি করেছেন, সরকারের স্থায়িত্বতা নিয়ে কোনও প্রকার সংশয় নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলেছে কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত এইচ ডি কুমারস্বামী। সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনই জানালেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারলে বিরোধী বেঞ্চে বসবে কংগ্রেস। কর্ণাটকে রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন কংগ্রেস সাংসদ সইদ নাসের হুসেন। মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর মন্ত্রিসভা পুনর্বিবেচনার জন্য সোমবার ইস্তফা দিলেন কর্ণাটকের নয় জেডি(এস) মন্ত্রী। এদিন মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের ২১ জন মন্ত্রীর ইস্তফা দেওয়ার পর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সকল জেডি(এস) মন্ত্রী। কংগ্রেসের পর জেডি(এস)-এর মন্ত্রীদের ইস্তফার পরই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি টুইট করে জানান হয়, “২১ জন কংগ্রেস মন্ত্রীর পর সব জেডি(এস) মন্ত্রীও পদত্যাগ করেছেন। শীঘ্রই মন্ত্রিসভা পুনর্গঠিত হবে।”
এদিন লোকসভার জিরো আওয়ারে অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, দল ভাঙানোর খেলায় মেতেছে বিজেপি। এমন পদক্ষেপ সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী। ৩০০ আসন পেয়েও পেট ভরেনি বিজেপির। অধীর রঞ্জন চৌধুরীর এমন দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে বিজেপির কিছু না। অধিবেশন কক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন, পদত্যাগ করার সূচনা শুরু করেছিলেন রাহুল গান্ধী নিজে। তারপর একের পর এক কংগ্রেস নেতা দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে কংগ্রেসের তরফে এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং জি কিষাণ রেড্ডির বিবৃতি দাবি করেন। এদিনের বিতর্কে অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধী।
সম্প্রতি নিজের কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট সরকারে ১৩ জন নেতা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। তা নিয়ে সরকারের অন্দরে তৈরি হয়েছে জটিলতা। এমনকি সরকারের স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সোমবার রাম মাধব বলেন, কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কিছু নেতার ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কর্ণাটকে। দলের ভেতরেই বিক্ষুদ্ধ বিধায়কদের তৈরি করেছে কিছু নেতা। এতে বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই। কিন্তু গোটা পরিস্থিতির উপর যে বিজেপি নজর রাখছে তা স্পষ্ট করে দেন তিনি। জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকার গড়েছে কংগ্রেস-জেডি(এস)। তাদের অভ্যন্তরীণ মতানৈক্যের জেরেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর আগে এদিন কংগ্রেসের ২১ জন মন্ত্রী ইস্তফা দেন।
শনিবার রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেস এবং জেডি(এস)-এর ১৩ জন বিধায়ক ইস্তফা দেন। তার ফলে জোর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয় রাজ্য রাজনীতিতে। এদিন আরও ২১ জন কংগ্রেস মন্ত্রী স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেন। ফলে মন্ত্রিসভা পুননির্মাণ করার সুযোগ পেয়ে গেল কংগ্রেস। এদিন সিদ্দারামাইয়া বলেন, সমাজের সকল স্তর থেকে উঠে আসা জনপ্রতিনিধি মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হবে। এদিন ২১ মন্ত্রীদের মধ্যে উপ-মুখ্যমন্ত্রীও রয়েছে।
রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা জেরে আমেরিকা সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। দল ছাড়া বিধায়কদের তাঁদের বুঝিয়ে দলে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চলাকালীন আরও একটা ধাক্কা খেলেন কুমারস্বামী। এ দিন সকালেই ইস্তফা দেন রাজ্যেরই এক মন্ত্রী তথা নির্দল বিধায়ক নাগেশ। তিনি বিজেপিকে সমর্থণ করবেন বলে জানিয়েছেন। নির্দল বিধায়ক নাগেশের ইস্তফা প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা শিবকুমার বলেন, চাপে পড়েই ইস্তফা দিয়েছেন নাগেশ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। আমরা ওঁর সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছি। এ দিকে, কংগ্রেস ও জেডিএস-এর যে সকল বিধায়ক মুম্বইয়ের হোটেলে উঠেছেন, তাঁদের উপর কড়া নজরদারিও শুরু হয়ে গিয়েছে। হোটেলের বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে বিধায়কদের। উল্লেখ্য, কর্ণাটকে রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে লোকসভায় সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। গোটা বিষয়টির জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে এতে বিজেপির কোনও হাত নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন রাজনাথ সিং।
এদিন কে সি বেণুগোপাল বলেন, নিশ্চিত ভাবেই তারা ফিরে আসবে এবং সরকার যেমন চলছিল তেমনই চলবে। অন্যদিকে এর আগে যে ২১ জন কংগ্রেস স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেছেন তাদের এই ত্যাগকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া। এই প্রসঙ্গে সিদ্দারামাইয়া বলেন, ২১ জন মন্ত্রী নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির অগণতান্ত্রিক মনোভাবকে ব্যর্থ করেছে। তাদের আত্মত্যাগকে কুর্ণিশ জানাই। বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিদ্দারামাইয়া বলেন, তাঁরা ফিরে আসবেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আমরা প্রস্তুত।
কে সি বেণুগোপাল আরও বলেন, বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। নিষ্ঠাবান এবং অনুগত নেতারা ফিরে আসবেন। আইনানুগ সহ অন্যান্য পদক্ষেপ বিজেপির বিরুদ্ধে নেওয়া হবে।
এদিন গিরিরাজ সিং ট্যুইটারে লেখেন, গান্ধী পরিবারের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে ভুগতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। ১৮টি রাজ্য সহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কংগ্রেসের কোনও সাংসদ নেই। এখন কর্ণাটকও হাত ছাড়া হতে চলেছে। যে জাহাজ থেকে ক্যাপ্টান রাহুল গান্ধী ঝাপ দিয়েছেন সেখানে বাকিরা কি করে টিকবে? কর্ণাটকে কংগ্রেস নিজের ভুলে জন্য ডুবছে আর তাই তাদের সদস্য নিজেদের ভুল সংশোধন করতে ব্যস্ত।
অন্যদিকে, আমেরিকা থেকে রবিবার ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুমারস্বামী বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত নই। রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। মসৃণ ভাবেই এই সরকার চলবে।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বি এস ইয়েদুরাপ্পা বলেন, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলেছে কংগ্রেস-জেডি(এস)। তাই ক্ষমতায় থাকার কোনও নৈতিক অধিকার তাদের নেই। তাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। জনগণও তাই চাইছে। মঙ্গলাবার মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ দেখাবে বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সইদ নাসের হুসেন বলেন, কংগ্রেস এবং জেডি(এস) দুই দলই নিজেদের সমস্ত মন্ত্রীদের ইস্তফা দিতে বলেছে। আগামী তিন-চারদিনে ফের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। পুরনো মন্ত্রীরা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন কিনা জানি না। আগামী চার বছর এই সরকার টিকবে বলে আশা প্রকাশ করছি। বিধানসভায় জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারলে বিরোধী আসনে বসবে কংগ্রেস।
কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য বিজেপিকে দায়ী করে সইদ নাসের হুসেন বলেন, একজন জেডি(এস) বিধায়ক দাবি করেছে দলত্যাগী হওয়ার জন্য বিজেপির তরফে ৪০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ১০ থেকে ১২ জন বিধায়কদের যে বিমানে করে মুম্বই নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। বিজেপির যদি সত্যি সংখ্যা থাকে তবে তারা সরকার গঠন করুক। কিন্তু তারা জানে তাদের সেই সংখ্যাটা নেই তাই এমন করছে।
মন্ত্রীদের এই পদত্যাগের হিড়িক দেখে বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্ৰতিবাদে সরব হয়েছেন অন্যান্য কংগ্রেস-জেডি(এস) বিধায়ক এবং পার্টিকর্মীরা। কর্ণাটকে বিধায়কদের পর এবার ইস্তফা দিলেন ২১ জন কংগ্রেস মন্ত্রী ও ৯ জন জেডি(এস) মন্ত্রী। তাঁরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া। শনিবার রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেস এবং জেডি(এস)-এর ১৩ জন বিধায়ক ইস্তফা দেন। তার ফলে জোর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয় রাজ্য রাজনীতিতে। এদিন আরও ২১ জন কংগ্রেস মন্ত্রী স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেন। এমতাবস্থায় সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাওয়া কর্ণাটকের জোট সরকার বাঁচাতেই মন্ত্রীদের এই ইস্তফা বলে সূত্রের খবর। ইস্তফা দেওয়া কংগ্রেসের মন্ত্রীদের মধ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী জি পরমেশ্বরও রয়েছেন। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ’ বিধায়কদের মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে দল যদি তাঁদের ইস্তফা দিতে বলে, সকলেই ইস্তফা দেবেন। সোমবার সকালেই ইস্তফা দেন কংগ্রেসের সব মন্ত্রীরা। এদিকে, এদিন সিদ্দারামাইয়া বলেন, সমাজের সকল স্তর থেকে উঠে আসা জনপ্রতিনিধি মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হবে।