নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ জুলাই৷৷ সমাজ গড়তে হলে শিক্ষিত হওয়া খুবই প্রয়োজন৷ এই উপলব্ধি থেকেই ত্রিপুরায় প্রকৃত শিক্ষার খোঁজ শুরু হয়েছে৷ এই দাবি করে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে৷ তাই, শিক্ষকদের মধ্য থেকে ২৫০ জন প্রশিক্ষক খুঁজে বের করা হয়েছে৷ তাঁরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন৷ কারণ, রাজ্যে ১ লক্ষ ৮০ হাজার দুর্বল ছাত্রছাত্রীকে চিহিণত করা হয়েছে৷ তাদের ক্লাসের উপযোগী করে তুলতে হবে৷
মঙ্গলবার আগরতলায় শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে৷ তাতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের রোডম্যাপ এঁকে দিয়েছেন দফতরের পদস্থ আধিকারিকরা৷ এ-বিষয়ে এসসিআরটি দফতরের অধিকর্তা বিশ্বজিৎ গুপ্ত বলেন, ত্রিপুরায় সরকারি বিদ্যালয়ে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লক্ষ ৮০ হাজার দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের চিহিণত করা হয়েছে৷ তাঁদের ক্লাসের উপযোগী করে তোলাই এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ তবে এই পরীক্ষায় আমাদের সাফল্য অর্জন করতেই হবে৷
বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা ইউকে চাকমা জানান, আজকের কর্মশালায় ২২৬ জন কি-রিসোর্স পার্সন (এনসিইআরটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক) অংশ নিয়েছেন৷ তাঁরা রাজ্যের ১৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেবেন৷ তাঁর কথায়, ১ লক্ষ ৮০ হাজার দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের পুরো তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷ তাদের দুর্বলতাও চিহিণত করা গিয়েছে৷ সাথে যে শিক্ষকদের ওই ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব দেওয়া হবে তা-ও চিহিণত করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, সাধনা ও প্রেরণা, এই দুটি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসের উপযোগী করে তুলার লক্ষ্য নিয়েছে শিক্ষা দফতর৷
তিনি মনে করেন, তিন মাসের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে৷ সে-ক্ষেত্রে প্রথমে ১৭ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ মূলত, ছাত্রছাত্রীদের দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি নিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ এর পর ওই শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের দুর্বলতা দূর করবেন, বলেন ইউ কে চাকমা৷ তিনি আরও জানান, শিক্ষকদের মধ্য থেকেই অ্যাকাডেমিক লিডার বাছাই করা হবে৷ তাঁদেরকে ৫-৮টি বিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেবে শিক্ষা দফতর৷
আজকের কর্মশালায় শিক্ষা দফতরের সচিব সৌম্যা গুপ্তা বলেন, সম্প্রতি ত্রিপুরায় ৩০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে৷ ফলে, এখন ১৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া কঠিন কাজ হবে বলে মনে করি না৷ সে-ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ এবং দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসের উপযোগী করে তোলার চ্যালেঞ্জ আমাদের নিতেই হবে, বলেন তিনি৷
কর্মশালায় উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই উদ্যোগ সম্পর্কে নিজেদের মতামত দিয়েছেন৷ প্রত্যেকেই এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও নানা সমস্যাও যে রয়েছে তা-ও তুলে ধরেছেন তাঁরা৷ তাঁদের মতে, বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতি এই কর্মসূচির সফলতায় অন্যতম প্রধান বাধা৷ কারণ, যারা বিদ্যালয়ে আসছে তাদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে৷ কিন্তু, এমন অনেক ছাত্রছাত্রী রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত বিদ্যাসয়ে উপস্থিত থাকে না৷ এছাড়াও কিছু সমস্যা রয়েছে যেগুলি সমাধান না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচিকে সফল করা সম্ভব হচ্ছে না৷
এ-বিষয়ে শিক্ষাসচিব বলেন, বিদ্যালয়গুলিতে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের সঠিকভাবে পড়ানো হয়নি, এ-কথা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ তাই, তাদের শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি পথ খুঁজে বের করতে হবে৷ তাতে প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেবে ত্রিপুরা সরকার৷
শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথও শিক্ষাসচিবের সাথে একমত হয়ে বলেন, শিক্ষকদের যোগ্যতায় ঘাটতি রয়েছে তা কোনওভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ বরং, নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে শিক্ষকরাই হলেন সমস্ত অসাধ্য সাধনের একমাত্র কাণ্ডারি৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর বিরাট ঝুঁকি নিয়ে এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়েছে৷ তাতে শিক্ষকদের কৃতিত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই৷ তিনি বলেন, সারা দেশে এখন ত্রিপুরাকে মডেল হিসেবে দেখানো হয়েছে৷ কারণ, এত অল্প সময়ে এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু ভীষণ কঠিন ব্যাপার৷ তাই, তিনি শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ করেন, শিক্ষায় ত্রিপুরাকে উচ্চতার চরম শিখরে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিন৷
শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষক খুঁজে বের করা হয়েছে৷ কারণ, ১ লক্ষ দুর্বল ছাত্রছাত্রীকে ক্লাসের উপযোগী করে তুলতে হবে৷ তিনি জানান, আগামী ৫ জুলাই থেকে ১৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে৷ প্রথম ধাপে ৫ জুলাই থেকে ৯ জুলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ তারপর আবার ১১ জুলাই থেকে পুনরায় প্রশিক্ষণ শুরু হবে৷ তাঁর দাবি, এই প্রথম ত্রিপুরায় এ-ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তাতে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷