নিজস্ব প্রতিনিধি, চুড়াইবাড়ি, ১ জুলাই৷৷ রাজ্য থেকে বহিঃ রাজ্যে নারী পাচার কান্ড নতুন কোনো বিষয় নয়৷ একের পর এক রাজ্যের মেয়ে থেকে শুরু করে নারীরাও যে অর্থের বিনিময়ে পাচার ও প্রেমের ফাঁদে পড়ে বহিঃ রাজ্যে বিবাহ হয়েছে তার নজির ভুরি ভুরি রয়েছে৷ আর তাতে এক শ্রেণীর দালাল চক্র রাজ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলছে৷ তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল উত্তর জেলার কদমতলা থানাধীন কালাগাঙ্গের পাড় এলাকায়৷
কালাগাঙ্গের পাড় এলাকাযর ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিনারা বেগম স্বামী মৃত মইন উদ্দিন নিজ বাড়ি থেকে কদম তলা হেঁটে যাচ্ছিল তখন পাশের ভিতরগুল গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রশিদ আলী ওরফে বটুল তার অটো গাড়িতে তুলে ওই মহিলাকে৷ এমনকি মিনারা বেগমকে পানের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে৷ যখন ওই মহিলার জ্ঞান ফিরে আসে তখন সে দেখতে পায় ওই মহিলার দিল্লিতে রয়েছে এমনটা মহিলার অভিযোগ৷ তারপর দুটি লোক তাকে বলপূর্বক দিল্লি থেকে রাজস্থানের রিঞ্জার খানি গ্রামে নিয়ে যায়৷ সেখানে অনেক দুঃখে কষ্টে দুই বছর কাটায় মিনারা বেগম৷ মিনারা বেগম সেখানে ঐ দুই ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে ওরা বলে বটুল নাকি ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার বিনিময় ওদের কাছে বিক্রি করেছে৷সেখানে সুরেশ খান নামের এক যুবকের সাথে তার বলপূর্বক বিয়ে হয় এবং একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে৷
কিন্তু মিনারা বেগম তার কালা গাঙ্গের পার নিজ বাড়িতে তিনটি সন্তান রেখে গিয়েছে বলে তার মন ছটফট করতে থাকে৷ অবশেষে মিনারা বেগম অনেক বুদ্ধিমত্তার সহিত এক বছরের মেয়েকে রাজস্থান রেখে গত ১৮ জুন কালা গাঙ্গেরপাড় নিজ বাড়িতে চলে আসে৷ তারপর কদমতলা থানায় রশিদ আলী ওরফে বটুলের নামে একটি মামলা দায়ের করে৷ কদমতলা থানার পুলিশ ৩৬/১৯,৩৬৬/৩৪ আইপিসি ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারায় মামলা রুজু করে নারী পাচারকারী রশিদ আলী ওরফে বটুলকে গ্রেপ্তার করে৷ আদালতে প্রেরণ করে৷ সাথে তার টি আর ০২এ/২৫২৩ নম্বরের অটোটি আটক করে পুলিশ৷ এই খবর চাউর হতেই কদমতলা থানাধীন ইচাইটুল গাও গ্রামের মস্তর আলী পিতা মৃত ছাদির মিয়া কদমতলা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন যে, ৮ বছর পূর্বে উনার বোন অর্থাৎ বটুলের প্রথম স্ত্রী হাসনা বেগমকে উনার ইচাই টুলগাও এলাকা থেকে অটোতে তুলে নিয়ে যায় উনার বোন জামাই রশিদ আলী ওরফে বটুল৷তারপর থেকে উনার বোনকে আর কোথাও খুঁজে পাননি৷
তাই মস্তর আলীও দাবি করছেন উনার বোনকে টাকার বিনিময়ে ওই বটুল কোথায় বিক্রি করে ফেলেছে৷ এদিকে আজ কালা গাঙ্গের পার ৫ নং ওয়ার্ডের মিনারা বেগমের নিজ বাড়িতে সরজমিন তদন্তে যান রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী৷ উনি মিনারা বেগমের বাড়িতে গিয়ে কথা বলে জানতে পারেন যে মিনারা বেগম ২ বছর পূর্বে ওই বটুলের খপ্পরে পড়ে রাজস্থান বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন৷ তারপর অনেক বুদ্ধিমত্তার সহিত সে পুনরায় বাড়িতে ফিরে এলে ও তার তিনটি মেয়ে সন্তানকে আর পায়নি৷ বর্ণালী গোস্বামী জানান, রাজ্য মহিলা কমিশন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় ও নারী পাচার চক্রের সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানায়৷পাশাপাশি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী আরো জানান, আমাদেরকে কন্যা ভ্রুণ হত্যা বন্ধ করতে হবে৷ কন্যাভ্রূণ হত্যার কারণে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা কমে গিয়েছে৷ আর সেই কারণেই নারী পাচার হচ্ছে৷ তাই আমাদেরকে কন্যা ভ্রুণ হত্যা বন্ধ করতে হবে না হলে এই নারী পাচার চক্র নির্মূল করা সম্ভব নয়৷