নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুলাই৷৷ চিকিৎসকদের জীবনদাতা হিসেবে মানি আমরা৷ তাদেরকে সম্মান করা আমাদের দায়িত্ব৷ আজ জাতীয় চিকিৎসক দিবস উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, চিকিৎসকদের সম্মান করাই আমাদের পরম্পরা৷ এটা যেন কোনওভাবেই নষ্ট না হয় সেদিকে সরকারের যেমন নজর রয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষকেও দায়িত্ব নিতে হবে৷ চিকিৎসকদের সম্মান করতে হবে৷ পাশাপাশি রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদেরও আন্তরিকতার যেন ঘাটতি না হয় সেদিকটা চিকিৎসকদেরও লক্ষ্য রাখতে হবে৷ রোগীদের সমস্যা ভালো করে শুনে তাদের সঠিক পরামর্শ দিতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে চিকিৎসকদের ঘাটতি রয়েছে৷ তাছাড়া চিকিৎসকদের পদোন্নতি ও বদলি বিষয়েও ব’না রয়েছে৷ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার চিকিৎসকদের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল৷ চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলে নিরাশা আসবে৷ কাজকর্মে তার প্রভাব পড়তে পারে৷ তারজন্য চিকিৎসকদের কাজ করার ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর৷ চিকিৎসকদের প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে নিজেদের পারদর্শী করে তুলতে হবে৷ কার চেয়ে কে ভালো পরিষেবা দিতে পারে সেদিকে লক্ষ্য দিতে হবে৷ নিজেদের অভি’তা কিভাবে অধিক থেকে অধিকতর করা যায় সেদিকটায় ভাবতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরাকে মেডিক্যাল হাব হিসেবে গড়ে তোলা সরকারের লক্ষ্য৷ ত্রিপুরায় সেই সম্ভাবনা রয়েছে৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে৷
তিনি বলেন, ত্রিপুরার মানুষের একটা প্রবণতা রয়েছে বহির্রাজ্যে চিকিৎসা করানোর৷ অথচ ত্রিপুরাতেই এদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা সম্ভব৷ রোগীদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে ত্রিপুরার মধ্যেই সংশ্লিষ্ট রোগটির চিকিৎসা করানো সম্ভব বলে রোগীদের মধ্যে সেই বিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে৷ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে সরকার ত্রিপুরার মধ্যেই যেন সব ধরনের রোগের চিকিৎসার সুুযোগ তৈরি করা যায় সেই দিশাতে কাজ করছে৷ এই ব্যবস্থা গড়ে উঠলে বাংলাদেশের প্রচুর রোগী যারা ত্রিপুরা হয়ে কলকাতা বা দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসার জন্য যান তারা ত্রিপুরা থেকেই সেই চিকিৎসার সুুযোগ নিতে পারবেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের গরীবদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুুযোগ করে দিয়েছেন আয়ুমান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে৷ এই প্রকল্পটি ত্রিপুরায় চালু রয়েছে৷ এছাড়াও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পে মানুষকে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন ভারত গড়তে চাইছেন৷ ত্রিপুরা সরকারও প্রধানমন্ত্রীর নতুন ভারত গড়ার ক্ষেত্রে নতুন দিশায় নতুন ভাবনায় কাজ করছে৷
বক্তব্যের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী যাঁর জন্মদিনে এই জাতীয় চিকিৎসক দিবস পালন করা হয় সেই প্রথিতযশা চিকিৎসক ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের মরণ করেন৷ অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতিক’তিতে পুপার্ঘ্য অর্পণ করেন৷ এদিনের সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিধায়ক ডা. দিলীপ কুমার দাস৷ উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায় ও বিধায়ক ডা. অতুল দেববর্মা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা ডা. শৈলেশ কুমার যাদব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. জে কে দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. এস কে চাকমা, মেডিক্যাল এডুকেশনের অধিকর্তা ডা. চিন্ময় বিশ্বাস৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডা. অনুরাধা মজমদার৷ ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. এস কে চাকমা৷
অনুষ্ঠানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবদানের জন্য ১৫ জন চিকিৎসককে পুরস্কার প্রদান করা হয়৷ অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী পর্ব শেষে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন৷