গুয়াহাটি, ১ জুলাই (হি.স.) : গুয়াহাটি ও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মধ্যে বিমান পরিষেবার শুভারম্ভ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তর্জাতিক উড়ান প্রকল্পের অধীনে গুয়াহাটি-ঢাকা বিমান পরিষেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে স্পাইসজেট বিমান সংস্থাকে। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি, শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত ভট্টাচার্য, মন্ত্রী ভবেশ কলিতা, বিধায়ক রমেন্দ্রনারায়ণ কলিতা, গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ অ্যাসিস্টেন্ট হাই কমিশনার শাহ মহম্মদ তানভির মনসুর, এমওসিএ সেক্রেটারি প্রদীপ সিংহ প্রমুখকে নিয়ে পতাকা নেড়ে সোমবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে স্পাইসজেট উড়ানের যাত্রা করিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গুয়াহাটির লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি পার্কিংস্থলে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় এক অনুষ্ঠান। বিমানযাত্রার শুভারম্ভ করে এই অনুষ্ঠানে বহু দর্শক-শ্রোতার সামনে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বলেন, সবে শুরু হল। এর পর সরকার নেপাল, ভুটান-সহ এশিয়ার সমস্ত রাজধানীকে গুয়াহাটির সঙ্গে সংযুক্ত করবে। তিনি আরও বলেন, গুয়াহাটি ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি উড়ানের ফলে কেবলমাত্র আকাশমার্গকেই সংযুক্ত করবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত সম্পর্ক আরও মজবুত হবে, ঘনিষ্ঠতা বাড়বে। এটি একটি বড় সেক্টর যার মাধ্যমে বৃহত্তর সমাজের উন্নতি ও বিকাশ হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাংকক, কাঠমুণ্ডু, কুয়ালালামপুর এবং রেঙ্গুন পর্যন্ত গুয়াহাটি থেকে বিমান পরিষেবা চালু করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্বের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সমগ্র উত্তরপূর্বের সঙ্গে কী ভাবে বঞ্চনা করা হয়েছে তার বর্ণনা করে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা উত্তরপূর্বের দ্রুত উন্নয়নের জন্য যে-সব দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন সে-সবের তথ্যও তুলে ধরেছেন।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক উড়ান সংযোগ প্রকল্প (ইন্টারন্যাশনাল এয়ার কানেকটিভিটি স্কিম সংক্ষেপে আইএসিএস)-এর অধীনে গুয়াহাটির সঙ্গে আসিয়ান তথা বিবিএন-এর দেশসমূহের রাজধানীর সাথে বিমান পরিষেবা শুরু করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ভায়েবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং-এর জন্য অসম সরকারকে তিন বছরের জন্য একশো কোটি টাকা করে প্রতি বছর প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটানোয় আজ অসমের কৃষকদের উৎপাদিত সামগ্রী কার্গো ফ্লাইট-এর দ্বারা সিঙ্গাপুর, আবুদাবির বাজারে উপলব্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে।
আজকের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার শাহ মহম্মদ তনভির মনসুর বলেন, আজ থেকে নতুন বিমান চালু হওয়ায় দু-দেশের সাথে সংযোগ স্থাপনে একটি ল্যান্ডমার্ক হবে। গুয়াহাটি এবং বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল করার ফলে পর্যটন, চিকিৎসা, শিল্প ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করেন তানভির মনসুর।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক বিমান সংযোগ প্রকল্পের এই প্রথম রূপায়ণ হচ্ছে অসমে। গুয়াহাটি থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রচারমূলক (প্রমোশনাল প্রাইস) ভাড়া হিসেবে প্রাথমিকভাবে ধার্য করা হয়েছে ৩,৩৫৫ টাকা। গুয়াহাটি থেকে ঢাকা এবং ব্যাংককের মধ্যে আকাশপথে আন্তর্জাতিক সংযোগ প্রকল্পের অধীনে যাতায়াতের জন্য গত জানুয়ারিতে অসম সরকারের সঙ্গে চু্ক্তিবদ্ধ হয়েছিল স্পাইজেট বিমান সংস্থা। রাজ্য সরকার এই দুই রুটে বিমান পরিষেবায় কার্যকারিতা বজায় রাখতে ১১ কোটি টাকা বার্ষিক তহবিল ধার্য করেছে বলে, জানা গেছে।
আইএসিএস-এর অধীনে স্পাইসজেট-এর গুয়াহাটি-ঢাকা বিমান প্রতিদিন বেলা ১১:৫৫টায় গুয়াহাটি থেকে ছাড়বে। ঢাকা পৌছবে মাত্র ৫৯ মিনিটে। এভাবে প্রতিদিন ঢাকা থেকে বেলা ১৪:১০ (স্থানীয় সময় ২-টো ১০ মিনিটে) ছাড়বে।
আজকের প্রথম গুয়াহাটি-ঢাকা বিমানে যাত্রী ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা, তাঁর অভিনেত্রী-পত্নী আইমি বরুয়া, চার বিধায়ক বড়খলার কিশোর নাথ ও ডিব্রুগড়ের প্রশান্ত ফুকন, নলবাড়ির অশোকশর্মা, দেড়গাঁওয়ের ভবেন্দ্রনাথ ভরালি-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকজন শীর্ষ আধিকারিক ও সাধারণ যাত্রী।