কর্তব্যে গাফিলতি দেখলেই স্বেচ্ছাবসরে পাঠানো হবে, সরকারি কর্মচারীদের কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ জুন৷৷ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি কোনও কর্মচারীকে কর্তব্যে গাফিলতি করতে দেখতে পাওয়া যায় তবে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ভলান্টিয়ারি রিটায়ারমেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷ তিনি আরও বলেন, কাজ করতে না চাইলে থাকতে হবে না৷ রাজ্যে বহু শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছেন, যাঁরা কাজ করতে আগ্রহী, তাঁদের কাজ করার সুযোগ দেবে সরকার৷


রবিবার মুখ্যমন্ত্রী এই বার্তা দিয়ে জানান, রাজ্যের সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থেকে শুরু করে ব্লকস্তরের আধিকারিকদের ফিল্ড ভিজিটে যেতে হবে৷ কেননা ফিল্ড ভিজিট না করলে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকে না আধিকারিকদের৷ উদাহরণ হিসেবে বলেন, গত দুদিন আগে উত্তর জেলার ধর্মনগরে একটি রিভিউ মিটিং করেছিলেন তিনি৷ তখন মুখ্যমন্ত্রীকে আধিকারিকরা জানান যে জেলায় বিদ্যুতের কোনও সমস্যা নেই৷ কিন্তু পরবর্তী সময় তিনি যখন সেখানে তাঁর গাড়ি চালককে জিজ্ঞাসা করেন যে ধর্মনগরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয় কিনা? তাঁকে চালক জানায় যে এখানে দিনে কম করে পাঁচবার লোডশোডিং হয়৷ তাই, যদি সরকারি কর্মীরা ফিল্ডে না যান তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা হবে না৷ তাঁরা জানতেই পারবেন না বাস্তবে কী চলছে৷ তাই এখন থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর বিভিন্ন দফতরে রিভিউ মিটিং হবে, সেখানে কোনও সরকারি কর্মচারীর কাজে গাফিলতি ধরা পড়ে তবে তাকে তৎক্ষণাৎ স্বেচ্ছা-অবসরে অর্থাৎ ভলান্টিয়ারি রিটায়ারমেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, কড় বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব৷


মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জনগণের কল্যাণে সরকারী কর্মচারীদের সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে এক শ্রেষ্ঠ রাজ্য হিসেবে গড়তে চায়৷ একাজে সরকারী কর্মচারীদেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে৷ সরকারের কর্মসূচি রূপায়ণে কর্মচারীদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে আয়োজিত এক কর্মচারী সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথাগুলো বলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারী কর্মচারীদের স্বার্থে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ পাওনা আদায়ের জন্য মিছিল মিটিং করতে হতো কর্মচারীদের৷ এখন পাওনা আদায়ের জন্য মিছিল-মিটিং করতে হয় না৷

পূর্বতন সরকার ১৩ হাজার কোটি টাকা দেনা রেখে গেলেও বর্তমান সরকার কর্মচারীদের সপ্তম বেতন কমিশনের আদলে আর্থিক সুুবিধা প্রদান করেছে৷ হোমগার্ডদের মাসিক ভাতা ৬০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা করা হয়েছে৷ ফ্যাস্টিভাল গ্র্যান্ট ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে৷ গ্র্যাচুয়িটি ৪ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে তা ১০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে৷ বিদ্যৎ নিগমের লাইনম্যানদের জন্য বিমা ছিল ২ লক্ষ টাকার৷ এখন ১০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে৷ কাজ করার সময় লাইনম্যান ও অন্যান্যরা আহত হলে চিকিৎসার জন্য ৩০ হাজার টাকা পেতেন৷ এখন পাবেন ৫ লক্ষ টাকা৷ একজন কর্মচারী ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সের আগে যদি মারা যান তবে মারা যাবার আগে তিনি যে স্কেলে বেতন পেতেন তার পরিবারও ৬০ বছর পর্যন্ত সেই স্কেলে বেতন পেয়ে যাবেন৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ ডি সি’র উন্নয়নের জন্য ৭০০০ কোটি টাকার প্যাকেজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যকে ১৫০০ কোটি টাকার বিশেষ অনুদান দিয়েছেন৷ প’দশ অর্থ কমিশনের কাছে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য দাবী জানানো হয়েছে৷ রাজ্যবাসীকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যৎ পরিষেবা প্রদান করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার সমস্যা যেন না হয় তার জন্য রাজ্য সরকার অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মা ত্রিপুরেশ্বরীর ও মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের পূণ্যভূমি এই ত্রিপুরা৷ আগে দেশ ও দেশের বাইরে ত্রিপুরাকে অনেকে চিনতেন না৷ বর্তমান সরকারের ১৫ মাসের শাসনে পর্যটক আগমনের সংখ্যা আগের চাইতে বেড়েছে৷

এখন ভারতসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তের লোক ত্রিপুরাকে চেনেন৷ তাই আশা করব পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য ভুলে ত্রিপুরাকে এক মডেল রাজ্য গড়তে কাজে ফাঁকি না দিয়ে কর্মচারীরা সময়ানুবর্তিতা মেনে কাজ করবেন৷ আপনাদের ও জনগণের সহযোগিতা নিয়েই একমাত্র পারদর্শী সরকার গঠন করা যায়৷ তাছাড়া বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রীয় রাজ্য কর্মচারী মহাসংঘের সভাপতি ভিপন কুমার ডোগরা ও ভারতীয় মজদূর সংঘের ন্যাশনাল এি’কিউটিভ মেম্বার এন. তুম্বা সিং৷ উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কান্তি ঘোষ৷


স্বাগত ভাষণ দেন ত্রিপুরা রাজ্য কর্মচারী সংঘের সভাপতি শংকর দেব৷ তিনি জানান, ১৯৫৫ সালে দেশে ভারতীয় মজদূর সংঘ গঠন করা হয়৷ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন ত্রিপুরা রাজ্য কর্মচারী সংঘের সদস্য ও সদস্যাগণ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *