পাথারকান্দি (অসম), ২৯ জুন (হি.স.) : করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি থানার অন্তর্গত দেওলাখাল এলাকায় এক যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় তিনজনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক নাবালক এবং দুই মহিলা রয়েছেন। একই ঘটনায় আরও ৩২ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে দলীয় কার্যকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ছুটে আসেন এলাকার বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। আসেন ওসি-সহ পুলিশের লোকজনও। পুলিশকর্মী এবং স্থানীয় জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হতাহতদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির ভিতর ও নীচ থেকে উদ্ধার করে আহতদের সাতটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন বিধায়ক।
প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, শনিবার বেলা প্রায় ১২টা নাগাদ জেলা সদর করিমগঞ্জ থেকে বাজারিছড়া থানান্তর্গত রাঙামাটির উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে এএস ১০ ৫৬৬৬ নম্বরের এক বাস ছেড়েছিল। কিন্তু প্রায় ২:৪৫-টা নাগাদ বাসটি পাথারকান্দি থানার অন্তর্গত দেওলাখালের চামটিলা এলাকায় রাস্তার বাঁক নিয়ে একটি মোষের মুখোমুখি হয়। মোষকে বাঁচাতে গিয়ে যাত্রীবোঝাই বাসটি ডানদিকে রাস্তার পাশে পালটি খেয়ে পড়ে দুমড়ে-মোচড়ে যায়। এতে তিন যাত্রীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অন্য প্রায় ৩২ জন আহত হয়েছেন।
এ-ঘটনায় বাসের দুই মহিলা ও এক নাবালক বাসের নীচে পড়ে যাওয়ায় তাদের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে নাবালকপুত্রটি পাথারকান্দি থানাধীন হাতাইরগুল গ্রামের প্রয়াত খলিল উদ্দিনের ১৪ বছরের ছেলে শাকির আহমেদ, দুই মহিলার একজন জনৈক নিরঞ্জন রুদ্রপালের বছর ৪৫-এর স্ত্রী জয়ন্তী রুদ্রপাল। তাঁর বাড়ি বাজারিছড়া থানাধীন কালাছড়ায়। আরেকজন দক্ষিণ করিমগঞ্জের গুলছড়া গ্রামের মায়ারুননেসা বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
আহতদের ৩২ জনের মধ্যে আটজনের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক বলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। আহত যাঁদের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়েছে তাঁরা যথাক্রমে মাহমদুল হুসেন (এক মাস), সইফউদ্দিন (বয়স অজ্ঞাত), ছানারঞ্জন দাস (বয়স অজ্ঞাত), সিরাজুন বিবি (বয়স অজ্ঞাত), দিলওয়ারা বেগম (বয়স অজ্ঞাত), খাইতুন বিবি (বয়স অজ্ঞাত), কমরুননেসা (বয়স অজ্ঞাত) এবং হাসনা বেগম (বয়স অজ্ঞাত)। এছাড়া করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে যাঁদের চিকিৎসা চলছে তাঁরা যথাক্রমে আবু তাহের (২.৫ বছর), সুজিত দে (৩২), হাসিনা বেগম (৩৮), ববি বিবি (৭০), বাসন্তী কমলাপুরি (৪৫), ফজলুল করিম (৫২), মইমুননেসা (২০), অলতাফ উদ্দিন (৪০), অলোক দত্ত (বয়স অজ্ঞাত), আব্দুল মজিদ (বয়স অজ্ঞাত), শাকির হুসেন (বয়স অজ্ঞাত), আলাউদ্দিন (বয়স অজ্ঞাত), রেহেনা বেগম (বয়স অজ্ঞাত), সুখেন্দুদাস (বয়স অজ্ঞাত), রমেন্দ্র দাস (বয়স অজ্ঞাত), সুভাষ দাস (বয়স অজ্ঞাত), অলতাফ উদ্দিন (বয়স অজ্ঞাত), আব্দুল রৌফ চৌধুরী (বয়স অজ্ঞাত), জাহিদ হুসেন (বয়স অজ্ঞাত), আফতারা বেগম (বয়স অজ্ঞাত), অঞ্জনা রায় (বয়স অজ্ঞাত)। তাঁদের মধ্যে সন্ধ্যার আহত হাবিব আলি, সাজ উদ্দিন এবং রিজাউল আহমেদকে চিকিৎসা করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে অকুস্থলে দলীয় (বিজেপি) কার্যকর্তাদের নিয়ে ছুটে আসেন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল এবং পুলিশের এক বিশাল দল। তাঁরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের ভিতর ও তার নীচ থেকে হত ও আহতদের উদ্ধার করে করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে পাঠানো হয়। করিমগঞ্জ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আটজনকে শিলচরে পাঠানো হয়েছে। বিধায়ক নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে তাঁদের নিক আত্মীয়দের সরকারি আর্থিক সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে, স্থানীয় জনতার অভিযোগ দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িতে অত্যধিক যাত্রী থাকার দরুন এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তাঁদের কাছে জানা গেছে, গাড়িতে কমপক্ষে ৫০ জন যাত্রী ছিলেন।এদিকে জেলায় চলাচলকারী যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নিয়ে সরব হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিধায়ক।অন্যদিকে নিহতদের করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে ময়না তদন্তের জন্য। আজকের ভয়ংকর সড়ক দুর্ঘটনায় গোটা করিমগঞ্জ জেলা জুড়ে শোকের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে।