আর্থিক দূর্বল পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির বঞ্চনা, দশটি নামী বিদ্যালয়কে নোটিশ দপ্তরের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ জুন৷৷ আর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল ছাত্রছাত্রীদের নামী বেসরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থাকলেও গত আট বছরে প্রায় চবিবশ হাজার পড়ুয়া ওই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন৷ তাতে পূর্বতন সরকার খামখেয়ালীপনার নজির স্থাপন করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷


প্রসঙ্গত, সারা দেশে ২০০৯ সালে শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়েছে৷ সেই মোতাবেক রাজ্য সরকার ২০১১ সালে রুলস তৈরী করেছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যে ২০১১ সাল থেকেই শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হচ্ছে৷ আইন অনুযায়ী আর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল ছাত্রছাত্রীদের জন্য নামি বেসরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে৷ তাতে, বেসরকারী সুকলে নূ্যনতম ২৫ শতাংশ আসন আর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, বেসরকারী সুকলে ভর্তি ফি পুরোটাই বহন করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার৷ শুধু তাই নয়, ওই সুকলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত খরচ বহন রাজ্য সরকার৷ আইনে আরও বলা হয়েছে, ওই ছাত্রছাত্রীরা এক কিলোমিটারের ভেতরে সুকলে ভর্তির সুযোগ না মিললে তিন কিলোমিটারের মধ্যে যে নামি বেসরকারী সুকল রয়েছে সেখানে ভর্তি হতে পারবে৷


এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ অত্যন্ত পরিতাপের সাথে জানান, সুযোগ থাকা সত্বেও রাজ্যের প্রচুর ছাত্রছাত্রী নামি বেসরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি৷ তারা সেই সুবর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷ তাঁর কথায়, ২০১১ সালে শিক্ষার অধিকার আইনে রুলস্ প্রণয়ন করেই দায় সেরে নিয়েছিল তদানিন্তন রাজ্য সরকার৷ ওই আইনে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুযোগ সুবিধাগুলি খঁুজে বের করেনি পূর্বতন সরকার৷ তিনি বলেন, রাজ্যের দশটি বনেদি বেসরকারী বিদ্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে আর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল ছাত্রছাত্রী তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে৷ ওই বিদ্যালয়গুলি উত্তরে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত একজন ছাত্রও ভর্তি হয়নি৷ শিক্ষামন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তদানিন্তন সরকার এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি৷ তাই আর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা ওই সুযোগ পায়নি৷


তাঁর কথায়, প্রতি বছর অন্তত তিন হাজার ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে পারত৷ তাতে দেখা যাচ্ছে গত আট বছরে প্রায় চবিবশ হাজার ছাত্রছাত্রী ওই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে৷ তাঁর দাবি, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নামি বেসরকারী বিদ্যালয়গুলিতে ওই আইন কার্যকর করা হবে৷ তিনি জানান, প্রত্যেকটি নামি বেসরকারী বিদ্যালয়ে আর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল ছাত্রছাত্রীদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে৷ ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে আবেদন জানাতে হবে৷ ওই আবেদনের ভিত্তিতে আর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল প্রমাণিত হলে ছাত্রছাত্রীদের পছন্দমত নামী বেসরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে৷
শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রাথমিক স্তরে প্রতি ছাত্রপিছু রাজ্য সরকারের বছরে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ১৩৮ টাকা৷ উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে খরচ হয় ৭৬ হাজার ৫২২ টাকা এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬০ হাজার টাকা রাজ্য সরকারের প্রতি ছাত্রপিছু খরচ হচ্ছে৷ রাজ্যে সরকারী অনুদানবিহীন বেসরকারী সুকল রয়েছে ৩৩৫টি৷ তাতে প্রথম শ্রেণীতে ছাত্র ভর্তি রয়েছে ১১ হাজার ৯৪১ জন৷

শিক্ষার অধিকার আইন সঠিক ভাবে রাজ্যে পালন না হওয়ায় অর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য গত আট বছরে ৬ কোটি ৩৪ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে৷ কারণ, ওই ছাত্রছাত্রীদের খরচ রাজ্য সরকার বহন করলেও পুরো টাকাটাই কেন্দ্রীয় সরকার ফিরিয়ে দিত৷ তিনি জানান, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে আর্থিক দিক দিয়ে দূর্বল শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের ওই সুযোগ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *