নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ জুন৷৷ সোমবার সারা ভারতের সঙ্গে রাজ্যেও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর ডাকে ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করেছেন৷ রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা বহির্বিভাগে কর্মবিরতি আন্দোলন করেছেন৷ রাজধানীর প্রধান দুটি হাসপাতাল আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতাল এবং ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল (আইজিএম) হাসপাতালের বহির্বিভাগ অন্যদিনের মতো যথাসময়ে খোলা হলেও ডাক্তার না আসায় কোনও কাজ হয়নি৷ তবে সব হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু ছিল৷

আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কয়েকজন ডাক্তার নিজেদের নিরাপত্তার দাবির প্রতীক হিসেবে মাথায় হেলমেট লাগিয়ে রোগী দেখেছেন৷ বহির্বিভাগে ডাক্তাররা পরিষেবা বন্ধ রাখায় বহু দূরদূরান্তের রোগী ও তাঁদের পরিজনরা সমস্যায় পড়েছেন৷ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তাঁরা অনেকেই ফিরে যান৷ তাঁরা জানান, হঠাৎ করে ডাক্তাররা কর্মবিরতির ডাক দেওয়ার কথা আগে জানতে পারেননি, তাই তাঁরা নানা কাজ ফেলে চলে এসেছেন৷ এখন বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে৷ আগে থেকে জানা থাকলে আসতেন না৷
এদিকে আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. প্রসেনজিৎকুমার দাস জানান, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আজ সারা দেশ ব্যাপী ডাক্তারদের কর্মবিরতি৷ সেই সঙ্গে তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালগুলির বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও সকল জরুরি পরিষেবা ও ক্রিটিক্যাল ইউনিটগুলি স্বাভাবিক রয়েছে৷ জরুরি ওয়ার্ডগুলিতে ডাক্তারদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
আজ আগরতলা মেডিক্যাল কলেজের সামনে কালো ব্যাজ পরে এবং তাঁদের নিরাপত্তার দাবি সংবলিত প্ল্যা-কার্ড নিয়ে মৌন ধরনা প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন ডাক্তারি পাঠরত ছাত্রছাত্রী-সহ অধ্যাপক ও অন্যান্য ডাক্তাররা৷ এদিন হাসপাতালে কর্মরত সকল স্তরের কর্মী বুকে কালো ব্যাজ পরে কাজ করেছেন৷ একই ভাবে রাজ্যের অন্যতম বড় আরও একটি রেফারেল হাসপাতাল আইজিএম-সহ অন্যান্য হাসপাতালগুলিতে বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন ডাক্তাররা৷ ফলে ওখানেও রোগীদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে৷
নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে সারা ভারতজুড়ে আজ সোমবার এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন ডাক্তাররা৷ ফলে সারা দেশের সঙ্গে ত্রিপুরায়ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসে নাজেহাল হচ্ছেন রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন৷ এমতাবস্থায় রোগীদের সমস্যা কিছুটা দূর করতে উদ্যোগী হলেন আগরতলার বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস৷
আজ সকালে বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নিজে রোগী পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র লিখেছেন৷ সেই সঙ্গে তিনি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান রাখেন, তাঁরা যেন রোগীদের সমস্যার কথা চিন্তা করে অস্থায়ী বহির্বিভাগ গড়ে রোগী-পরিষেবায় উদ্যোগী হন৷ তাঁর এই উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য ডাক্তাররা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেন৷ এতে বহু রোগী চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন৷
বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস আজ আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতালের পাশাপাশি আইজিএম হাসপাতাল এবং রিজিওনাল ক্যানসার হাসপাতালে গিয়েও রোগীদের দেখেছন৷ তিনি-সহ হাসপাতালেও অন্যান্য ডাক্তারদের অনুপ্রাণিত করেন রোগী দেখার জন্য৷ বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস বলেন, আগে আমি এই পেশাতেই ছিলাম৷ এখন আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি৷ তাই তাঁদের সমস্যার কথা বুঝি
তিনি আরও বলেন, ডাক্তাররা সবসময় রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে সুস্থ করতে চান এবং তা করেও থাকেন৷ তবে এটা ঠিক, মাঝে-মধ্যে দু-একটি রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ তবে ডাক্তাররা কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও রোগীর চিকিৎসায় গাফিলতি করেন না৷ তাই বলে তাঁদের উপর প্রাণঘাতী আক্রমণ কখনও কাম্য নয়৷ ডাক্তাকরা তাঁদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই করবিরতি পালন করছেন৷ তাঁদের দিকও মানবিকভাবে দেখা উচিত৷
তবে এদিন ডাক্তাররা কর্মবিরতির কথা বললেও যেভাবে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা চিন্তা করে বহির্বিভাগের বাইরে অস্থায়ীভাবে চিকিৎসা দিয়েছেন তা প্রশংসার যোগ্য বলেও দাবি করেন বড়জলার বিধায়ক ডা. দিলীপ দাস৷