নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১০ জুন ৷৷ আগরতলা পুর নিগমের খামখেয়ালিপনায় ন্যাশনাল গ্রীণ ট্রাইব্যুনালের রোষানল থেকে কোনমতে বেঁচেছে রাজ্য সরকার৷ প্রত্যেক বাড়ি থেকে পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া ৩০ জুনের মধ্যে শুরু করা হবে মুচলেকা দিয়ে এযাত্রা পার গেছে৷ তাতে, পুর নিগমের প্রতি এখন ত্রিপুরা সরকার কড়া অবস্থান নিয়েছে৷ নির্দেশ অনুযায়ী পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ সুনিশ্চিত না করলে নিগমের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারী দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ শুধু তাই নয়, আগরতলায় সমস্ত বাজার এবং হোটেল থেকেও বর্জ্য সংগ্রহ সুনিশ্চিত করতে পুর নিগমকে কড়া ভাষায় আদেশ দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷

নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব কিরণ গিত্যে জানিয়েছেন, ন্যাশনাল গ্রীণ ট্রাইব্যুনাল আদেশ করেছিল ৩১ মার্চের মধ্যে বাড়ি বাড়ি পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ সুনিশ্চিত করতে হবে৷ সে মোতাবেক আগরতলা পুর নিগমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল৷ কারণ, এই আদেশ পালন করা পুর নিগমের এক্তিয়ারভুক্ত৷ কিন্তু, পুর নিগম এই বিষয়টিকে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অন্তর্গত রূপায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল৷ ফলে, গৃহিত পদক্ষেপ সক্ষল হয়নি৷
কিরণ গিত্যের কথায়, সময়ের মধ্যে আদেশ পালন না হওয়ায় ন্যাশনাল গ্রিণ ট্রাইব্যুনালের সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল ত্রিপুরা সরকার৷ ৩০ জুনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া রূপায়ন সুনিশ্চিত করা হবে বলে লিখিতভাবে আদেন জানিয়েছিল ত্রিপুরা সরকার৷ তাতে, গ্রীণ ট্রাইব্যুনাল সম্মত হয়েছে৷ কিরণ গিত্যে বলেন, এখন ৩০ জুনের মধ্যে আগরতলায় প্রত্যেক বাড়ি থেকে পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ পুর নিগমকে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে৷ তাই, গত সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন পাড়ায় মাইকিং করে জনসাধারণকে জানানো হচ্ছে৷ তিনি বলেন, বর্জ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরু হলে যদি কোন বাড়িতে পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য পাওয়া না যায় তাহলে জরিমানা করা হবে৷ তাছাড়া আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে৷
এদিকে, আগরতলায় সমস্ত বাজার এবং হোটেলের বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্যও পুর নিগমকে চিঠি দিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷ কিরণ গিত্যের কথায়, বাড়িঘরের তুলনায় বাজারগুলিতে প্রচুর বর্জ্য জমা হয়ে থাকে প্রতিদিন৷ সেই বর্জ্য সময় মতো পরিস্কার করা হয় না৷ বরং অনেক সময় সেই বর্জ্য ড্রেইনে ফেলে দেওয়া হয়৷ তাতে, ড্রেইনগুলি পরিস্কার রাখতে ভিষণ সমস্যা হচ্ছে৷ একই অবস্থা হোটেলগুলিরও৷ তাই, আগরতলা পুর নিগমকে বাজার এবং হোটেল থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য ঠিকেদার নিয়োগ করতে বলা হয়েছে৷ এই প্রক্রিয়া অবশ্যই সুনিশ্চিত করতে হবে, নয়তোবা কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে উদয়পুর, কুমারঘাট এবং আগরতলায় তিনদিনে তিনটি আঞ্চলিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে৷ মূলত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইবুনাল এবং সলিড ওয়েস্ট মেনেজম্যান্ট রুলস ২০১৬ এর নির্দেশ মোতাবেক এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে৷
গত সাত জুন একটি ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছিল৷ এই ভিডিও কনফারেন্সে প্রতি জেলার জেলাশাসক, সংশ্লিষ্ট দপ্তর যেমন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, আগরতলা পুর নিগম, রাজ্যের ২৪টি মডেল গ্রামের বিডিও, বিভিন্ন নগর ও পুর সংস্থার সিইও/ইও উপস্থিত ছিলেন৷
এই বিডিও কনফারেন্সে প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন সি শ্রীনিবাসন৷ তিনি সলিড এন্ড লিকুয়িড ওয়েস্ট মেনেজমেন্ট এক্সপার্ট এবং প্রোযেক্ট ডিরেক্টর এন্ড কনসালটেন্ট অফ ইন্ডিয়া গ্রীন সার্ভিস ভেলুর, তামিলনাডু৷ এই কর্মশালায় শ্রীনিবাসন সলিড ও লুকিইড ওয়েস্ট মেনেজম্যান্ট প্রকল্পের বাস্তবায়নের ক্ষত্রে দেশের যেসমস্ত রাজ্যে সাফল্য এসেছে সেগুলি তুলে ধরেন৷
শ্রীনিবাসন জানিয়েছেন, প্রতিটি বাড়িতে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য স্বসহায়ক দলের মহিলাদের নিযুক্ত করা যেতে পারে৷ তারা বারো ঘন্টা একাজ করবেন৷ সংগৃহীত বর্জ্যকে ব্যবহার করে আর্থিক দিক থেকেও কিছুটা আয় হতে পারে৷ এই প্রকল্প অনুযায়ী আর কোন প্রয়োজন নেই রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের৷ তাছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কোন দামি যন্ত্রপাতি কিংবা সামগ্রীর প্রয়োজন হবে না৷ শুধুমাত্র প্রতিটি বাড়িতে দুটি বিন দেওয়া হবে বিশেষ রঙের৷ একটি হবে সবুজ রঙের যেটি হবে পচনশীল এবং আরেকটি হবে লাল রঙের সেটি হবে অপচনশীল বর্জ্যের জন্য৷ দিনে দুইবার করে কর্মীরা ওই বাড়িতে যাবেন এবং ওই বিশেষ রঙের বিন থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন৷
এদিকে, ন্যাশনাল গ্রীণ ট্রাইবুনাল গত চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারী সমস্ত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস ২০১৯ মেনে চলার জন্য ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যকর করার জন্য৷ এজন্য স্বসহায়ক দলের কর্মীদের নিযুক্ত করার কথাও বলেছে৷ তাতে করে হাজারো স্বসহায়ক দলের মহিলারা আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বি হতে পারবে৷

