নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ জুন ৷৷ ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক পরীক্ষা ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ এবছর পাশের হার সামান্য বেড়ে হয়েছে ৬৪.৬০ শতাংশ৷ একই সাথে মাদ্রাসা আলিম পরীক্ষারও ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ মাদ্রাসা আলিম পরীক্ষায় পাশের হার ৫৪.৮৪ শতাংশ৷ এদিকে, মাধ্যমিকে এবছর কৃতি তালিকায় স্থান পেয়েছেন ১৯ জন৷ প্রথম হয়েছেন উদয়পুর ইংলিশ মিডিয়াম উচ্চ বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের ছাত্র তথাগত দত্ত৷ তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৮১৷ উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়েরা ছেলেদের থেকে এগিয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু, মাধ্যমিকে কৃতি তালিকায় এবং পাশের হারে ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে৷ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এই সংবাদ জানিয়েছেন ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি ড. ভবতোষ সাহা৷ ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেরা দশে স্থান পেয়েছেন ১৯ জন ৷ তাদের মধ্যে আটজন মেয়ে এবং ১১ জন ছেলে ৷ প্রথম স্থান অর্জন করেছেন উদয়পুর ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের তথাগত দত্ত ৷ এছাড়া দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তিনজন ৷ তারা সুজাতা পাল, নরেনচন্দ্র পাল এবং সৌরদীপ দাস৷ তৃতীয় হয়েছেন সৌরদীপ ভট্টাচার্য ৷মাধ্যমিকে কৃতী তালিকায় এবার দাপট দেখিয়েছে মফঃস্বল ৷ আগরতলার নামি বিদ্যালয়গুলিও টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছে৷ তবে, আগরতলায় এ-বছর অনামি কয়েকটি বিদ্যালয় কৃতী তালিকায় স্থান করে নিয়েছে৷

এবছর মাধ্যমিকে ৪৬ হাজার ৫৭১ জন পরীক্ষার্থী নথিভুক্ত করেছিলেন৷ তাদের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৭৪৭ জন৷ মাধ্যমিকে ছেলে ২০ হাজার ৯১১ জন এবং মেয়ে ২৩ হাজার ৮৩৬ জন পরীক্ষা দিয়েছেন৷ পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, ১০৪৩টি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যের ৭৬টি পরীক্ষাকেন্দ্রভুক্ত মোট ১৫১টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন৷ তিনি আরও জানান, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য এবছর দুটি নতুন পরীক্ষাস্থল বেছে নেওয়া হয়েছিল৷ গাবর্দি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং গর্জিবাজার উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবছর ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিয়েছেন৷
পর্ষদ সভাপতির কথায়, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা আলিম পরীক্ষা ২ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল৷ সমাপ্ত হয়েছে ২৮ মার্চ ও ৩ এপ্রিল৷ তিনি জানান, ২৫ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা খাতা মূল্যায়ণ শুরু হয়েছিল এবং সমাপ্ত হয়েছে ১৫ মে৷ তাঁর দাবি, পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার ৭১দিন পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে৷
এদিকে, এবছর ১০ জন দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী এবং ২২ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৯ জন দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী এবং ১৭ জন শারীরিক প্রতিবন্ধি পাশ করেছেন৷ এছাড়া, এবছর বিশালগড় কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের একজন কয়েদী পরীক্ষা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু, ওই পরীক্ষার্থী পাশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷
পর্ষদ সভাপতি বলেন, এবছর মাদ্রাসা আলিম পরীক্ষায় নথিভুক্ত হয়েছিলেন ৬৫ জন৷ তাদের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৬৪ জন৷ ছেলে ৫১ জন এবং মেয়ে ১৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন৷ তাঁরা সোনামুড়ার দুইটি, বিশালগড়, কূর্তি এবং টিলাবাজার মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন৷ মাদ্রাসা আলিমে প্রথম হয়েছেন মহম্মদ মাহাদি হাসান৷ তার প্রাপ্ত নম্বর ৭২৯৷
আজ পর্ষদ সভাপতি ড. সাহা জানিয়েছেন, এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার ৬৪.৬০ শতাংশ৷ গতবছর পাশের হার ছিল ৫৯.৫৯ শতাংশ৷ এদিকে, এডিসি এলাকায় বিদ্যালয়গুলিতে এবছর পাশের হার ৪৯.৮০ শতাংশ৷ গত বছর পাশের হার ছিল ৩৯.১৪ শতাংশ৷ তিনি আরো জানান, তপশীলি উপজাতি পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ৪৫.৮৪ শতাংশ, গতবছর ছিল ৩৭.৩০ শতাংশ৷ তপশীলি জাতি পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ৬৬.৭১ শতাংশ, গত বছর ছিল ৬৪.৩৬ শতাংশ৷
মাধ্যমিকে অংকে ১০০-তে ১০০ পেয়েছেন ১১৯ জন৷ অথচ, অংকেই পাশের হার সবচেয়ে কম হয়েছে৷ সবচেয়ে ভাল ফলাফল হয়েছে ইংরেজী বিষয়ে৷ ইংরেজীতে ৯৫.৯৭ শতাংশ পাশের হার৷ এছাড়া সমাজবিদ্যায় ৮১.০৪ শতাংশ এবং বিজ্ঞানে ৭৭.৭৭ শতাংশ পাশের হার৷ ভাষাগত বিষয়গুলির মধ্যে মিজো বিষয়ে পাশের ১০০ শতাংশ৷ এছাড়া, ককবরকে ৯৬.৮২ শতাংশ, বাংলায় ৯৪.৭৮ শতাংশ এবং হিন্দিতে ৬৭.৮২ শতাংশ পাশের হার৷
পর্ষদ সভাপতির কথায়, গত কয়েকবছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা পরীক্ষায় বেশি অংশগ্রহণ করছে৷ এদিকে, এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ পাশ করেছে ৫৩টি বিদ্যালয় এবং ১০০ শতাংশ ফেল করেছে ৩৪টি বিদ্যালয়৷ গত বছর ৪৮টি বিদ্যালয় ১০০ শতাংশ পাশ এবং ৩১টি বিদ্যালয় ১০০ শতাংশ ফেল করেছিল৷
এদিকে, কৃতী তালিকায় যারা রয়েছে তারা হল, ১৷ প্রথম : তথাগত দত্ত, উদয়পুর ইংরেজি মাধ্যম উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের ছাত্র৷ তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৮১৷ ২৷ দ্বিতীয় : সুজাতা পাল৷ তেলিয়ামুড়া দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের ছাত্রী ৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৮০৷ ৩৷ দ্বিতীয় : নরেনচন্দ্র পাল৷ মেলাঘর দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয় ৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৮০৷ ৪৷ দ্বিতীয় : সৌরদীপ দাস৷ নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতন ৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৮০৷ ৫৷ তৃতীয় : সৌরদীপ ভট্টাচার্য৷ উমাকান্ত অ্যাকাডেমি ৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৯৷ ৬৷ চতুর্থ : শুভনীল ভৌমিক৷ বাইখোরা উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৮৷ ৭৷ পঞ্চম : জয়দীপ পাল ৷ কামিনি কুমার সিংহ স্মৃতি উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৭৷ ৮৷ ষষ্ঠ : মুসকান দেবনাথ৷ বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বুনিয়াদী বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৬৷ ৯৷ ষষ্ঠ : সামন্বিতা সরকার৷ বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৬৷ ১০৷ ষষ্ঠ : অনুরাধা সাহা৷ শিশুবিহার উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৬৷ ১১৷ সপ্তম : সুইটি বর্ধন৷ লঙ্কামুড়া উচ্চ বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৫৷ ১২৷ অষ্টম : মৃন্ময় ধর৷ নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতন৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৪৷ ১৩৷ নবম : অরিজিৎ মজুমদার৷ বিলোনিয়া সরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৩৷ ১৪৷ নবম : সৌরভ ঘোষ, অফিল টিলা উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৩৷ ১৫৷ নবম : দিয়া বণিক৷ শিশুবিহার উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৩৷ ১৬৷ নবম : দীপায়ন সাহা৷ শিশুবিহার উচ্চ বুনিয়াদী বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৩৷ ১৭৷ দশম : সোহম শীল৷ উদয়পুর ইংরেজি মাধ্যম উচ্চ বুনিয়াদি বিদ্যালয়৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭২৷ ১৮৷ দশম : রাজেশ দেবনাথ৷ বৃন্তক শিক্ষা নিকেতন৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭২৷ ১৯৷ দশম : বৃষ্টি বিশ্বাস৷ বিবেকানন্দ শিশু নিকেতন৷ প্রাপ্ত নম্বর ৪৭২৷

