BRAKING NEWS

পাকিস্তানি আইনে দখল করা সম্পত্তি আদৌ কি ফেরত পাবে হিন্দুরা ?

ঢাকা, ২৮ মে (হি.স.) : ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে, তারই অংশ হিসেবে জারি হয় শত্রু সম্পত্তি আইন। মূল লক্ষ্য ছিল হিন্দুদের ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে তাদের সম্পত্তি দখল এবং দেশ থেকে বিতাড়িত করে নির্ভেজাল একটি মুসলমান প্রধান ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যুদ্ধের পর শত্রু সম্পত্তি নাম দিয়ে হিন্দুদের জায়গা-জমি, বাড়িঘর দখলের মহোৎসব শুরু হয়ে যায়। কিন্তু দেশ স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায় সম্পত্তি দখলের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। মাত্র চব্বিশ বছরের মাথায় ভেঙে যায় পাকিস্তান। এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

১৯৭১ সালের ১৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে  ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরই পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে রাওয়ালপিন্ডি নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর চার সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলি ও মুহম্মদ কামারুজ্জামান ভারতে পালিয়ে গিয়ে অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেন, এই বিপ্লবী সরকার ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মুক্ত এলাকা কুষ্টিয়ার মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করেন। ওই দিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের বৈরি সকল পাকিস্তানি আইন নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে গেল। সে হিসেবে কালো আইন বলে চিহ্নিত ‘শত্রু অর্পিত সম্পত্তি আইন’ স্বাধীন বাংলাদেশে বাতিল বলে গণ্য হওয়ার কথা।

ন’মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে ভারতীয় মিত্রবাহিনী। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের অধিনায়ক লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। পরাজিত লে. জে. নিয়াজি অরোরার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। নতুন সূর্য ওঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাবিশ্বে দৌড়ঝাঁপ করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায় এবং মুজিবের মুক্তির জন্যে। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক জনমতের চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন দেশের রাজধানী ঢাকায় ফিরে আসেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু অভিন্ন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কারণে নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনী  ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত মিশে গিয়ে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করে। প্রায় বারো হাজার ভারতীয় সেনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গ করেন। কিন্তু তা সত্বেও ‘শত্রুর তকমা’ মুছে যায়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে শত্রু সম্পত্তি আইন বহাল তবিয়তে কার্যকর থাকে, শুধু নামটা যায় পাল্টে। হলো অর্পিত সম্পত্তি। তবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ কয়েক দফা রায়ে বলেছে, যেহেতু ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবে অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি আইনের মৃত্যু ঘটেছে। সুতরাং এই মৃত আইনের আওতায় আর কোনও  অর্পিত সস্পত্তি ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করা যাবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সামরিক সরকাররা এই আইনকে জীবন দিয়েছে বারবার। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের নেতা খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু এগারো সপ্তাহের মাথায় তাকে হটিয়ে পাল্টা ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। তিনি অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি আইনকে সেই পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে কঠোরভাবে প্রয়োগ শুরু করেন। লুকায়িত সম্পত্তি খুঁজে বের করার নামে শুরু হয় এক নারকীয় অধ্যায়। ঘোষণা করা হয়, শত্রু সম্পত্তি খুঁজে বের করতে পারলে সম্পত্তির মোট মূল্যের একাংশ পারিতোষিক দেওয়া হবে। সেই লোভে সরকারি কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় টাউট-বাটপাররা মহাউৎসাহে শত্রু সম্পত্তির খোঁজে মাঠে নেমে পড়ে। এই মাঠে নেমে পড়ার অর্থ হিন্দুদের ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেওয়া। কোনও পরিবারের কেউ একজন ভারতে চলে গেছেন এমন পরিবারের তো রক্ষা নেই, ভারতে যাননি এমন পরিবারও রেহাই পায়নি। যেমন ধরা যাক, শচীনবাবুর (কাল্পনিক নাম) দুই ছেলে। তার সম্পত্তিতে শত্রু সম্পত্তির তকমা লাগিয়ে দখল করার জন্যে বলা হলো তার তিন ছেলে। একজন ভারতে চলে গেছেন। শচীনবাবুর তিন ছেলে নয়, দুই ছেলে, পরিবারের কেউ ভারতে যায়নি এটা প্রমাণ করতে তার কালঘাম ছুটে যাবে। এক পর্যায়ে গোটা সম্পত্তি শত্রু বা অর্পিত সম্পত্তি নাম দিয়ে দখল হয়ে যাবে। শচীনবাবু দেশে থাকলে চেঁচামেচি করবেন, তাই গোটা পরিবারকে ভয় দেখিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই বিভীষিকা প্রায় প্রতিটি হিন্দু পরিবারকে গ্রাস করে।

এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৮৪ সালে এক হিন্দু সমাবেশে ঘোষণা দেন, হিন্দুদের সম্পত্তি আর শত্রু সম্পত্তির তালিকায় উঠবে না। কিন্তু কার্যত কিছু হয়নি। আমলারা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগসাজসে এরশাদের ঘোষণার আগের নানা তারিখ দেখিয়ে সম্পত্তি শত্রু তালিকায় অন্তর্ভূক্তি অব্যাহত রাখে। এর মধ্যে এই কালো আইন বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন, যা সূচিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে, আরও গতি লাভ করে।   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবুল বারকাতের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ‘শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনের মারপ্যাচে ১২ লক্ষ হিন্দু পরিবারের ৫০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংখ্যা মোট হিন্দু পরিবারের ৪০ শতাংশ। এই আইনে ভূমিচ্যুতির পরিমাণ ২৬ লক্ষ একর, যা হিন্দু সম্প্রদায়ের মূল ভূমি মালিকানার ৫৩ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ৭৮ শতাংশ হারিয়েছেন কৃষি জমি, ৬০ শতাংশ হারিয়েছেন বসতভিটা এবং ২০ শতাংশ হারিয়েছেন ভূসম্পত্তি।’ অধ্যাপক বারকাত আরও দেখিয়েছেন, ‘শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে ভূমি-জলা ও স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ হারানোর আর্থিক ক্ষতির মোট মূল্যমান ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজার মূল্যে হবে কমপক্ষে ৬ দশমিক ৫ লক্ষ কোটি টাকা, যা ওই অর্থবছরের মোট জাতীয় উৎপাদনের আনুমানিক ৬৩ শতাংশের সমান অথবা সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের চার গুণেরও বেশি। আর্থিক এই ক্ষতি মোট প্রকৃত ক্ষতির একটি অংশমাত্র। আসলে শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে প্রকৃত ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নিরূপন সম্ভব নয়। কারণ মানুষের দুর্দশা-বঞ্চনা, জোরপূর্বক পারিবারিক বন্ধন বিচ্যুতি, মানসিক যন্ত্রণা, শারীরিক বিপর্যয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, ভয়-ভীতির কারণে বিনিন্দ্র রজনী যাপন, মায়ের পুত্রশোক আর সন্তানের মাতৃশোক, মাতৃভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ, মানবসম্পদ বিনষ্ট, স্বাধীনতাহীনতা এসব ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান অসীম, যা নির্ধারণ করা কোনও হিসাববিশারদের পক্ষেই সম্ভব নয়।’ অধ্যাপক বারাকাতের মতে,‘শত্রু সম্পত্তি আইন এবং সংশ্লিষ্ট সাম্প্রদায়িক সংঘাত সংঘর্ষসহ বহু ধরনের বঞ্চনা-বিপর্যয়ের কারণে বিপুল সংখ্যক হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ অনিচ্ছায় দেশান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ‘নিরুদ্দিষ্ট হিন্দু জনসংখ্যা’। এই ‘নিরুদ্দিষ্ট হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষেরা হলেন সরাসরি ‘অ-জনগণ’, আর যারা এখনও নিরুদ্দিষ্ট হননি তারা ‘অ-জনগণ’ হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন মাত্র। আমার হিসেবে পাঁচ দশকে (১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত) আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লক্ষ হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন অর্থাৎ গড়ে বছরে বাধ্য হয়ে দেশান্তরিত হয়েছেন আনুমানিক ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৬১২ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ জন হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।’ 

শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি আইন বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর ২০০১ সালে অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি আইন বাতিল করে অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পাস হয় জাতীয় সংসদে। কিন্তু এই আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। স্বাভাবিকভাবে এই আইন বাস্তবায়নের পথে হাঁটেনি নতুন সরকার।

অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে বেশ কিছু ত্রুটি ছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবির মুখে কয়েক বারই আইনটি সংশোধন করা হয়। আমলারা শত্রু সম্পত্তির দুটি তালিকা করেন ‘ক’ তালিকা ও ‘খ’ তালিকা। ‘ক’ তালিকায় যে সব শত্রু সম্পত্তি সরকারের দখলে আছে সেগুলো অন্তর্ভূক্ত হয়। ‘খ’ তালিকা সম্পর্কে বলা হয়, যেসব সম্পত্তি সরকারের হাতে নেই সেগুলো এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকবে। ঐক্য পরিষদ প্রবল আপত্তি জানায় ‘খ’ তালিকা সম্পর্কে। ঐক্য পরিষদ যুক্তি দেখায়, আমলারা নিজেদের মতো করে তালিকা করেছে শত্রু সম্পত্তির, সরকারের দখলে নেই। এগুলো আমলাদের সাজানো তালিকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্য পরিষদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেন এবং ‘খ’ তালিকা বাতিল করে দেন। 

আইনে বলা হয়, প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের রায়ই চূড়ান্ত। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর জেলা প্রশাসন সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু যে কটি রায় হয়েছে, সবগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসকরা এই ব্যাপারে করণীয় জানতে চেয়ে আইন মন্ত্রণালয় কিংবা ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি লিখছেন। অর্থাৎ সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আটকে দেওয়া হচ্ছে। ঐক্য পরিষদ বলছে, এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। আইন লঙ্ঘন করে কাজটি করছেন জেলা প্রশাসকরা।

এদিকে  গত বছর ১ এপ্রিল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি প্রত্যর্পণের বিষয়ে এক রায়ে বলেছেন, ‘সরকারের সকল কর্মকর্তাদের প্রতি এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে যেন আর কোনো সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গেজেটভুক্ত করার কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া না হয়। ইতোমধ্যে স্থাপিত ট্রাইব্যুনাল আপিল ট্রাইব্যুনাল যেন কঠোরভাবে আইনে প্রদত্ত সময়সীমার মধ্যে দায়েরকৃত আবেদন ও আপিলসমূহ নিষ্পত্তিতে সচেষ্ট হন। যে সকল জেলায় বিপুল সংখ্যক আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে সেই সকল জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা যেতে পারে। সরকার যেহেতু অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রণয়ন করে মূল মালিক বা উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুতরাং রিট বা অন্য কোনো আবেদনের অজুহাতে ট্রাইব্যুনালের ডিক্রি কার্যকর করতে কোনো রকম বিলম্ব না করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের ১০(১) ধারার অধীনে আবেদন দায়েরের ক্ষেত্রে তামাদি আইন প্রযোজ্য হবে।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, ‘১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চের পর বাংলাদেশের সীমানাভুক্ত কোনও  সম্পত্তি শত্রু বা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সকল কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত বেআইনি এবং যে সকল ব্যক্তি এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা সবাই এই বেআইনি কাজের জন্য দায়ী বলে বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উপরোক্ত নির্দেশনা সম্বলিত রায় ঘোষিত হয়েছিল ১৯৮০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে। এই সকল রায়ের ভিন্নমত প্রকাশ করে অদ্যাবধি একটি রায়ও ঘোষিত হয়নি উচ্চতর আদালত থেকে, সুতরাং যে সকল ব্যক্তি ১৮ জুন ১৯৮০ সালের পর অর্পিত বা শত্রু স্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্তিতে জড়িত ছিলেন তাদের সবাই আদালত অবমাননার দায়ে দন্ডনীয় অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হবেন।’

হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ভূমি মন্ত্রণালয় সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল দায়ের করে। কিন্তু হাইকোর্টের রায় স্থগিত করার কোনও নির্দেশ আপিল বিভাগ দেননি। অর্থাৎ রায় কার্যকর রয়েছে এবং সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় চূড়ান্ত এবং প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার কথা। কিন্তু আমলাতন্ত্র এবং আওয়ামি লিগের একটি অংশ লিভ টু আপিলের সুযোগ নিয়ে প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নের পুরো কাজটিই বন্ধ করে দিয়েছে, এই অভিযোগ ঐক্য পরিষদের।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রানা দাশগুপ্ত অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার পথে বাধা সৃষ্টির জন্য আইন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন হিন্দুস্তান সমাচারের কাছে। তবে দাশগুপ্ত বলেন, এটা স্বীকার করতেই হবে, আজ প্রত্যর্পণের একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে এবং আমরা এতদূর আসতে পেরেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায়। তিনি আমাদের দাবি মেনে অনেক আইনি বাধা দূর করেছেন।  কিন্তু নানা অজুহাত তুলে বাধা দিচ্ছে আমলারা, পেছনে রয়েছেন শাসক দলেরই একাংশ। বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে এমন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ প্রত্যর্পণ কর, ফেরত দাও। আমলাদের কৌশল, ছলে-বলে-কৌশলে প্রত্যর্পণ ঠেকাও।

এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠছে, পাকিস্তানি আমলের আইনে দখল করা সম্পত্তি আদৌ কি ফেরত পাবে হিন্দুরা ? 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *