নয়াদিল্লি, ২৫ মে (হি.স.) : পদত্যাগ নয়, দলের সভাপতি রাহুল গান্ধীর উপরই আস্থা রাখল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। শনিবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সভাপতি রাহুল গান্ধীর পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশে বাধ সাধলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বে । গতবারের লোকসভা ভোটের চেয়ে এবার মাত্র আটটি আসন বাড়িয়েছে কংগ্রেস। দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করবেন। দলের অপর নেতারা বলেছিলেন, তাঁকে কিছুতেই পদত্যাগ করতে দেবেন না। শেষ পর্যন্ত তাই হল। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের শেষে বিকেল চারটে নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করলেন কংগ্রেস নেতারা। সেখানে বলা হল, রাহুলের মত নেতাই এখন দরকার।
এদিন প্রেস বিবৃতিতে কংগ্রেস নেতারা প্রথমেই ধন্যবাদ দিলেন তাঁদের, যারা এই পরিস্থিতিতেও তাদের ভোট দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত অভিনন্দন জানানো হল দলের কর্মীদের, যাঁরা গত কয়েক মাস ভোট প্রচারে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। কংগ্রেসের দাবি, তারা সব সময় শোষিতের হয়ে লড়াই করেছে। দলের নেতারা জানালেন, তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আগামীদিনে সরকারকে তার মোকাবিলা করতে হবে।
দলের সভাপতি পদ ছেড়ে যাবেন বলেছিলেন রাহুল গান্ধী। আর তা শুনেই এদিন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। তিনি বলেন, রাহুল ছেড়ে দিলেন দক্ষিণের কর্মীরা আত্মহত্যা করবে।
লোকসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনায় শনিবার বৈঠকে বসে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি। সেখানেই রাহুল পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান। বৈঠকে উপস্থিত দলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। সূত্রের খবর, ভোট-বিপর্যয় প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে চোখে জল চলে আসে তাঁর।
কংগ্রেস এদিন দলে প্রয়োজনমতো রদবদল করার পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে রাহুলকে। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের কংগ্রেস প্রধানরা রাহুলের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেবেন। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের প্রধান অশোক চহ্বন জানিয়েছেন, তিনিও ইস্তফা দিতে তৈরি। ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস প্রধান রাজ বব্বর ও ওড়িশার কংগ্রেস প্রধান নিরঞ্জন পট্টনায়েক ইস্তফা পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এদিন তিন ঘণ্টা ধরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক চলে। উপস্থিত ছিলেন ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাহুলের বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, প্রাক্তন মন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে।
চলতি বছরের শেষেই বিধানসভা ভোট হবে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খণ্ডে। বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে তিন রাজ্যে ভোটের জন্য দলকে তৈরি করাই এখন কংগ্রেসের সামনে প্রধান কাজ। জম্মু-কাশ্মীরেও ভোট হতে পারে যে কোনও সময়। দিল্লিতে ভোট হবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। আগামী দু’-এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি রাজ্যে নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিযুক্ত হবেন। হাইকম্যান্ডের ধারণা, বিভিন্ন রাজ্যে যদি কংগ্রেসকে চাঙা করে তোলা যায়, তাহলে জাতীয় স্তরেও দলের পুনরুজ্জীবন ঘটবে। বৃহস্পতিবার ভোটের ফল বেরোনর পরেই সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক বৈঠক করেন রাহুল। সেখানে বলেন, আমাদের ওপরে আস্থা রাখুন। আমরা ঠিক খুঁজে বার করব, কেন এই ফল। দলের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বার্তা দেন, ভালোবাসা কখনও হারে না। আমি নিশ্চিত যে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠব।
বৈঠক শেষে কংগ্রেস জানায়, “মানুষ যে রায় দিয়েছেন, তা আমরা মাথা পেতে মেনে নিয়েছি। কংগ্রেসকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। শোষিত-নিপীড়িত মানুষের পাশে আমরা সর্বদা রয়েছি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাহুলে মতো নেতাকেই প্রয়োজন। তিনিই সংগঠনের পুনর্গঠন করুন। তিনি আমাদের পাশেই রয়েছেন”। এমনটই উল্লেখ করেন রণদীপ সুরযেওয়ালা।
রাহুলের সভাপতি পদ ছাড়ার ক্ষেত্রে মত নেই প্রিয়াঙ্কা, সোনিয়ারও।