কলকাতা, ২০ মে (হি.স): সোমবার কালীঘাটের বাড়িতেই তেলেগু দেশম সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু দেখা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে । প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক হয় বলে জানা গেছে । আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি না হয়েই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বাসভবন থেকে রওনা দেন চন্দ্রবাবু । তবে, সূত্রের খবর, ২৩ মের ফলাফল পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় তাঁদের । সব রকমের সম্ভাব্য পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে । অবিজেপি ও আঞ্চলিক দলগুলিকে এক সুতোয় বাঁধতে আর কয়েক দফা আলোচনা চালিয়ে যাবেন চন্দ্রবাবু । অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গেও বৈঠক করবেন চন্দ্রবাবু নায়ডু ।
সূত্রে খবর, ২৩ মের ফলাফল বেরনোর পর বিরোধীদের সরকার গড়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে, তার নেতৃত্ব নিয়ে এদিন আলোচনা হয়েছে । এ সময় অন্যান্য দলের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে একটা রূপরেখাও তৈরি হয় বলে জানা গেছে । এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠক নিয়ে মুখ খোলেননি ।
গতকাল শেষ হয় শেষ দফার ভোটগ্রহণ পর্ব । এর পর বিভিন্ন এজেন্সির বুথ ফেরত্ সমীক্ষার রিপোর্টে ফের মোদী ঝড়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয় । ৩০০-র বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে পারে এনডিএ । কংগ্রেস ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলের প্রাপ্ত আসনের সরকার গড়া যে কঠিন সে আভাসও দেওয়া হয়েছে । যদিও বুথ ফেরত সমীক্ষায় ভরসা রাখছেন না বিরোধীরা । তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ‘গসিপ’ বলে কটাক্ষ করেন । সমীক্ষার রিপোর্ট ভিত্তিহীন বলে দাবি কংগ্রেসের । বিরোধীদের সাফাই, ২৩ মেই প্রমাণ হয়ে যাবে দেশের ক্ষমতা কার হাতে ।
বিরোধীদের এক জোট করে নির্বাচনে লড়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিগ্রেডে সব বিরোধী দলকে এক মঞ্চে দাঁড় করিয়ে মহাজোটের বার্তা দিয়েছেন তিনি । পরবর্তীকালে আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীদের মধ্যে বনিবনা তৈরি হয় । কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা কংগ্রেসের পাশাপাশি তৃণমূলও দিয়েছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে । উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি, মায়াবতী ও অখিলেশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চন্দ্রবাবু । ২৩ মের আগে আরও কয়েক দফা আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে ।
এদিন বিকেল ৫টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন চন্দ্রবাবু নাইডু । এরপর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন । সেখানেই এদিন সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন চন্দ্রবাবু নাইডু । সূত্রের খবর, নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে । বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে কোন পথে এগনো হবে, সেই স্ট্রাটেজি নিয়েও কথা হয়।
এর আগে তৃণমূলনেত্রী মমতার ব্রিগেড সভায় একমঞ্চেই দেখা গিয়েছে চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী থেকে শুরু করে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে, সমাজবাদী পার্টি নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের মতো দেশের হেভিওয়েট নেতাদের । নির্বাচনী পর্ব চলাকালীনও দফায় দফায় দেশের একাধিক নেতা নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন চন্দ্রবাবু নাইডু । তাঁকে সূত্রধরের ভূমিকায় রেখেই মহাজোটের কাণ্ডারীদের একসুতোয় বাঁধতে উদ্যোগী হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী । চন্দ্রবাবুও গত কয়েক দিনে দেখা করেছেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার থেকে শুরু করে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে । দিল্লিতে গিয়ে কথা বলেছেন রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও । লখনউতে গিয়ে দেখা করেছেন মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের সঙ্গে । এনডিএ সরকারকে ঠেকাতে এবং মহাজোটের স্বার্থে তিনি যে তাঁর ‘রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী’ তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী সে বার্তাও দিয়েছেন । এবার তিনি বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ।