রাজ্যে মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরাও নির্যাতিত, স্বীকারোক্তি মহিলা কমিশনের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ এপ্রিল৷৷ রাজ্যে শুধু মহিলারা নন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন পুরুষরাও৷ এ-কথা অকপটে স্বীকার করলেন ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়াপার্সন বর্ণালী গোস্বামী৷ তাঁর কথায়, অনেক ক্ষেত্রেই মহিলারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পুরুষদের নির্যাতন করছেন৷ তা তাঁরা করছেন আইনের অপব্যবহার করে৷ ত্রিপুরা মহিলা কমিশন এ-ধরনের মানসিকতা পরিবর্তন হোক, তা চাইছে ৷ কারণ, মহিলাদের নির্যাতন বন্ধ হোক তা যেমন চাইছে মহিলা কমিশন, তেমনি পুরুষদের নিয়েও কমিশন যথেষ্ট সংবেদনশীল ৷


গার্হ্যস্থ হিংসা সামাজিক ব্যধি ৷ এ-প্রসঙ্গে ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন আজ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, যুগ যুগ ধরে গার্হ্যস্থ হিংসার মতো ঘটনা ঘটছে৷ ত্রিপুরায়ও অনেক মহিলা গার্হ্যস্থ হিংসা শিকার হচ্ছেন ৷ কিন্তু, এত বড় সমস্যা অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান সম্ভব নয় ৷ তাঁর কথায়, নারীঘটিত অপরাধ নিয়ে এখন মহিলা কমিশন প্রতিনিয়ত কর্মশালার আয়োজন করছে ৷ তাঁর মতে, মানুষ সচেতন না হলে নারীঘটিত অপরাধ দমন কোনওভাবেই সম্ভব নয় ৷ সাথে যোগ করেন, সচেতনতার পাশাপাশি মানসিকতার পরিবর্তনও খুব জরুরি ৷


তিনি বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে ত্রিপুরা মহিলা কমিশন রাজ্যে কাজ শুরু করেছে ৷ নারীঘটিত অপরাধের বহু অভিযোগ কমিশনে প্রতিনিয়ত জমা পড়ছে ৷ তাঁর দাবি, মহিলা কমিশন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেকটি অভিযোগের নিষ্পত্তিতে কাজ করে চলেছে ৷ তবে, অপরাধ শূন্যের কোঠায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ৷ তিনি জানান, সম্প্রতি সারা ত্রিপুরায় ৪৮টি শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে ৷ ওই শিবিরগুলিতে নারীঘটিত অপরাধ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে ৷


প্রসঙ্গক্রমে গার্হ্যস্থ হিংসার শিকার পুরুষরাও হচ্ছেন এই বিষয়টি ওঠে আসে ৷ শুধু ত্রিপুরায় নয়, সারা দেশেই এখন পুরুষরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ৷ মহিলাদের দ্বারা আজ পুরুষরা নানাভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন ৷ শুধু তাই নয়, মহিলারা অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ফেলছেন ৷ এ-সমস্ত বিষয় অকপটে স্বীকার করেছেন ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বর্ণালী গোস্বামী ৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় অন্তত ২০ শতাংশ ঘটনায় পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার প্রমাণ মিলেছে ৷ সাথে যোগ করেন, অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়েছে ৷


তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ভারতীয় সংবিধান মহিলাদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই একাংশ মহিলা এই ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন ৷ তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে, মহিলারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুরুষদের ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন ৷ গার্হ্যস্থ হিংসার মিথ্যা মামলায় আজকাল থানায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, মিথ্যা অভিযোগে কোনও মহিলা তাঁর স্বামী এবং শ্বশুড়বাড়ির সদস্যদের ফাঁসিয়ে দিয়েছেন৷


বর্ণালী গোস্বামীর মতে, মহিলাদের আইনের অপব্যবহার করা কোনওভাবেই উচিত নয় ৷ তাঁর কথায়, এ-ধরনের মানসিকতা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী ৷ তাই এখন বিভিন্ন শিবিরে মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরও অংশ নেওয়ার জন্য কমিশন অনুরোধ জানায় ৷ কারণ, মহিলা-পুরুষ উভয়েরই সচেতনতা শিবিরে অংশ নেওয়া জরুরি বলে মনে করে কমিশন ৷


এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় সম্পর্কে আবারও সকলকে মনে করিয়েছে ত্রিপুরা মহিলা কমিশন৷ ধর্ষণ কিংবা শ্লীলতাহানির শিকার নির্যাতিতাদের নাম কোনওভাবেই প্রকাশ করা যাবে না, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন বর্ণালী গোস্বামী ৷ তিনি বলেন, নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ পেলে সামাজিকভাবে ওই নারী কোণঠাসা হয়ে পড়েন ৷ তাই কোনও নির্যাতিতার নাম প্রকাশ না করার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *