আগরতলা, ১ মে (হি.স.) : বিকল্পের সন্ধানে আজ সারা দেশে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে সিপিএম৷ তবুও, লড়াইয়ের ডাক দিয়ে কারোর উপরই আস্থা রাখছেন না কমিউনিস্টরা৷ তাই, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ত্রিপুরায় আয়োজিত সমাবেশে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের সাফ কথা, কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন হোক বা না হোক, প্রত্যাশা পূরণ হবে এমন আশা রাখলে ভুল হবে৷ তার বদলে, আগামী দিনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন লড়াইয়ের আহ্বান করা উচিত৷ অবশ্য, বিরোধিতার প্রশ্নে বিজেপি এবং কংগ্রেসের সাথে সমদূরত্ব বজায় রাখলেও, অবস্থানগত দিক দিয়ে কংগ্রেসের প্রতি অনেকটাই সুর নরম রেখেছেন মানিক সরকার৷ তাতে স্পষ্ট, নির্বাচনী লড়াই হোক, কিংবা দাবি আদায়ে আন্দোলন, সিপিএম-এর বিরোধিতা শুধু বিজেপি-র সঙ্গেই৷
বুধবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ত্রিপুরায়ও উদযাপন করেছে সিপিএম৷ সারা রাজ্যে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই দিনটি পালন করেছে পার্টি৷ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় এই দিবস উদযাপনের কেন্দ্রীয় সমাবেশ সংগঠিত হয়েছে৷ সমাবেশে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের লড়াই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন৷ সাথে তিনি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করতেও ভুলেননি৷ অবশ্য তিনি মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রবল৷
মানিক সরকারের কথায়, লোকসভা নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যাঁরা অংশ নিয়েছেন তাতে ভোট প্রবণতা থেকে মনে হয়েছে, কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন হওয়া প্রায় নিশ্চিত৷ তবে, সরকার পরিবর্তন হলেও মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে, এমনটা আশা করলে ভুল হবে, দাবি করেন তিনি৷ তাঁর মতে, আগামী দিনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন লড়াইয়ের আহ্বান করা উচিত৷ কারণ, মানুষের অধিকার রক্ষায় অন্য কোনও পথ খোলা রয়েছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে না৷
এদিন তিনি নির্দিষ্ট কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলন জারি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন৷ চাকরি, উৎপাদিত ফসলের সঠিক দাম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মহিলাদের সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে লড়াই আন্দোলন আরও বেগবান করার প্রতি জোর দিয়েছেন তিনি৷ তবে, কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন না হলেও এই দাবি নিয়ে সরলে হবে না, তা-ও সাফ জানিয়েছেন তিনি৷
আজ ভাষণে মানিক সরকার বিজেপিকে কড়া ভাষায় নিশানা করেছেন৷ তাঁর অভিযোগ, দেশে আজ গণতন্ত্র আক্রান্ত৷ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ শুরু হয়েছে৷ শুধু তা-ই নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করার প্রয়াস চলছে৷ প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ১১ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে লোকসভা নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করেছে শাসকদল বিজেপি৷ ঠিক একইভাবে, প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে কেন্দ্রেও ক্ষমতায় টিঁকে থাকতে চাইছে বিজেপি৷ তিনি জোর গলায় বলেন, মানুষের উপর আস্থা নেই, তাই ত্রিপুরায় বাঁকা পথে ভোটে জেতার কৌশল নিয়েছে শাসকদল৷ তাতে নির্বাচন কমিশনও মদত দিচ্ছে বলে তিনি সরাসরি অভিযোগ না করলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তাঁর অভিযোগ, পশ্চিম আসনে নির্বাচনের ২০ দিন সমাপ্ত হয়েছে৷ অথচ ভোট কারচুপির বহু অভিযোগ জানানো এবং প্রমাণ পাওয়া সত্বেও নির্বাচন কমিশন পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা দিচ্ছে না৷
মানিক সরকার কটাক্ষের সুরে বলেন, ঘুরপথে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব নয়৷ মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন৷ তাই, লড়াই করেই জয়ী হতে হবে৷ আজ তিনি বিজেপিকে নিশানা করলেও কংগ্রেস সম্পর্কে অনেকটাই সুর নরম রেখেছেন৷ তাঁর কথায়, নীতির প্রশ্নে কংগ্রেসের সাথে অবস্থানগত ফারাক রয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে কংগ্রেসও কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তনের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়েছে৷ তাই, লক্ষ্যে পৌঁছনো পর্যন্ত একইভাবে লড়াই জারি রাখবে সিপিএমও৷ এদিন তিনি মুখ ফসকে বলেও ফেলেছেন, ত্রিপুরায়ও সরকার পরিবর্তন হবে, তার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও এই স্বপ্নে বিভোর থাকা চলবে না৷ তা-হলে, মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি ঘটবে৷