ঢাকা, ৩০ এপ্রিল (হি. স.) : বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানে হামলার দায় স্বীকার করল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএস-এর দাবি, সোমবার রাতে তাদের যোদ্ধারাই এ হামলা চালিয়েছে। জঙ্গি সংগঠন পর্যবেক্ষণকারী ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’, নামে ওয়েবসাইটে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আইএসের গতিবিধি বিশ্লেষক রিটা কাটজ মঙ্গলবার ভোরে এক টুইট বার্তায়ও এমনটি জানিয়েছেন। রিটা কাটজ তার টুইট বার্তায় লেখেন, বাংলাদেশে হামলা চালানোর দাবি করেছে আইএস। আইএস-এর বক্তব্য দাবি করে এর একটি স্ক্রিনশটও রিটা কাটজ টুইটারে দিয়েছেন। এছাড়া জাপান টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, প্রায় দুই বছর পর আইএস বাংলাদেশে আবার হামলা চালানোর দাবি করেছে। আইএসের দাবি, তারা বাংলাদেশে একদল পুলিশের ওপর ‘বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ’ ঘটিয়ে হামলা চালিয়েছে। হামলায় তিন জন পুলিশ আহত হয়েছে বলে আইএস-এর দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে সংঘটিত কোনও হামলায় আইএস- এর দায় স্বীকারের খবর পাওয়া গেল।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় গতকাল রাত আটটার দিকে ককটেল (বোমা) হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। বঙ্গবন্ধু শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই এলাকায় দুই মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটা রহস্যজনক। এ ছাড়া ঘটনার সময় ওই এলাকার আহাদ পুলিশ বক্স লক্ষ্য করেও বোমা হামলা চালানো হয়। পুলিশের ওপর যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেখান থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত আওয়ামি লিগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আহতরা হলেন, ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ লিটন এবং কমিউনিটি পুলিশ মোহাম্মদ আশিক। তাদেরকে প্রথমে রাজারবাগ পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রাজধানীর গুলিস্তানে পুলিশের ওপর বিস্ফোরণ ঘটানো ককটেলটি মোটেই সাধারণ ছিল না, এটি বেশ শক্তিশালী ছিল। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) বজলুর রহমান বলেছেন, তারা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্বে ছিলেন। হঠাৎ দূর থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল হামলা চালানো হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে নজরুলের মাথায়, লিটন ও আশিকের পিঠে আঘাত রয়েছে। নজরুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার পরপরই থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) এবং সিআইডির টিম সেখানে ছুটে যান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘেরাও করে রেখেছে। বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকেও ডাকা হয়। তারা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলের আশপাশের ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে অপরাধীদের ছবি শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।মালয়েশীয় সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে সাইট ইন্টেলিজেন্সের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর দাবি, ঢাকায় তারা একদল পুলিশ সদস্যের ওপর বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
দুই বছরেরও বেশি সময় আগে গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন তৈরি করা ওই হামলায় ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপান, ৩ জন বাংলাদেশ এবং ১ জন ভারতের নাগরিক। এছাড়া জঙ্গিদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্যও নিহত হন। সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে পাঁচ হামলাকারীও নিহত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়, যাকে পরে ওই রেস্তোরার কর্মচারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।