ঢাকা, ২৮ এপ্রিল (হি. স.) : বাংলাদেশে সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতীতের মত দুই ভয়াবহ অস্ত্র ভারত-বিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহৃত না হলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতন, মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর, জায়গা-জমি দখল, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা, দেশ ছাড়ার হুমকি, অপহরণ ও ধর্মান্তরিত করার ঘটনা কমেনি। ঘটছে হত্যাকান্ডের ঘটনাও। নির্বাচনের পরের তিন মাস অর্থাৎ জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চের পরিসংখ্যান বলছে, এই তিন মাসে ১৮৩টি ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারিতে ৬৪, ফেব্রুয়ারিতে ৫৫ ও মার্চে ৬৪টি ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা বলেছেন, অবস্থা সত্যিই উদ্বেগজনক। কেন হঠাৎ করে এই হিংসা বাড়ছে তা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চট্টোপাধ্যায় হিন্দুস্থান সমাচারকে বলেছেন, \”লক্ষ্য করা যাচ্ছে, হিন্দু কিশোরী-যুবতীদের অপহরণ করে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এর মধ্যে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ জানিয়ে জামালপুর ও মুন্সীগঞ্জে দুই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। চুয়াডাঙ্গা ও চাঁদপুরে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ঘটেছে। ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা।\” কোন কোন ঘটনা বেশি ঘটছে জানতে চাওয়া হলে পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা-জমি দখল, মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বাড়ছে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, \”হঠাৎ করে সাম্প্রদায়িক হামলা-নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও উদ্দেশ্য আছে। কোনও ষড়যন্ত্র কাজ করছে। খবর পাচ্ছি, হিন্দুদের দেশত্যাগ করতেও বলা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।\” হিন্দু মহাজোট ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অ্যাড. গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ব্যাপকভাবে বাড়ছে।
সেল্প হেল্প এসোসিয়েশন ফর রুরাল পিপল থ্রু এডুকেশন এন্ড এন্টারপ্রিনিওরশিপ (শারি) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তিন মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তিনমাসে ১৬ জন নিহত হয়েছেন, জায়গা-জমি ও বাড়িভিটা দখলের ঘটনা ঘটেছে ১৪৯টি, হামলা হয়েছে ১৩৫ জনের ওপর, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯টি। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৪টি। পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দ ও ‘শারি’র কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি এপ্রিল মাসে আকস্মিকভাবে হামলার ঘটনা বেড়েছে। নেতৃবৃন্দ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, \”প্রত্যেক নির্বাচনে ভারত বিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িকতা প্রচারণায় ব্যবহৃত হয়। আমরা নির্বাচনে শঙ্কা নিয়ে থাকি। এবার এই দুই অস্ত্র ব্যবহার দেখা যায়নি, আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলা ও নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে জায়গা-জমি দখল ও মহিলাদের ওপর নির্যাতন-হামলা বেড়ে গিয়েছে।\”