নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা, চাপের মুখে, পূর্ব আসনে ভোট পিছিয়ে দিল কমিশন, আসছে আরো বাহিনী, ১৮’র বদলে নির্বাচন ২৩শে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ এপ্রিল৷৷ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা৷ তাই, ত্রিপুরা পূর্ব আসনে ভোট পিছিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ ১৮ এপ্রিলের বদলে ভোট হবে ২৩ এপ্রিল৷ মঙ্গলবার রাতে এই খবর দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক শ্রীরাম তরণিকান্তি৷ তিনি জানান, ভোটারদের মনোবল বাড়ানো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালি করার জন্য কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ নিরাপত্তা ও সুষ্ঠ নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটের দিন পিছিয়ে দেওয়ার ঘটনা রাজ্যের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম৷

মঙ্গলবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা, নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাশা এবং সুশীল চন্দ্র ত্রিপুরা পূর্ব আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক, বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক, ব্যয় সংক্রান্ত পর্যবেক্ষক এবং সাধারণ পর্যবেক্ষকের সাথে নির্বাচনী প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেছেন৷ এই পর্যালোচনা বৈঠকেই ভোটের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে৷

নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক এবং বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক রিপোর্ট দিয়ে বলেছেন, ত্রিপুরা পূর্ব আসনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে নেই৷ ১৮ এপ্রিল ভোট অবাধ ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়৷ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক তাঁর রিপোর্টে নির্বাচনের দিন পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন৷

শুধু তাই নয়, ত্রিপুরা পূর্ব আসনে রিটার্নিং অফিসার রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, ত্রিপুরা পূর্ব আসনে সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রে সমাজদ্রোহীদের গতিবিধিতে ভোট প্রক্রিয়া ব্যহত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, গোয়েন্দা রিপোর্টে পূর্ব আসনে সংসদীয় নির্বাচনী ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে৷

রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিরিখে ত্রিপুরা পূর্ব আসনে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন৷ ১৮ এপ্রিলের বদলে ভোট ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দেয় কমিশন৷ ফলে, দ্বিতীয় দফার বদলে তৃতীয় দফায় ত্রিপুরা পূর্ব আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে৷

লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ ক্রমাগত তুলছেন৷ নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে একাধিকবার দরবার করেছেন৷ গত ১১ এপ্রিল ত্রিপুরা পশ্চিম আসনে ভোটে ব্যাপক রিগিংয়ের অভিযোগ এনেছে সিপিএম ও কংগ্রেস৷ সিপিএম ৪৬০ টি বুথে এবং কংগ্রেস ১৫১টি বুথে রিগিং হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে৷ সম্প্রতি ত্রিপুুরা পশ্চিম আসনে কংগ্রেস প্রার্থী সুবল ভৌমিক নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন৷ ভোট রিগিং সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণ কমিশনের হাতে তুলে দিয়েছেন৷

এদিকে, বক্সনগরে একটি বুথে ১১ এপ্রিল পশ্চিম আসনে নির্বাচনে রিগিং এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে৷ প্রিসাইডিং অফিসারের সুপারিশে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শ্রীরাম তরুণীকান্তি ওই বুথে পুনঃ ভোটের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে৷ মুখ্য নির্বাচন আধিকারীক আজ জানিয়েছেন, পশ্চিম আসনে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশন সন্তুষ্ট নয়৷ ভোট প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়নি৷ তিনি জানান, ৮০০ বুথে ওয়েব কাস্টিং ও ভিডিওগ্রাফি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে৷ কংগ্রেস এবং সিপিএম’র পক্ষ থেকে অভিযোগ মিলেছে৷ তাঁর কথায় মনে হচ্ছে, পশ্চিম আসনে আরও বুথে পুুনঃ ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ মুখ্য নির্বাচন আধিকারীকের বক্তব্য, ওয়েব কাস্টিং এবং ভিডিওগ্রাফির ফুটেজ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷

এদিন তিনি জানান, পূর্ব আসনে ভোট প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জনিত বিষয় প্রধান বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে৷ তাঁর কথায়, ভোটারদের মনোবল আরও বাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে৷ ফলে, রাজ্যে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হবে৷ তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী চাওয়া হয়েছে৷ ভোটারদের মনোবল বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন রয়েছে৷ তাঁর কথায়, এটাই হচ্ছে ভোট পিছিয়ে দেওয়া অন্যতম কারণ৷ ২৩ এপ্রিল নির্বাচন হলে এই ৫ দিনে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে৷

এদিকে, ভোট পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা সাথে সাথেই সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন পিসিসি সভাপতি প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মণ৷ তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পশ্চিম আসনে ভোটে প্রহসন হয়েছে, তাতে আজ শিলমোহর পড়েছে৷ ভোটে নিরাপত্তার অভাব কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে জানাচ্ছে৷ পশ্চিম আসনে ভোটে ব্যাপক রিগিং হয়েছে সেই অভিযোগও নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে৷ পশ্চিম আসনে ভোটের পরিস্থিতি দেখে পূর্ব আসনেও একই অবস্থা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল৷ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে সেই আশঙ্কাকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর কথায়, ভোটে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী বাড়ানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সম্মত হয়েছে৷

এদিকে, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশেষে নির্বাচন কমিশন মেনে নিয়েছে৷ তিনি বলেন, গোঁড়া থেকেই ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবেনা বলে সিপিএম’র পক্ষ থেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছিল৷ গত ১১ এপ্রিল পশ্চিম আসনে ভোট প্রহসনে পরিণত হয়েছে নির্বাচন কমিশনে এই অভিযোগও জানিয়েছে বামফ্রন্ট৷ শুধু তাই নয়, বিভিন্ন বুথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাঁটতির বিষয়টি নিয়েও কমিশনে সোচ্চার হয়েছিল বামেরা৷ অবশেষে নির্বাচন কমিশন বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগকে মান্যতা দিয়েছে৷ কংগ্রেস ও সিপিএম কমিশনের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে৷

অন্যদিকে, পূর্ব ত্রিপুরা উপজাতি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন ১৮ এপ্রিলের পরিবর্তে ২৩ এপ্রিল করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি৷ মধ্যরাতে বিজেপির রাজ্য কার্য্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির মুখপাত্র ডঃ অশোক সিনহা, নবেন্দু ভট্টাচার্য্য এবং রতন লাল নাথ সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বিরোধীরা৷ ভয় ভীতি প্রদর্শন সহ নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা৷ এসব বিষয় কমিশনের নজরে এসেছে৷ এরই প্ররিপ্রেক্ষিতে পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে নির্বাচন করার লক্ষ্যেই ভোট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *