কলকাতা, ৭ এপ্রিল (হি.স): সারদা-নারদা নিয়ে রবিবার এক সময়ের তাঁর ছায়া সঙ্গী মুকুল রায়কে বিঁধলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রবিবার কোচবিহারে জনসভা করে চিটফান্ড ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । তার এক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ওই ইস্যুতে পাল্টা আক্রমণ মমতা করেন মুখ্যমন্ত্রী । আর এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুকুল রায়কে সঙ্গী করা নিয়েই আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘সারদা, নারদা নিয়ে বড় বড় কথা বলেছেন, কিন্তু যে লোকটা আপনার পাশে দাঁড়িয়ে মিটিং পরিচালনা করছে সে তো সারদা, নারদা দুই কেলেঙ্কারিতেই অভিযুক্ত’। এদিন উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ময়নাগুড়িতে প্রচার করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় । চা বাগান খুলে দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের চেষ্টার পাশাপাশি নির্বাচনের মরসুমে নরেন্দ্র মোদীর পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে আসা নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি ।

এদিন কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোটা দেশ মা সারদাকে পুজো করে, বাংলায় সেই সারদাকে কেলেঙ্কারির নাম দিয়েছেন দিদি। গোটা দেশ ‘রোজ’ বলতে ফুল দেওয়া নেওয়া করে, এ রাজ্যে ‘রোজ’ হলো কেলেঙ্কারির কাঁটা । নারদ বলতে নারদ মুনি ত্রিলোকে পুজিত হন, সেই নারদকে বাংলায় কেলেঙ্কারিতে নামিয়ে এনেছেন দিদি’।
এর জবাবেই এই প্রথমবার মুকুল রায় প্রসঙ্গে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এর আগে মুকুল রায়কে গদ্দার বলেছেন মমতা । কিন্তু চিটফান্ড ইস্যুতে একদা তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ম্যানকে আক্রমণ করেননি তিনি ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই সারদা কাণ্ডের তদন্ত শুরু করে ২০১৪ সালে । ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি মুকুল রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই । মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে তদন্তের কেন্দ্রে ছিল সারদার মিডিয়া সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে তাঁর ভূমিকা, এবং সারদার চেয়ারম্যান সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা । মুকুল রায়ের গাড়ির চালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই । জানা যায়, মুকুল রায়ের গাড়ির চালকের বয়ানে নাকি বলা ছিল কীভাবে সুদীপ্ত সেনকে কলকাতা ছেড়ে পালাতে সাহায্য করেন মুকুল । সেই সময় বরং মুকুল রায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বলেছিলেন, ‘মুকুল চোর, কুনাল চোর, আমি চোর’ ?
মুকুল রায়কে সিবিআই জেরা করার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে মুকুল রায়ের । বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয় সেই সময় থেকেই । এর পরে ফের তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা বিশ্বস্ত সেনাপতি । এত কিছুর পরেও কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও প্রকাশ্যে চিটফান্ড ইস্যুতে প্রকাশ্যে মুকুল রায়ের নাম তোলেননি ।
লোকসভা নির্বাচনের মুখে একের পর এক ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে মুকুল রায়ের । নির্বাচন কমিশনে নালিশ, পুলিশ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠক, পুলিশ কর্তাদের বদলি নিয়ে বিজেপি নয়, মুকুল রায় বনাম তৃণমূল কংগ্রেস সংঘাত চলছে । তারই মধ্যে মুকুল রায়ের নাম উচ্চারণ না করেও মমতা আক্রমণ শানালেন রবিবার । তিনি নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনা যাকে পাশে নিয়ে রাজ্যে মিটিং করছেন তিনি শুধু সারদা নয়, নারদা কেলেঙ্কারিতেও অভিযুক্ত’ ।