কালবৈশাখীর ঝটিতি হামলায় লন্ডভন্ড রাজ্যে বহু এলাকা নিষ্প্রদীপ, আটশ বসত ঘরের ক্ষতি, মৃত্যু ১

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ এপ্রিল৷৷ কালবৈশাখীর ঝড়ে সারা রাজ্যে ৮০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷  তার মধ্যে সম্পূর্ণ ধবংস হয়েছে ১৭২টি বাড়ি৷ এদিকে, কালবৈশাখীর তান্ডবেতিনটি গবাদি পশু ও একজন মহিলার মৃত্যু হয়েছে৷ দুইটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে৷ রাজ্য দূর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর(এসডিআরএফ) জানিয়েছে, ঝড়ের প্রকোপে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে৷ তা সম্পূর্ণ করতে আরো ৩/৪ দিন সময় লাগবে৷

এসডিআরএফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, রবিবারের কালবৈশাখীর তান্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তেলিয়ামুড়া ও গন্ডাছড়া মহকুমা৷ তেলিয়ামুড়ায় ২৮১টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৩৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধবংস হয়েছে এবং ১৪৮টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ গন্ডছড়া মহকুমায় ২৭১টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ তার মধ্যে ৩০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধবংস হয়েছে এবং ২৪১টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷

এছাড়া, করবুক, অমরপুর, কুমারঘাট, খোয়াই, ধর্মনগর, কাঞ্চনপুর, শান্তিরবাজার, বিলোনীয়া, মোহনপুর, সোনামুড়া, বিশালগড় এবং জম্পুইজলাতে বাড়িঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ মোহনপুরে ২টি ত্রাণ শিবির কোলা হয়েছে৷ তাছাড়া, প্রশাসনের তরফে পাঁচটি পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে৷

রবিবার ঝড়ের কবলে পড়ে জিরানীয়া মহকুমার কাটিয়ারানীবাড়ি গ্রামের যমুনা দেববর্মার(৩৭) মৃত্যু হয়েছে৷ এছাড়া উদয়পুরে তিনটি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে৷ ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা৷ রাজ্যের বহু এলাকা এখনো অন্ধকারে ডুবে রয়েছে৷ মোহনপুর সহ বেশ কিছু স্থানে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হতে অন্তত ৭ দিন সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে৷

এসডিআরএফ-এর রিপোর্টে জানা গিয়েছে, সোনামুড়ায় নিদয়ায় একটি সরকারী অফিস ও একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ এদিকে, ধলাই জেলার আমবাসা এবং লংতরাইভ্যালীতে প্রচুর রাবার বাগান নষ্ট হয়েছে৷

রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকায় শিলাবৃষ্টি-সহ তীব্র বেগে ঝড় বয়ে যায়৷ এর জেরে সাধারণ মানুষের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম জেলার অন্তর্গত মোহনপুর, বড়কাঁঠাল এবং আগরতলা পুরনিগমের অন্তর্গত ২ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমানবন্দর সংলগ্ণ লঙ্কামুড়া, নারায়ণপুর এলাকাও৷ ঝড়ে ক্ষতির খোঁজখবর নিতে সোমবার প্রভাবিত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেছেন বড়জলার বিধায়ক ডা. দিলীপ দাসও৷ তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন৷

আগরতলা পুরনিগম এলাকার অন্তর্গত প্রভাবিতদের পরিমাণ নির্ণয় করবেন নিগমের আধিকারিকরা৷ তাছাড়া যে সকল এলাকা ব্লকের অধীনে পড়ছে সেই-সব এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতেসংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিধায়ক দিলীপ দাস৷ তিনি জানান, তাঁরা সার্ভে করে রিপোর্ট জমা দিলে ক্ষতির পরিমাণ অনুসারে পরিবারগুলিকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে৷ ডিএম অফিস থেকে আর্থিক সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিবি৷ বিধায়ক আরও জানান, যাঁদের বাড়িতে পাকা ঘর নেই অথচ কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে পাকা ঘর দেওয়া যায় কিনা এই বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে বলেও জানান বিধায়ক৷

মোহনপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড়ের ফলে ক্ষতি হয়েছে৷ গতকাল রাতেই স্থানীয় বিধায়ক তথা শিক্ষা ও আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন৷ পশ্চিম জেলার বড়কাঁঠাল এলাকায়ও ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ ভেঙে পড়েছে বহু পরিবারের বসতঘর৷ এঁদের বেশিরভাগই জনজাতি অংশের মানুষ৷ ওই এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন ত্রিপুরা সরকারের বন ও জনজাতি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী মেবারকুমার জমাতিয়া৷