লোহিয়ার আদর্শ নিয়ে বিরোধীদের তোপ মোদীর, রাহুলের আয়ের উৎস নিয়ে সরব রবিশঙ্করের

নয়াদিল্লি, ২৩ মার্চ (হি.স.): সংসদের ভিতরে অথবা বাইরে ড. রাম মনোহর লোহিয়া যখনই কথা বলতেন, তখনই ভয়ে কাঁপত কংগ্রেস| ড. লোহিয়া জানতেন, দেশের জন্য কংগ্রেস কতটা বিপজ্জনক| শনিবার, ২৩ মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা বিশিষ্ট চিন্তাবিদ রাম মনোহর লোহিয়ার জন্মবার্ষিকীতে নিজস্ব ব্লগে এমনই মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর আয়ের উৎস এবং বিপুল সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। ৫৫,৩৮,১২৩ টাকা থেকে কি করে আয়ের পরিমাণ রাহুল গান্ধীর ৯ কোটি টাকা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পী্যূষ গোয়েল দাবি করেছেন দেশের প্রত্যেক নাগরিক এখন চৌকিদার।


নিজস্ব ব্লগের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আজ দেশের মহান বিপ্লবীদের সম্মান করার দিন| ভারত মাতার বীর সন্তান-ভগৎ সিং, সুখদেব এবং রাজগুরুকে তাঁদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের জন্য শ্রদ্ধা জানাচ্ছি|’ এরপরই রাম মনোহর লোহিয়াকে জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘জন্মজয়ন্তীতে উজ্জ্বল চিন্তাবিদ, ব্যতিক্রমী বুদ্ধিজীবী, বিপ্লবী এবং ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক, ড. রাম মনোহর লোহিয়াকে প্রণাম| গণ রাজনীতির প্রতি গভীর আস্থা ছিল প্রখর বুদ্ধির অধিকারী ড. লোহিয়ার|
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় যখন শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন একজন যুবক হিসেবে আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য অনড় ছিলেন ড. লোহিয়া| আন্দোলন বজায় রাখার জন্য উনি ভূগর্ভস্থ রেডিও স্টেশন চালু করেছিলেন| গোয়া স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ড. লোহিয়ার নাম স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত রয়েছে| যেখানেই দরিদ্র, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষদের সাহায্যের দরকার ছিল, সেখানেই উপস্থিত ছিলেন ড. লোহিয়া|


ড. লোহিয়ার চিন্তাধারা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে| কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ তথা অন্নদাতাদের ক্ষমতায়নের জন্য অনেক কিছুই করেছিলেন তিনি| ড. লোহিয়ার চিন্তাধারা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিষাণ সম্মান নিধি, কৃষি সিচাই যোজনা, e-Nam, সোয়েল হেল্থ কার্ড-সহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের স্বার্থে কাজ করে চলেছে এনডিএ সরকার|’
ব্লগে প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য এবং জাতি বিভেদ দেখে অত্যন্ত ব্যথিত ছিলেন ড. লোহিয়া| বিগত পাঁচ বছরে আমাদের ট্র্যাক রেকর্ড এটাই জানান দিচ্ছে যে, ড. লোহিয়ার চিন্তাধারাকে সফল করার জন্য ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ আমাদের এই মন্ত্র উল্লেখযোগ্য দীর্ঘস্থায়ী অবদান রেখেছে| আজ উনি যদি থাকতেন, তাহলে এনডিএ সরকারের কাজ দেখে অবশ্যই খুশি হতেন|


সংসদের ভিতরে অথবা বাইরে ড. লোহিয়া যখনই কথা বলতেন, তখনই ভয়ে কাঁপত কংগ্রেস| ড. লোহিয়া জানতেন, দেশের জন্য কংগ্রেস কতটা বিপজ্জনক|’ ১৯৬২ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘কংগ্রেসের শাসনকালে কৃষি, শিল্প অথবা সেনাবাহিনীতে কোনও অগ্রগতি হয়নি| কংগ্রেসের বিরোধিতা করা ড. লোহিয়ার হৃদয়ে এবং আত্মায় ছিল| ড. লোহিয়ার প্রচেষ্টাতেই ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে শক্তিশালী কংগ্রেস বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল| সেই সময় অটলজি বলেছিলেন, ‘ড. লোহিয়ার প্রচেষ্টার কারণেই, কোনও কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে প্রবেশ ছাড়াই হাওড়া-অমৃতসর মেইলে পুরো যাত্রা করা যেতে পারে| দুর্ভাগ্যজনক হল, রাজনীতিতে এখন এমন ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে যা দেখে ড. লোহিয়া বিচলিত ও ব্যথিত হয়ে পড়তেন|’


কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘সেই সমস্ত দল যাঁরা ড. লোহিয়াকে নিজেদের আদর্শ বলেও হাঁফিয়ে যান না, তাঁরাই ড. লোহিয়ার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন| ড. লোহিয়াকে অপমান করার জন্য তাঁরা কোনও সুযোগই হাতছাড়া করছেন না| ড. লোহিয়া সর্বদা বিশ্বাস করতেন যে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক| এখন তাঁর ‘অনুসরণকারীদের’ কাছে প্রথমে পরিবার, তারপর দেশ|’ ব্লগে প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘ড. লোহিয়ার মতে, যে ব্যক্তি ‘সমতা’, ‘সামান্যতা’ এবং ‘সমত্ব ভাব’ দিয়ে কাজ করে সে একজন যোগী। দুঃখের বিষয় হল এই যে, লোহিয়াবাদী বলা দলগুলি এই নীতিটি ভুলে গিয়েছে। তারা ‘ক্ষমতা’, ‘স্বার্থ’ এবং ‘শোষণ’-এ বিশ্বাসী। এই দলগুলি ক্ষমতা দখল করা, যতটা সম্ভব জনসাধারণের ধনসম্পত্তি লুট করা এবং অন্যদের শোষণ করায় অভিজ্ঞ। দরিদ্র, দালিত, পিছিয়ে পড়া ও ওবিসি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি নারীরাও তাদের শাসনের অধীনে নিরাপদ বোধ করে না, কারণ এই সমস্ত দলগুলি অপরাধমূলক ও সমাজবিরোধী কাজকর্মকে প্রশ্রয় দেয়। ড. লোহিয়া জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে সমতার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করা দলগুলির আচরণ এর থেকে ভিন্ন ছিল। এই কারণেই তথাকথিত লোহায়াবাদী দলগুলি এনডিএ সরকারের তিন তালাক প্রথা বন্ধ করার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছিল।’ ব্লগের একেবারে শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘এই সমস্ত দলগুলিকে এই বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে যে, তাঁদের কাছে ড. লোহিয়ার চিন্তাধারা এবং আদর্শ বড় নাকি ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি? আজ ১৩০ কোটি ভারতবাসী এমনই সব প্রশ্নের মুখোমুখি : ড. লোহিয়ার সঙ্গে যাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তাঁরা দেশের সেবা করবে তা কিভাবে আশা করা যায়? আজ তাঁরা ড. রাম মনোহর লোহিয়ার নীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, আগামীকাল তাঁরা ভারতের জনগণের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করবেন|’
এদিন দিল্লিতে দলের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘২০০৪ সালে নিজের নির্বাচনী হলফনামায় রাহুল গান্ধী নিজের আয় দেখেছিলেন ৫৫,৩৮,১২৩ টাকা। ২০০৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়াল দুই কোটিতে। ২০১৪তে ৯ কোটি টাকা আয় দেখিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। এত দ্রুত হারে আয় ও সম্পত্তির পরিমাণ কি করে বাড়ল, তার জবাব দিতে হবে রাহুল গান্ধীকে। সেই অসাধারণ আয়ের উৎস কি? যা দিয়ে যা ৫৫.৩৮ লক্ষ থেকে বেড়ে ৯ কোটি টাকা হয়েছে।
দুর্নীতি নিয়ে গান্ধী পরিবারকে কটাক্ষ করে রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, বঢরা উন্নয়ন মডেল গোটা দেশ দেখেছে। যেখানে ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে তা বিনিয়োগকারী কাছে দুই-তিন বছরের মধ্যে ৭০০-৮০০ কোটি টাকা হয়ে ফিরে আসছে। এখন রাহুলের উন্নয়ন মডেল নিয়ে আলোচনা করছি। যেখানে সাংসদ হিসেবে মাইনের টাকায় এই বিপুল পরিমাণ আয় রাহুলের। তাঁর কোনও স্পষ্ট আয়ের উৎস নেই।
সমস্ত দেশবাসীই এখন চৌকিদার। শনিবার হায়দরাবাদের ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল।
এদিন রেলমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিক এখন চৌকিদার। পড়ুয়া থেকে গৃহবূধ, সমাজে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষ। দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য প্রত্যেকের উচিত নিজের কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকা। দেশের উন্নয়ন এবং সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হয়েছে চৌকিদার হয়েছে। এনডিএ সরকারের আমলে দেশের ১৩০ কোটি মানুষ এখন নিজেদের নিরাপদ মনে করছে।
সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে আগের সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে পীযূষ গোয়েল বলেন, ভারতে জঙ্গি হামলা হলে আগের সরকার নীরব থাকত। কিন্তু এখন জঙ্গিদের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। দেশকে নিরাপদ রাখার জন্য কোনও ছুটি না নিয়ে ৩৬৫ দিন ধরে কাজ করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
উন্নয়ন প্রসঙ্গে কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে পীযুষ গোয়েল বলেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি প্রত্যন্ত গ্রামে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। অন্যদিকে বিজেপি প্রকল্পের অর্থ গ্রামবাসীদের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউণ্টে ঢুকে যাচ্ছে। বিজেপি জিএসটি এনেছে। ৩০ কোটি মানুষের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশ তখনই নিরাপদ বোধ করবে যখন দেশবাসী দেশপ্রেমের প্রতি আস্থাশীল থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *